আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তাঁকে নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে যখন তুমুল বিতর্ক, তখন তিনি সৌদি আরবে। কথা ছিল, সপ্তাহভর সেখানে কাটানোর পরে আজ মুম্বইয়ে ফিরবেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন। কিন্তু সে পথে হাঁটলেন না জাকির নায়েক। সৌদি আরব থেকেই সম্ভবত পাড়ি দিচ্ছেন আফ্রিকায়। জানিয়েছেন, আগে থেকেই কর্মসূচি ঠিক করে রাখা আছে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের চিন্তা, আফ্রিকায় কাজ সেরে আদৌ ভারতে ফিরবেন তো বিতর্কিত এই ধর্ম প্রচারক?
ইসলামের প্রচারের নামে জাকির তরুণদের মগজধোলাই করছেন, আইএসে যোগ দিতে উৎসাহ জোগাচ্ছেন— এমন অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশ গত কাল তাঁর চ্যানেল ‘পিস টিভি’-র সম্প্রচার বন্ধ করেছে। ইন্টারনেটেও যাতে তা দেখা না যায়, আজ থেকে সেই ব্যবস্থা করেছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের নির্দেশে আজ ভারতেও বন্ধ হয়েছে এর সম্প্রচার। এ ব্যাপারে সমস্ত রাজ্যকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু।
দেশে ফিরলে তদন্ত শুরু হবে জাকিরের বিরুদ্ধে। তাঁর আইএস-যোগের অভিযোগ ওঠায় গ্রেফতার করার ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়েছে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, সেই আঁচ পেয়েই সম্ভবত জাকির দেশে ফেরা এড়িয়ে গেলেন।
যদিও সৌদি আরব থেকে জাকির আজ দাবি করেছেন, ‘‘ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আমার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। তদন্তের স্বার্থে আমি গোয়েন্দাদের সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমার বক্তব্যকে বিকৃত ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। পরিস্থিতি যা তাতে এখন সংবাদমাধ্যমই আমার বিচার চালাচ্ছে।’’
জাকির শেষ টুইট করেছেন পরশু। তাতেও লিখেছেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম আমার বিচার চালাচ্ছে। আমাকে সমর্থন করুন, পাশে থাকুন।’’ সেই সমর্থনের ছবিটা আজ দেখা গিয়েছে বুরহান ওয়ানির মৃত্যুতে উত্তাল কাশ্মীরে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ওই তরুণ হিজবুল জঙ্গি নেতার মৃত্যুর জেরে গত শুক্রবার থেকে তুলকালাম চলছে ভূস্বর্গে। নাক গলাচ্ছে পাকিস্তান। তারই মধ্যে ভূস্বর্গে বিক্ষোভকারীরা আজ পথে নামেন জাকিরের সমর্থনেও। উল্টো ছবি দেখা গিয়েছে মহারাষ্ট্রে। সেখানে জায়গায় জায়গায় জাকিরের ছবি পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে শিবসেনা।
জাকির মুখে আইএসের ভাবধারার বিরোধিতা করলেও, হায়দরাবাদ ও মুম্বইয়ের পরে কেরল থেকে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেওয়া যুবকদের সঙ্গেও তাঁর সংস্রব খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি কেরল থেকে জনা কুড়ি যুবক আইএসে যোগ দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ইশা ও ইয়াহিয়া তাদেরই দু’জন। এরা দুই ভাই। তাদের দু’জনের জঙ্গি হওয়ার পিছনে জাকিরের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে তাদের পরিবার। ইশাদের বাবা ভিনসেন্ট দাবি করেছেন, তাঁর ছেলেদের সঙ্গে জাকিরের সরাসরি যোগ ছিল। জাকিরের সংস্পর্শে এসেই তারা খ্রিস্টধর্ম ছেড়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে। আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া যাওয়ার আগে সস্ত্রীক তারা জাকিরের সঙ্গে দেখাও করেছিল। জাকিরের সঙ্গে আলাপ করাতে মুম্বই নিয়ে গিয়েছিল শ্যালকদেরও। যদিও তাঁরা ধর্ম বদলাতে রাজি হননি।
জাকিরের সংস্থা ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কাজকর্মও এখন সন্দেহের ঘেরাটোপে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই সংস্থার একাধিক কর্মীর সঙ্গে সন্ত্রাসের যোগ মিলেছে বা অভিযোগ উঠেছে। তাদের এক জন ফিরোজ দেশমুখ, ঔরঙ্গাবাদ অস্ত্র মামলায় জড়িত। বর্তমানে সে জামিনে মুক্ত। ওই একই মামলায় অভিযুক্ত ফিরোজের সহকর্মী রাহিল দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। তাদের আর এক সহকর্মী আয়াজ সুলতান আফগানিস্তান হয়ে সিরিয়া পালিয়ে যায়। পরে সে আইএসে যোগ দিয়েছে বলেও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। মন্ত্রক জানিয়েছে, গত এক দশকে ওই সংস্থার হয়ে কারা কাজ করেছে, তারা এখন কোথায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও জানিয়েছেন, ‘‘গুলশন কাণ্ডের দুই জঙ্গি জাকিরের বক্তব্য শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই জাকির আমাদের তদন্তের আওতায় রয়েছে। জাকিরের বক্তব্য উস্কানিমূলক কি না, গোয়েন্দারা তা খতিয়ে দেখছেন।’’জাকির নাইককে নিয়ে মন্তব্যের জেরে তৃণমূল সতর্ক করল দলীয় সাংসদ ইদ্রিশ আলিকে।
জাকিরের টিভি চানেলের সম্প্রচার বন্ধ করার প্রসঙ্গে সোমবার ইদ্রিশ বলেন, ‘‘কাউকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মধ্যে দিয়ে তাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তার বদলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ভাবে সকলকে সরব হতে হবে।’’
পরে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, দলের সঙ্গে কথা না বলেই ইদ্রিশ ওই মন্তব্য করেছেন। তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর। ইদ্রিশ জানিয়েছেন, নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁকে ডেকে পাঠালে তিনি নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেবেন। -আনন্দবাজার পত্রিকা
১২ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম