আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান বলেছেন, মারমারায় তার হোটেলে আর ১০-১৫ মিনিট অবস্থান করলেই মেরে ফেলতো কিংবা গ্রেফতার করা হতো।
সেনা অভ্যুত্থান-পরবর্তী সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
অভ্যুত্থানের শুরুতেই তাকে হত্যা করার জন্য তিনটি হেলিকপ্টারে করে প্রায় ৪০ জন বিদ্রোহী সেনা তার কাছে ছুটে গিয়েছিল।
অভ্যুত্থানকারী নেতারা এসব সেনাকে নির্দেশ দিয়েছিল, এরদোগানকে হত্যা বা বন্দি করতে হবে। তাকে আটকাতে পারলে অভ্যুত্থান সফল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
কিন্তু এরদোগান টের পেয়ে সাথে সাথে হোটেল থেকে বের হয়ে ইস্তাম্বুল রওনা হয়ে যান। তিনি জনগণকে রাজপথে নেমে অভ্যুত্থান প্রতিরোধ করতে আহবান জানান। তার আহবানে জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। ফলে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যায়।
গত শুক্রবারের সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর তা বিভিন্নভাবে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়ার পেছনে বড় করে দেখা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সাহসী ভূমিকা।
কিন্তু এসবের আগে ছিল একটি ফোনকল। এক জেনারেল প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ঠিক সময়ে সতর্ক করে না দিলে হয়তো এগুলোর কিছুই হতো না। খুব সম্ভবত অভ্যুত্থানকারীরা জয়ী হতো। এ কাজটি করেছিলেন জেনারেল উমিত দান্দার।
বিদ্রোহীরা কিন্তু বেশ আঁটঘাট বেঁধেই নেমেছিল। ওই রাতেই তারা এরদোগানের অবস্থান নিশ্চিত হতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। এমনকি অভ্যুত্থানের নাটের গুরু বলে যাকে বলা হচ্ছে সেই জেনারেল একিন ওজতুর্ক অভ্যুত্থানের আগে এরদোগানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন।
এর মাধ্যমে তিনি এরদোগান যে মারমারায় অবস্থান করছেন তা নিশ্চিত হন। তাতেই তিনি সেখানে তাকে হত্যা কিংবা বন্দি করতে বাহিনী পাঠিয়েছিলেন।
তুর্কি পত্রিকা হুরিয়াতের খবরে বলা হয়, ফার্স্ট আর্মির কমান্ডার উমিত দান্দার শুক্রবার দিবাগত রাতে (অভ্যুত্থানের এক ঘণ্টা আগে) এরদোগানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার বিষয়টি জানাতে পেরেছিলেন।
এ খবর পেয়েই এরদোগান হোটেল ত্যাগ করেছিলেন। বিদ্রোহী সেনারা যখন সেখানে পৌঁছে, তার আগেই তিনি সরে পড়েছিলেন।
অভ্যুত্থানের সময় বিদ্রোহীরা সেনাপ্রধানকে আটক করেছিল। পরে এরদোগান এই জেনারেল দান্দারকে ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান নিয়োগ করেছিলেন।
অভ্যুত্থানের আগে এরদোগানকে দান্দার বলেছিলেন, ‘আপনিই আমাদের বৈধ প্রেসিডেন্ট। আমি আপনার পক্ষে আছি। এটা একটা মারাত্মক ক্যু। আঙ্কারার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ইস্তাম্বুলে আসুন। আমি সেখানকার সড়ক এবং অন্যান্য ব্যবস্থা ঠিক করে রাখব।'
হুরিয়াত জানায়, প্রেসিডেন্ট হোটেল ত্যাগ করার আধা ঘণ্টা পর ৪০ জন বিদ্রোহী ঝড়ের বেগে সেখানে প্রবেশ করে। কিন্তু ততক্ষণে এরদোগান ইস্তাম্বুল রওনা হয়ে যান।
হোটেলে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষীদলের সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়। এতে বিদ্রোহীরা পরাজিত হয়। তাদের একটি হেলিকপ্টারও বিধ্বস্ত হয়। তারা তখন পার্বত্য এলাকায় পালিয়ে যায়।
১৯ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম