বিনোদন ডেস্ক : ব্যবসার অঙ্কে অন্য আঞ্চলিক ছবির চেয়ে বাংলা ছবি পিছিয়ে। কিন্তু বাংলার জোরের জায়গা ‘কনটেন্ট’। অন্তত টলিউডের পরিচালকেরা এটাই বলে থাকেন। তাহলে এত বছর ধরে ভারত থেকে সেরা বিদেশি ছবির বিভাগে অস্কার এন্ট্রিতে কোনও বাংলা ছবি নেই কেন?
এ বছর তামিল ছবি ‘ভিসারানাই’ অস্কারে যাচ্ছে। পরিচালক ভেত্রিমারণ। সারা দেশ জুড়ে অসংখ্য ছবি জমা পড়ে। বাংলা ছবিও। সেখান থেকে ২৯টি ছবির মধ্যে লড়াই চলতে থাকে। এবারের বিচারক কমিটির প্রধান ছিলেন কেতন মেটা।
বলিউডের জনপ্রিয়তা অনেক সময়ই ভাল আঞ্চলিক ছবিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অস্কারে বিদেশি ছবির মনোনয়নে আঞ্চলিক ছবিই প্রধান্য পাচ্ছে। গত বছর ছিল মরাঠি ছবি ‘কোর্ট’। কেতন মেটা’র মতে, বিষয়বস্তুকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ছবিতে ভারতীয়তাও যেমন থাকবে, তেমনই আন্তর্জাতিক আবেদন থাকতে হবে।
এবারের লড়াইয়ে বাংলা থেকে ‘শঙ্খচিল’ সামান্য আশার আলো জাগিয়েছিল। গৌতম ঘোষের ছবির আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিতি রয়েছে। পাশাপাশি দেশভাগ এখন সারা পৃথিবীতেই জ্বলন্ত সমস্যা। কিন্তু ১৩জন জুরি সদস্যের সকলেই শেষমেশ ‘ভিসারানাই’তে হাত তোলেন।
বাংলা ছবির কনটেন্ট নিয়ে শোরগোল চলে। জাতীয় পুরস্কারেও বাংলার দাপট দেখা যায়। তাহলে ভারত থেকে অস্কার মনোনয়নে এত বছরে কোনও বাংলা ছবি মনোনয়ন পায়নি কেন? ব্যতিক্রম সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’, ‘মহানগর’। তারপর আর কোনও বাংলা ছবি সেই মর্যাদা পায়নি। তাহলে কি টলিউড নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে চলেছে?
বাংলা থেকে জুরি বোর্ডে ছিলেন পরিচালক সুদেষ্ণা রায়। তাঁর মতে, ‘‘বাংলা সিনেমা বিষয় হিসেবে যথেষ্টই ভাল। সারা দেশ থেকে ছবি আসে। অন্য কোনও ছবি সুযোগ পেয়েছে মানে বাংলা ছবি খারাপ সে রকম ভাবার কারণ নেই।’’
কেতন মেটা
(পরিচালক, ফিল্ম ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার জুরি প্রধান)
বাংলা বা হিন্দি বা অন্য কোনও ভাষা নিয়ে আলাদা করে জেনারালাইজ করতে চাই না। বিভাগটাকে বলা হয় অস্কারে বিদেশি ভাষার ছবি। যেখানে ভারতের মতো দেশের ক্ষেত্রে প্রতিটা ছবি নিয়েই মতানৈক্য থাকতে পারে। এখানে এতগুলো ভাষা! প্রতিটা ভাষার ফিল্মের আলাদা ইন্ডাস্ট্রি। এ যদি ডেনমার্কের মতো একটা ছোট্ট দেশের গল্প হতো, তাহলে ভাগাভাগির প্রশ্নই থাকত না। ‘ভিসারানাই’এর ক্ষেত্রে জুরিবোর্ডের কারওরই দ্বিমত ছিল না। কনসেপ্ট-স্ক্রিপ্ট, ট্রিটমেন্ট, টেকনিক— সবদিক থেকেই সফল মনে হয়েছে ছবিটাকে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় অনেক ছবিই এমন ছিল, যেগুলো ভারতের অফিশিয়াল এন্ট্রি হতেই পারত।
ট্রিটমেন্ট, সাবজেক্ট এবং টেকনিক্যাল— তিনটে বিভাগে পর্যালোচনা করে মনোনয়ন করা হয়। ‘ভিসারানাই’ এই তিনটি বিভাগেই জুরির সমর্থন পেয়েছে। সুদেষ্ণার কথায়, ‘‘তামিল ভাষায় ভিসারানাইয়ের মানে ইন্টেরোগেশন। একেবারে ‘র’ ছবি। শেষ হয়ে যাওয়ার পর সব জুরি সদস্য খানিকক্ষণ চুপ হয়ে গিয়েছিলেন। সকলের মতে অস্কারের জন্য একেবারে যথাযথ মনোনয়ন হয়েছে।’’
সুদেষ্ণা ছাড়া বাংলা থেকে জুরি সদস্য ছিলেন শ্রীলেখা মিত্র এবং অর্ঘ্যকমল মিত্র। শ্রীলেখার বক্তব্য, ‘‘কারও উপর ়প্রেশারও ছিল না, যে বাংলার ছবি বা দক্ষিণের ছবিকে পুশ করতেই হবে! ‘ভিসারানাই’এর ক্ষেত্রে সকলেই একমত ছিলাম। ‘শঙ্খচিল’ও সকলের ভাল লেগেছিল। কারণ ছবিটা প্রাসঙ্গিক। ‘সিনেমাওয়ালা’র ক্ষেত্রে অবশ্য দ্বিমত ছিল। কিন্তু ‘ভিসারানাই’ কেন পাঠানো হল, ছবিটা দেখলেই বুঝতে পারবেন। এতটাই ইমপ্যাক্টফুল! সত্যজিৎ রায়ের পর কেন বাংলা ছবি জায়গা পেল না, সেটা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। কিন্তু বিষয়টা তো কেবল বাংলা বা মরাঠি বা গুজরাতি ছবি নিয়ে নয়। ভারতীয় ছবি নিয়ে। এতগুলো ভাষা। ফলে সত্যজিৎ বড়, না গৌতম ঘোষ— এভাবে বিষয়টা দেখার মানে হয় না।’’
সৃজিত মুখোপাধ্যায় ‘চতুষ্কোণ’এর জন্য সেরা পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর মতে, ‘‘জুরিদের উপর নির্ভর করে কোন ছবি অস্কারের জন্য পাঠানো হবে। কীসের ভিত্তিতে বিচার হয় বা কেন বাংলা ছবি জায়গা পায় না, সে ব্যাপারে আমার কোনও ধারণা নেই।’’
তবে বাংলা ছবির গুণমান নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই সৃজিতের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘জাতীয় পুরস্কারে বাংলা ছবির আধিপত্য দেখা যায়। সারা বিশ্বে অসংখ্য ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বাংলা ছবি সমাদৃত। আমাদের বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও অবকাশই নেই।’’
‘ভিসারানাই’এর প্রযোজনায় ধনুশ। ছবিটি ক্রাইম-থ্রিলার। ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হয়েছিল ভেত্রিমারণের ছবির। জাতীয় পুরস্কারেও তিনটি সম্মান পেয়েছে। -এবেলে।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম