শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭, ০৪:২২:৩০

হিন্দুত্ববাদ নিয়ে যা বললেন কলকাতার নায়ক সোহম

 হিন্দুত্ববাদ নিয়ে যা বললেন কলকাতার নায়ক সোহম

বিনোদন ডেস্ক: সিনেমা এবং রাজনীতি হাত ধরাধরি করে চলছে তাঁর জীবনে। সোহম চক্রবর্তী। সম্প্রতি হাত দিয়েছেন ছবি প্রযোজনাতেও। ‘আমার আপনজন’। ছবি মুক্তি পাচ্ছে আগামী মাসের ২৬ তারিখ। শুরু হয়ে গিয়েছে ছবি প্রচারের কাজ।

প্রযোজনায় হাতেখড়ি হতে চলেছে। এক্সাইটেড?
প্রচণ্ড! ছবিটা নিয়ে চিন্তাও রয়েছে। প্রোডাকশন হাউস চালাতে গেলে কী কী করতে হয় জানতাম না। এখন জানছি। আগে ছবির শ্যুটিং শেষ হওয়ার পর বড়জোর এডিটিং অবধি থাকতাম। এখন ছবি-মুক্তির আগের ধাপগুলো নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি। সব মিলিয়ে
ভালই লাগছে।

ছবির গল্পটা কেমন?
মধ্যবিত্ত পরিবারের এক ছেলের গল্প। নাম জয়দীপ। তার বাবা পোস্টমাস্টার। ছবির শুরুতে দেখা যায়, জয়দীপ তার এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিয়ের কার্ড বিতরণ করছে। সকলকে খুব করে বলছে, ‘আমার বিয়েতে এসো বা আসবেন কিন্তু’! জয়দীপের স্কুল-জীবন থেকে শুরু করে কলেজ-জীবন, যারা যারা ওর জীবনে এসেছে তাদের নিয়েই গল্প।

নিজের প্রযোজনার ছবিতে আপনার অভিনয় করা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই বাঁকা কথা বলছেন।
আমি নিজের প্রযোজনার ছবিতে কাজ করার পক্ষপাতী নই। তবে এক্ষেত্রে একটা ব্যাপার ছিল। জয়দীপের চরিত্রটা আমার সঙ্গে খুব ভালভাবে যায়। সেই কারণেই অভিনয় করা। ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের গল্প নিয়ে ছবি করার ইচ্ছে রয়েছে। আমি প্রযোজক বলে, আমাকেই অভিনয় করতে হবে— এমন কোনও ব্যাপার নেই!

সম্প্রতি ‘এসকে মুভিজ’এর একটা ছবিতে সই করেছেন। কিন্তু দর্শক তো আপনাকে শহরের নামী এক প্রযোজনা সংস্থার ছবিতে দেখতেই অভ্যস্ত। ক্যাম্প বদলের কারণটা কি?
ওই সংস্থার সঙ্গে আমার একটা চুক্তি ছিল। খাতায় কলমে না থাকলেও, আমি ওঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলাম। আমি যে সোহম হতে পেরেছি, সেটা ওঁদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেই। এবং সেটা আমাকে ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছিল রাজ চক্রবর্তী। এক সময় রাজদা’র সঙ্গে পরপর ছবি করেছি। তখন একাধিকবার ‘এসকে...’ এবং অন্যান্য প্রযোজকের অফার এসেছিল। ভেবে দেখেছিলাম, ওঁরা তো আমাকে পরপর ছবিতে কাজ দিচ্ছেন! তাই সেই সময় অন্য প্রযোজকের ছবিতে কাজ করার সময়ও পেতাম না। এখন দেখছি ওঁরা অনেক অভিনেতার সঙ্গে কাজ করছেন। তাই আমিও বেরিয়ে এসে কাজ শুরু করলাম।

আপনার বিপরীতে তিনজন নায়িকা। শুভশ্রী, প্রিয়ঙ্কা এবং ঐন্দ্রিতা। এদিকে টলিউডের কোনও লিঙ্কআপের চক্করে আপনি নেই! আমি চিরকালই নেগেটিভ পাবলিসিটির বিরোধী। এতে আখেরে নিজের ইমেজেরই ক্ষতি হয়।

যাঁরা আপনার সঙ্গে কাজ করেছেন, একবাক্যে স্বীকার করেন আপনি বড্ড ডাউন টু আর্থ...।
ইন্ডাস্ট্রিটাকে মাত্র তিন বছর বয়স থেকে দেখছি। যদি বাইরে কোথাও থেকে এসে স্টার হয়ে যেতাম, তাহলে হয়তো স্টারডম ব্যাপারটা আমার মধ্যে আসত। কিন্তু আমি কাকে স্টারডম দেখাব বলুন? ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁদের আশপাশে দেখতে পাই, এই মানুষগুলোর কোলেপিঠেই বড় হয়েছি। স্টার বনে যাওয়ার পর দামি সোফায় বসে গলা ভারী করে ওই মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলতে পারব না! মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। জন্মের সময় মুখে সোনার চামচ ছিল না। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে বড় হয়েছি। সেই কারণেও হয়তো স্টারডম ব্যাপারটা আসে না। আমি যদি ভারী গলায় অ্যাটিটিউড নিয়ে কথা বলি, সামনে হয়তো কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু পিছনে গালগালি করবে। সেটা কেন হতে দেব বলুন?

‘প্রেম আমার’, ‘অমানুষ’এর মতো জোরদার কোনও চরিত্রে আপনাকে আর দেখা যাচ্ছে না কেন?
(মুচকি হেসে) খুব তাড়াতাড়িই ওই রকম চরিত্রে দর্শক আমাকে দেখতে পাবেন। হিরো হয়েছি বলে নায়িকার সঙ্গে নাচলাম, গাইলাম, তা নয়। যে সব চরিত্রে অভিনয়ের জায়গা রয়েছে এমন চরিত্রই বেশি ভাল লাগে। তবে এটাও ঠিক, সবসময় চরিত্র নির্বাচনের বিষয়গুলো আমার কোর্টে ছিল না। ‘প্রেম আমার’ বা ‘অমানুষ’ হয়তো আর করা হবে না। তবে, চেষ্টা করব যাতে ওই লেভেলের কোনও ছবিতে কাজ করতে পারি।

দেব, অঙ্কুশ, হিরণ— নতুন প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অভিনেতা আপনি। কিন্তু সফল হিরোদের তালিকা বানালে আপনার র‌্যাঙ্কিংটা শেষের দিকেই থাকে কেন?
এটা আমি নিজেও জানি না। প্রত্যেকেরই পাবলিসিটি এবং মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি রয়েছে। আমি ও সবের পরোয়া করি না! আমি শুধু নিজের কাজটা ভাল করে করি। কোনওদিনই নিজের মার্কেটিং নিয়ে মাথা ঘামাইনি। অনেকেই তো পার্টি করেন, কিন্তু আমি যাই না। কিছু জায়গা রয়েছে, যেখানে না গেলে হবে না। সেখানে গেলেও আধ ঘণ্টার মধ্যে হাই-হ্যালো করে চলে আসি।

ইন্ডাস্ট্রিতে পীযুষ সাহা সম্পর্কে একটা কথা শোনা যায়। উনি তারকার জন্ম দেন, কিন্তু তারকাদের ধরে রাখতে পারেন না। আপনারও তো শুরুটা ওঁর ছবি দিয়েই।
কী বলব বলুন তো! এটা ওঁরই বোঝা উচিত। অন্যের দিকে আঙুল না তুলে, উনি যদি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলেন, সেটাই ভাল হবে!

সাউথ সিটি কলেজে এসএফআই করতেন। এখন যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি। দল বদলের কারণটা কী?
কলেজ জীবনে কোনওদিনই পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলাম না। মিটিং-মিছিলে যেতাম শুধু। একটা সময় দেখলাম, দলের মতাদর্শের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছি না। তখন দূরে সরে এলাম। ২০০৮ সালের পর যখন অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পেলাম, তখন অরূপ বিশ্বাস আমাকে বিভিন্ন জায়গায় শিল্পী হিসেবে যাওয়ার জন্য বলতেন। নির্বাচনে ক্যাম্পেনও করলাম। এরপর যখন দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সান্নিধ্যে এলাম, তখন ওঁর প্রতি একটা দুর্বলতা জন্মাল। মনে হল, শুধু প্রচার করে লাভ নেই। যদি করতেই হয়, সেটা দলের মধ্যে থেকেই করব। সেই ভাবনা থেকেই তৃণমূলে যোগ দেওয়া।

বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় আপনাকে নাকি জোর করে হারানো হয়েছিল?
আমি যখন গিয়েছিলাম, সেখানে মানুষের স্রোত নেমে এসেছিল। সেই মানুষগুলোই যে ভোটের সময় পাল্টে যাবেন, কী করে বুঝব! আবার, স্থানীয় অনেক নেতারও হয়তো মনে হয়েছিল আমি জিতে গেলে তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না। তাই যা হওয়ার তাই হয়েছে।

হিন্দুত্ববাদ নিয়ে চারদিকে যে উন্মাদনা চলছে। সেটা নিয়ে কী মত?
এবার আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। এখন হিন্দুত্ব নিয়ে এত কথা হচ্ছে। তাহলে এতদিন কি মানুষ হিন্দু ছিল না? ধর্মকে নিয়ে খেলার চেষ্টা চলছে। নোংরা রাজনীতি হচ্ছে এটা। মানুষে মানুষে লড়াই বাধিয়ে দিয়ে কেউ মসনদে আসতে পারবে না। আর এলেও, সেটা ধরে রাখতে পারবে না। এই যে সারদা বা নারদ-কাণ্ড নিয়েও তো এতে আলোচনা হচ্ছে। সেগুলো যে রটনা, সেটা মানুষ এতদিনে বুঝে গিয়েছেন। যার উদাহরণ হল গত বিধানসভার ফলাফল। ২১১টা আসন পেয়েছিলাম! ভাবতে পারছেন। দিদি মানুষের জন্য ভাল কিছু করার চেষ্টা করছেন। ভবিষ্যতেও করবেন।-এবেলা
২৮ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে