বিনোদন ডেস্ক: দর্শকপ্রিয় অভিনয়শিল্পী মিথিলা। তাঁর জন্ম গুলশানে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পুরানা পল্টন ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। আশির দশকের শেষ ভাগ ও নব্বইয়ের দশকের ঢাকার গল্প শুনিয়েছেন তিনি। লিখেছেন সাইমুম সাদ
‘আমার জন্ম গুলশানে। গুলশান এলাকাটা বিদেশের মতো ছিল অনেকটা। বেশির ভাগই বিদেশিরা থাকত সেখানে। বাড়িগুলো ছিল ডুপ্লেক্স। সকালে বিদেশিরা কুকুর নিয়ে হাঁটত। প্রচুর ফাঁকা জায়গা ছিল। আমাদের দাদার বাড়িটাও ডুপ্লেক্স ছিল। যৌথ পরিবারেই আমার শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে। পরে আব্বুর চাকরির সুবাদে আমরা পুরানা পল্টন এলাকায় চলে আসি। ভর্তি হই সেখানকারই একটি স্কুলে। ’ বলে গেলেন মিথিলা। পুরানা পল্টনের সময়গুলোও ছিল নানা ঘটনায় পূর্ণ। তবে সবার আগেই তাঁর স্মৃতিতে ভাসছে সেই আশির দশকের উত্তপ্ত ঢাকার কথা। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তখন ক্ষমতায়। ঢাকাজুড়ে চলছিল এরশাদবিরোধী আন্দোলন। নিজের চোখে দেখা সেই আন্দোলনের ঘটনাই বললেন, ‘সে সময় পল্টন এলাকায় প্রায়ই গণ্ডগোল লেগে থাকত। মিছিলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ত। জানালা দিয়ে আমাদের ঘরেও সেই গ্যাস ঢুকে পড়ত। ’
তবে সেই উত্তপ্ত ঢাকা শান্ত হতে খুব বেশিদিন লাগেনি। একটু ফুরসত পেলেই বাবার হাত ধরে ঘুরতে বেরোতেন। ‘রিকশায় চেপে আব্বুর সঙ্গে শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতাম। আম্মু তখনো পড়াশোনা করতেন সেখানে। আম্মুর বিয়ে অল্প বয়সে হয়েছিল। আম্মু আমার জন্মের পর অনার্স শেষ করেছেন ঢাবি থেকে। সেখানে বেড়াতে গিয়ে ভাবতাম, আমিও পড়ব এখানে। বড় হয়ে পড়েছিও। বিরাট বিরাট গাছ ছিল ঢাবিতে। এখনো অনেক বড়। কিন্তু ছোট ছিলাম বলে তখন গাছগুলো দৈত্যের মতো মনে হতো। ’
তত দিনে পুরানা পল্টন ছেড়ে মিথিলারা সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় চলে এসেছেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। কেমন ছিল সিদ্ধেশ্বরীর সময়গুলো?
‘সেখানে পাড়া কালচারটা ছিল। এলাকার সমবয়সীরা মিলে দল বেঁধে হেঁটে স্কুলে যেতাম। খুবই নিরাপদে চলাফেরা করতাম। মা-বাবার কোনো চিন্তাই ছিল না আমাদের নিয়ে। বিকেলে খেলতে বের হতাম। আমার একটা সাইকেল ছিল। সেই সাইকেলটা নিয়ে প্রায় বিকেলেই বেরোতাম। হরেক রকমের খেলাধুলা ছিল। তবে মাগরিবের আজান দেওয়া মানে সঙ্গে সঙ্গে বাসায় ঢুকতে হবে। একটু এদিক-ওদিক হলেই বকুনি খেতাম। আসরের আজানের আগেই খেলতে বেরোতাম। এখনো মাগরিবের আজানের সময় আমার অস্থির লাগে! আর টিনএজার হওয়ার পর আন্টিরা আমাদের চোখে চোখে রাখতেন, যাতে কেউ টিজ করতে না পারে। সে সময়টায় দেখতাম, এলাকার সবাই সবার গার্জিয়ান ছিল! একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসত। ’
স্কুলের ছুটিছাটায় নানাবাড়ি বেড়াতে যেতেন। নানাবাড়ি মিরপুরের কাজীপাড়ায়।
বললেন, ‘কাজীপাড়া এলাকাটা একেবারে গ্রাম ছিল। গাছপালায় ভরপুর ছিল। গাছের নিচে আমরা হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে খেলতাম। আমার নানার বাড়িটা ছিল একতলা আর যত দূর চোখ যায় চারপাশে সবুজ মাঠ আর মাঠ। ধানক্ষেতও ছিল। উৎসবের দিনগুলোতে মুখিয়ে থাকতাম চায়নিজ খাওয়ার জন্য। চাংপাই রেস্টুরেন্টে চায়নিজ খেতাম। ’ কিন্তু এখনকার ঢাকাটা এতটা ঘিঞ্জি হয়ে উঠবে ভাবতেই পারেননি। জ্যামে বসেই কেটে যায় দুই ঘণ্টা! ‘এ শহরে আমি কখনোই আমার মেয়েকে একা বাইরে পাঠাতে পারব না। খেলাধুলা করার কোনো মাঠ নেই। চার দেয়ালের মধ্যে আমার মেয়ে বেড়ে উঠছে। এটা কল্পনাই করতে পারিনি কখনো।’-কালের কণ্ঠ
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস