বৃহস্পতিবার, ০৪ মে, ২০১৭, ১০:১৪:৪৪

কেমন আছেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকারা?

কেমন আছেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকারা?

বিনোদন ডেস্ক: ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু হয় সঙ্গীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘ক্লোজআপ ওয়ান : তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’। দ্বিতীয় আসর অনুষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালে। পরবর্তিতে এক বছর বিরতি দিয়ে তৃতীয় আসর অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে এবং সর্বশেষ আসর অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে।

২০০৫ সালে নোলক বাবু, ২০০৬ সালে সালমা এবং ২০০৮ সালে লিজা ক্লোজআপ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হন। সর্বশেষ আসরে বিজয়ীর মুকুট উঠেছিল নাটোরের মেয়ে লায়লার মাথায়। এ রিয়্যালিটি শোয়ের প্রধান তিন বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন, ইমতিয়াজ বুলবুল, ফাহমিদা নবী এবং পার্থ বড়ুয়া। আসরের প্রথম বিজয়ী ছিলেন নোলক বাবু।

একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা একজন গায়ক। যার কোনো গানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। ছিল না কোনো সাধারণ শিক্ষাও। তবুও মানুষের আবেগ ও ভালোবাসায় প্রথমবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন হন এ শিল্পী। কিন্তু খুব বেশিদিন তার চলার পথের চাকা সচল থাকেনি। তারকাখ্যাতি বয়ে বেড়াতে পারেননি তিনি। কিছুদিনের মধ্যেই হারিয়ে যান।

এখন ‘করে খাচ্ছি’ টাইপের কাজ করলেও নোলকের ব্যাপারে শ্রোতা-দর্শকের উদাসীনতা বেশ লক্ষণীয়।

ক্লোজআপ ওয়ানের ২০০৫ সালের বিজয়ী লালন কন্যা বিউটি। প্রতিযোগিতায় ‘আমাকে কি রাখবেন গুরু চরণে’ শীর্ষক লালনের গানটি গেয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন বিউটি। এর পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশে ও বিদেশে শোয়ের ব্যস্ততায় কাটছে তার সময়। পাশাপাশি একাধিক মিক্সড অ্যালবামে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। গানের পাশাপাশি এ ছাড়া সঙ্গীতের ওপর অনার্স পড়ছেন ইউডার সঙ্গীত বিভাগে।

ক্লোজআপ ওয়ানের দ্বিতীয় আসরের সেরা আবিষ্কার সালমা আক্তার। লালন কন্যাখ্যাত সালমা ২০০৬ সালে ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। কণ্ঠ শৈলীর গুণে শ্রোতারা তাকে বেশ আনন্দের সঙ্গেই গ্রহণ করেছেন। ২০১০ সালে তিনি দিনাজপুরের পৌর চেয়ারম্যান শিবলী সাদিককে বিয়ে করেন। জন্ম দেন ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। পরবর্তিতে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন এ শিল্পী। এর মধ্যে সালমার কয়েকটি একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।

২০০৬-এর ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল। সঙ্গীতের সঙ্গে পথচলা তার দীর্ঘদিনের। এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে কয়েকটি একক অ্যলবাম। এ ছাড়া বেশ কিছু মিক্সড অ্যালবামের কাজ করছেন তিনি। গানের পাশাপাশি ইউডা থেকে সঙ্গীতের ওপর অনার্স শেষ করেছেন। এখন মাস্টার্স করছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এভাবেই চলছে পুতুলের ব্যস্ততা।

২০০৬ সালের ক্লোজআপ তারকা রিঙ্কু। দুর্দান্ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন স্টুডিও নিয়ে। রিঙ্কু এবং তার বন্ধুরা মিলে সম্প্রতি গড়ে তুলেছেন সম্পর্ক নামের একটি মিউজিক স্টুডিও। নতুন গড়ে উঠা এ স্টুডিও সঙ্গীত পরিবেশনা এবং প্রযোজনার কাজ করবে বলে জানান রিঙ্কু। স্টুডিও আর স্টেজ পারফরমেন্স নিয়ে এখন রিঙ্কুর ব্যস্ততা। কাজের বাইরে অবসর কাটান স্ত্রী আর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে।

ক্লোজআপ তারকা রন্টি দাশ। এখন অনেকটা আড়ালেই বলা যায় তাকে। কারণ গান নয় একমাত্র সন্তান আর্শিকে নিয়েই সময় কাটে তার। তবুও গানের প্রতি অগাধ ভালোবাসার কারণেই বারবার গানে ফিরে আসতে সংসারের বাইরে যেটুকু সময় পাওয়া যায় তার পুরোটাই গান নিয়ে থাকেন এ ক্লোজআপ ওয়ান তারকা। সংসারের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি সিনেমার গানে প্লেব্যাক করেছেন ভালোবাসার রং, তোমায় আমি ভালোবাসি, পায়রাসহ বেশ কিছু ছবিতে। আর সুযোগ পেলেই যাচ্ছেন স্টেজ পারফরমেন্সে।

২০০৮ সালের ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় প্রথম হন সানিয়া সুলতানা লিজা। একক অ্যালবামের পাশাপাশি কয়েকটি মিক্সড অ্যালবামে গান করেন এ শিল্পী। অ্যালবামের গানের বাইরে প্লেব্যাকও করছেন তিনি। বলা যায় অনেকটা জনপ্রিয়তার তকমা জুড়েছেন নিজের নামের সঙ্গে।

ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সাজু। ২০০৮ সালে ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রানার আপ। এ ফোকশিল্পীর গান সুনাম ছড়িয়েছে সারা দেশে। ইতিমধ্যে তার ডজনখানেক একক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে অডিও বাজারে। ২০০০ সালে জাতীয় শিশু একাডেমি, ২০০৫ সালে বঙ্গবন্ধু শিশুমেলা থেকে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।

ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার সর্বশেষ আসরের সেরা হয়েছেন নাটোরের মেয়ে সুলতানা ইসলাম লায়লা। সহযোগিতার অভাবে এখন পর্যন্ত কোনো অ্যালবাম রিলিজ হয়নি তার।

ক্লোজআপ ওয়ানের বিচারকরা যা বলেন
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল : ক্লোজআপ থেকে যারা এসেছে সবাই যে যার মতো করে অনেক ভালো আছেন। শুধু নিজেদের মতো করে গান করছেন তা নয়। দেশে যেমন জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন বিদেশেও রয়েছে তাদের সমান ব্যস্ততা। সালমা থেকে শুরু করে পুতুল, লিজা, কিশোর, রাজীব, বিউটি সবাই এখন প্রতিষ্ঠিত। আমার কাছে মনে হয় যারা গানের জগতে আছেন তারা কেউ বলবেন না এ শো থেকে এসে কেউ হারিয়ে গেছেন। এর মধ্যে শুধু নোলক বাবুর খবর আমরা পাই না। সে হয়তো সেভাবে নিয়মিত নয়। এ ছাড়া যদি ধরি প্রথম ১০ অথবা ১৫ জন সবাই নিয়মিত কাজ করছে। শুধু কাজ করছে না এক একটা অনুষ্ঠানে গান গাইতে বেশ ভালো মানের সম্মানী নিয়েই গান করেন তারা। কোনো একটি জায়গা থেকে শিল্পী খুঁজে বের করে তৈরি করলে সেখানের সবাই যে প্রতিষ্ঠিত হবে তা কিন্তু নয়। তার পরও আমি মনে করি ক্লোজআপ থেকে যারা বের হয়েছে তারা খুব ভালো করছে।

আইয়ুব বাচ্চু : ক্লোজআপ ওয়ানের মাধ্যমে অনেক মেধাবী শিল্পী উঠে এসেছেন। তাদের অসংখ্যা প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে। অবশ্যই তাদের যোগ্যতা না থাকলে তা পারতেন না। কিন্তু এর মাঝেও যারা ছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজন হয়তো যেটুকু সামনে আসার কথা ছিল সেভাবে আসতে পারেননি। তার মানে কিন্তু এই নয়, তারা গান করছেন না। নিজেদের মতো করে গান করছেন তারা। অনেকে ভালোও করছেন। আমার কাছে মনে হয় এদের মধ্যে অনেকে সুযোগের অভাবে অনেক কিছু করতে পারছেন না। তাই শুরু থেকে তাদের নিয়ে যে মানুষগুলো কাজ করেছেন, পরিশ্রম করে তাদের তৈরি করেছেন তাদের আরেকটু সহযোগিতা পেলে তারা আরও অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবে। এটা আমার বিশ্বাস। শুধু দরকার একটু স্নেহ দিয়ে, সাহস দিয়ে তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
৪ মে ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে