বিনোদন ডেস্ক: তিনি কালজয়ী অভিনেত্রীদের একজন। বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দিয়ে অভিষেক ঘটেছিল এক মিষ্টি মেয়ের। তবে স্বাধীনতা-উত্তর সেই সময়ের উর্দু চলচ্চিত্রে পাকিস্তানের হয়ে তিনি অর্জন করেছিলেন সম্ভাব্য সব পুরস্কার ও স্বীকৃতি।
স্বাধীনতার পর তিনি নিয়মিত হন বাংলাদেশে। এখানেও বাজিমাত করেছেন সুপারহিট সব ছবিতে অভিনয় করে। তবে তাকে সবাই ‘আম্মাজান’ নামেই চেনেন এখন। কাজী হায়াতের পরিচালনায় ‘আম্মাজান’ ছবিতে মান্নার মায়ের ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করে তিনি ঢাকাই ছবির দর্শকদের কাছে ‘আম্মাজান’ নামেই সম্মানিত।
নাম তার শবনম। এ নামের অর্থ দাঁড়ায় ফুলের মধ্যে বিন্দু বিন্দু শিশির ঝরে পড়া। নামেই মিশে আছে ঘোর লাগা নেশা। তার নামে প্রেম আসে, তার নামে আসে সম্মান। আজ কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। চুপিচুপি বাসাতেই বসে কাটিয়ে দিচ্ছেন দিনটি। জানালেন, জীবন এখন কেটে যায় নানা ভাবনায়। উৎসব খুব একটা টানে না। সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন নিজের জন্য এবং প্রয়াত স্বামী বরেণ্য সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের জন্য।
প্রকৃতপক্ষে শবনম হচ্ছে তার চলচ্চিত্র-নাম। প্রকৃত নাম হচ্ছে ঝর্ণা বসাক। ১৭ আগস্ট, ১৯৪০ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ননী বসাক ছিলেন একজন স্কাউট প্রশিক্ষক ও ফুটবল রেফারি। স্বনামধন্য সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষকে শবনম বিয়ে করেন ১৯৬৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর। তাদের সংসারে একমাত্র ছেলে রনি ঘোষ জন্ম নেয়।
১৯৬১ সালে বাংলা চলচ্চিত্র ‘হারানো দিন’র মাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন শবনম। ১৯৬২ সালে উর্দু চলচ্চিত্র ‘চান্দা’ ছবির মাধ্যমে তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে রাতারাতি তারকাখ্যাতি পান। এ দুটি ছবিই তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকা থেকে মুক্তি পেয়েছিল।
পরবর্তী বছরে ‘তালাশ’ সমগ্র পাকিস্তানে মুক্তি পেলে ওই সময়ের সর্বাপেক্ষা ব্যবসা সফল ছবির মর্যাদা লাভ করে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে শবনম পাকিস্তানের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে চিহ্নিত হন। পেশাজীবী মনোভাবের কারণে তিনি ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের করাচিতে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন।
সত্তর দশকের শুরুতে শবনম ললিউডে (লাহোর) পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করেন। তিনি নায়িকা হিসেবে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে ধ্স নামার পূর্বে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত প্রবল প্রতাপে একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করেছিলেন। ধারণা করা হয়, বিশ্বে তিনিই একমাত্র চলচ্চিত্র অভিনেত্রী যিনি ষাট দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত তিনটি দশক ধারাবাহিক ও সফলভাবে রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করে অগণিত দর্শক-শ্রোতার মন জয় করেছিলেন।
শবনম ‘আয়না’ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং ছবিটি পাকিস্তানের সিনেমা হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলার রেকর্ড করে। ষাটের দশকে কাজী রিজভানী’র পরিচালনায় ওয়াহিদ মুরাদের বিপরীতে ‘লাদলা’ ছবির ‘সোচা থা পিয়ার না করেঙ্গে’ গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায় এবং সেই সাথে তিনিও সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হন।
১৯৮৮ সালে শবনম তার চরিত্র পরিবর্তন করেন এবং পুনরায় ঢাকা ও লাহোরের চলচ্চিত্রাঙ্গনে অভিনয় করতে থাকেন। ৪০ বৎসরের অধিককাল ধরে অভিনয়ের ফলে তিনি প্রায় ১৮০টি চলচ্চিত্রের অনেকগুলিতে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন।
শবনম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পাকিস্তান চলচ্চিত্রের সম্মানসূচক নিগার পুরস্কার পেয়েছেন ১১ বার। সহ অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছেন ১ বার। আর তিনবার পাকিস্তানের জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। কাজী হায়াতের পরিচালনায় ও ঢাকা প্রোডাকশনের ব্যানারে তিনি ১৯৯৯ সালে সর্বশেষ আম্মাজান চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। সেই ছবি দেশ কাঁপিয়েছিলো তার দুর্দান্ত অভিনয়ে।
শবনম-ওয়াহিদ মুরাদ, শবনম-নাদিম জুটি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পরবর্তীকালে পাকিস্তানে বসবাস করে পাঞ্জাবী চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। আর ঢাকাতে তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন রহমান ও নায়করাজ রাজ্জাকের বিপরীতে।
শবনম ছিলেন তার সময়কার নারীদের কাছে স্টাইল আইকন। তিনি লাক্স সুন্দরী হিসেবে পাকিস্তানে লাক্সের শুভেচ্ছা দূতের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। এই অভিনেত্রীর জন্মদিনে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে রইলো শ্রদ্ধা এবং শুভেচ্ছা। শতায়ু হোন শবনম।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস