বিনোদন ডেস্ক : ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তী। বেশ কয়েক বছর অভিনয়ে নেই শ্রাবন্তী। স্বামী, সন্তান আর সংসারকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন। যে কারণে ২০১০ সালে নূরুল আলম আতিকের ‘ডালিম কুমার’ নাটকে অভিনয়ের পর আর নতুন কোনো নাটকে তাকে দেখা যায়নি। এতদিন দর্শক এবং নির্মাতারা আশায় ছিলেন শ্রাবন্তী অভিনয়ে হয়তো ফিরবেন। কিন্তু সেই আশাতেও গুড়েবালি এখন।
বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মতিন রহমানের ‘রং নম্বর’চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে নজর কাড়েন তিনি। সুপার ডুপার হিট ছবির এই নায়িকা এখন বসবাস করেন যুক্তরাষ্ট্রে। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন। কিন্তু কিছুটাও কষ্ট আছে। ‘প্রবাস জীবনে শত সুখের মাঝেও জন্মভূমির জন্য তার মনে সব সময় হাহাকার।
শ্রাবন্তী ২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা খোরশেদ আলমের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই শোবিজের রঙিন দুনিয়া থেকে নিজেকে আড়াল করে নেন এই গুণী অভিনেত্রী।
অনেক লাক্সারিয়াস জীবনের মধ্যেও মানুষের মন কাঁদে দেশের জন্য। শ্রাবন্তীর ক্ষেত্রেও ঘটে কিছুটা তাই। ওয়াশিংটনের নিকটবর্তী ম্যারিল্যান্ডের গেইদারল্যান্ডে বসবাস করেন শ্রাবন্তী। রাবিয়া আলম ও আরিশা আলমের মা শ্রাবন্তী। দুই বাচ্চাদের সাথে হেসে খেলে সংসার জীবনটা ভালোই কেটে যায়।
কিন্তু প্রবাস জীবনে বাংলা কথা বলার জন্য ছটফট করে ওঠে মন-প্রাণ। বাসায় বাংলাতেই কথা বলেন। কিন্তু মন ভরে না। শ্রাবন্তী সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে বিরক্তি প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘উফ ইংলিশ বলতে বলতে মুখ আর মাথা ব্যাথা ধরে গেলো। বাঁচাও…’
শ্রাবন্তী বলেন, সত্যি বলতে কী জীবনের অর্ধেকটা সময়ই তো আসলে মিডিয়াতে কাজ করেছি, অভিনয় করেছি, বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে কাজ করেছি। সুখে-দুঃখে মিডিয়ার মানুষদের সঙ্গেই সময় কেটেছে আমার। তাই প্রতি মুহূর্তে এই অঙ্গনটাকে খুব মিস করি এবং করবো।
কিন্তু যেহেতু একজন নারীর পরিপূর্ণতা আসে সংসার জীবনে, তাই সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে আমার দুই মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমেরিকায় আছি। প্রত্যেক মানুষেরই জীবনে অনেক কিছু ইচ্ছে করে। কিন্তু সব সময় মানুষ তার ইচ্ছেমতো চলতে পারে না।
আতিকুল হক চৌধুরীর নির্দেশনায় ‘আমার দুধ মা’ নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয় জগতে যাত্রা। ছোটবেলায় ‘বেইলী কেডস’র বিজ্ঞাপনে প্রথম মডেল হন তিনি। বড়বেলায় এসে মতিউর রহমান গাজীপুরীর নির্দেশনায় একটি নাটকে অভিনয় করেন। পাশাপাশি তারিক আনাম খানের নির্দেশনায় পেপসোডেন্টের বিজ্ঞাপনে মডেল হন। এরপর হেনোলাক্স, ইংলিশ শ্যাম্পু, ইউরোকোলা’র বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে শ্রাবন্তী আলোচনায় চলে আসেন।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য দর্শকপ্রিয় নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘একান্নবর্তী’, ‘নীড়’, ‘দ্বিতীয় জীবন’ ইত্যাদি। মতিন রহমানের নির্দেশনায় চিত্রনায়ক রিয়াজের বিপরীতে শ্রাবন্তী অভিনয় করেন ‘রং নাম্বার’ চলচ্চিত্রে।
২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর খোরশেদ আলমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শ্রাবন্তী। এরপর থেকে তিনি অভিনয়ের বাইরে।
তবে শ্রাবন্তীকে যে কেউ হুট করে দেখলে এখন আর চিনতেই পারবে না যে এই শ্রাবন্তী সেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তী। অত্যাধিক মুটিয়ে যাওয়া শ্রাবন্তী এখন ব্যস্ত স্বামী, সন্তান আর সংসার সামলাতে। তবে টিভি পর্দায় তাকে না পাওয়া গেলেও ফেসবুক পেইজে তিনি নিয়মিত নিজের আপডেট শেয়ার করেন ভক্ত, বন্ধু আর একসময়ের সহকর্মীদের সঙ্গে।
তিনি ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন তার সন্তানদের নানা খুনসুটির মুহূর্ত, তাদের সঙ্গে অবকাশ যাপনের নানারকম ছবি। সম্প্রতি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফ্রান্স ও জার্মানি ভ্রমণের কিছু আনন্দঘন মুহ‚র্তের ছবি শেয়ার করেন তার ফেসবুকের দেয়ালে। এসব দেখলে অনেকখানি আঁচ করা যায়, সংসার-সন্তান নিয়ে বেশ ভালোই দিন কাটছে শ্রাবন্তীর। তবে অভিনয়ে না ফিরলেও এক সময়ের ফেলে আসা মুহ‚র্তগুলো মিস করেন প্রতিনিয়ত।
চট্টগ্রামের মেয়ে শ্রাবন্তী ক্যারিয়ারজুড়ে কাজ করেছেন অসংখ্য বিজ্ঞাপন ও নাটকে। পাশাপাশি ‘রং নাম্বার’ একটি চলচ্চিত্রেও তিনি নায়ক রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন। মূলত শাহেদ ও জাহিদ হাসানের সঙ্গে শ্রাবন্তীর প্রতিষ্ঠিত জুটি গড়ে উঠলেও রিয়াজের সঙ্গে তিনি অধিক জনপ্রিয়তা পান। সেই জনপ্রিয়তার শুরু হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও আবুল হায়াতের পরিচালনায় জোছনার ফুল নাটক দিয়ে। তারপর রিয়াজ ও শ্রাবন্তীকে দেখা গেছে বেশ কিছু খণ্ড নাটকেও।
শ্রাবন্তী সাইফুল ইসলাম মাননু, চয়নিকা চৌধুরী, জাহিদ হাসান, আবুল হায়াতসহ দেশের প্রায় নামি দামি সব নির্মাতার সঙ্গে কাজ করেছেন।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস