বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৭:০৪:২৭

চুয়াডাঙ্গার সিনেমা হল ভেঙে তৈরি হচ্ছে মাদরাসা

চুয়াডাঙ্গার সিনেমা হল ভেঙে তৈরি হচ্ছে মাদরাসা

বিনোদন ডেস্ক : চুয়াডাঙ্গা জেলায় বন্ধ সিনেমা হলগুলো ইতোমধ্যে মাদরাসা, ক্লিনিক ও গুদামে পরিণত হয়েছে। ফলে বিলুপ্ত হতে চলেছে এ জেলার সিনেমা হলগুলো।

ইতোমধ্যে ১২টি সিনেমাহল বন্ধ হয়ে গেছে। সিনেমা হলের পরিবেশ, রুচিসম্মত ছবির অভাব আর ঘরে ঘরে টেলিভিশন চলে আসায় এ ব্যবসায় ধস নেমে গেছে। ইতোমধ্যে, অনেক সিনেমা হল মাদরাসা, গোডাউন, ক্লিনিক, ছাত্রাবাস আর কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পরিণত হয়েছে। অথচ এক সময় এ সিনেমা হলগুলোই ছিল সীমান্তবর্তী এ জেলার মানুষের আনন্দ-বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম।

সেইসঙ্গে সিনেমা হলগুলোতে কর্মসংস্থান ছিল এ এলাকার অধিকাংশ মানুষের। ম্যানেজার থেকে শুরু করে টিকিট কাউন্টার মাস্টার, রিল মাস্টার, প্রচারম্যান, গেইটম্যান ইত্যাদি বিভিন্ন পদে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো অনেকেই। কিন্তু বর্তমানে তারা বেকার।

পরিবার নিয়ে দেখার মতো ছবি তৈরি না হওয়ায় এদেশের দর্শকরা দেশিয় চলচ্চিত্র অনেকটা বর্জন করেছে। দর্শক ভারতীয় সিনেমার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

গত রোববার চুয়াডাঙ্গা পান্না সিনেমা হলে রংবাজ সিনেমা দেখে বের হয়ে আদম দফাদার নামে এক সিনেমাপ্রেমী জানান, এখন মানুষ প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। মানুষের আগের মতো আর সময় নেই হলে গিয়ে সিনেমা দেখার মতো।

তিনি আরও জানান, ইন্টারনেট মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে। এখন যে কেউ চাইলে ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাউনলোড করে বাড়িতে বসে দেখে থাকেন। তবে এখন কিছু কিছু মানসম্মত সিনেমা হচ্ছে তাই নায়ক শাকিব খান অভিনীত রংবাজ সিনেমাটি দেখতে আসা।

শহরের নান্টুরাজ সিনেমা হলে শাকিব খান-বুবলী অভিনীত ‘অহংকার’ সিনেমা দেখতে আসা সিনেমাপ্রেমী সাদিকুল ইসলাম জানান, অশ্লীলতার কারণে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার পরিবেশ আর নেই। ভালো পরিবেশ ফিরে এলে হয়তো আবারও আশির দশকের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে সিনেমাহলগুলোতে। তবে এখন বেশ কিছু সিনেমা হচ্ছে যে সিনেমাগুলো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেখা যায়। তাছাড়া সিনেমা হলের পরিবেশ আগের চেয়ে ইদানিং একটু উন্নতি হয়েছে।

পাইরেসির কবলে ‘রংবাজ’!
আরও অনেকেই জানান, এদেশের ছবি সমাজ পরিবর্তনের কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। নগ্নতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এদেশের সিনেমা ব্যবসায়ে দর্শক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ছবিগুলোতেই কোনো কাহিনি থাকে না। ধুম-ধারাক্কা মারপিট, অসংলগ্ন কথা ও বাজে গানে ভরা ছবিগুলো দর্শককে আকর্ষণ করতে পারছে না। এসবের কারণে দেশীয় সিনেমা দেখা ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানান দর্শকরা।

আর সিনেমা হল মালিকরা বলছেন, বর্তমানে ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো এদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। রাতে-দিনে এ চ্যানেলগুলোতে বাংলা ও হিন্দি প্রচুর ছবি দেখানো হচ্ছে। ফলে দর্শকরা সময় ও টাকা নষ্ট করে সিনেমা হলে আর যেতে চান না।

চুয়াডাঙ্গা জেলাতে মোট সিনেমা হলের সংখ্যা ১৪টি। এর মধ্যে মাত্র ২টি সিনেমা হল বর্তমানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। তাও আবার ঈদ পূজা-পার্বনেই শুধু এ’দুটি সিনেমা হলে ছবি চালানো হয়। বাকি ১২টি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে।

চালু থাকা সিনেমা হলগুলো হচ্ছে-চুয়াডাঙ্গা শহরের পান্না সিনেমা (রূপছায়া) ও নান্টুরাজ সিনেমা হল।
বন্ধ হয়ে গেছে আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের শিলা, টকিজ ও জনি সিনেমা হল, মুন্সিগঞ্জের রকি, সরোজগঞ্জের মিতালি, হাটবোয়ালিয়ার শিল্পী, দামুড়হুদার ছবিঘর, কার্পাসডাঙ্গার মিন্টুরাজ, জীবননগর উপজেলার আধুনিক ও মহানগর এবং দর্শনার দর্শন ও হীরা সিনেমা হল। এসব সিনেমা হলের মালিকরা সিনেমা হল ভেঙে মাদরাসা, গোডাউন, ক্লিনিক, ছাত্রাবাস, কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও মার্কেট তৈরি করেছেন।

জীবননগরের আধুনিক সিনেমা হলের মালিক সাইফুল ইসলাম জানান, সিনেমা হলের ব্যবসায় এখন আর পেট চলে না। নতুন নতুন ছবি চালিয়েও দর্শক হয় না। প্রতি সপ্তাহে লোকসান গুনতে হয়। ফলে সিনেমা হল ভেঙে ক্লিনিক করেছি। এদিকে, শহরের মহানগর সিনেমা হলটি বন্ধ করে ওয়েল্ডিং কারখানা ও গোডাউন হিসেবে ভাড়া দিয়েছে ওই হলের মালিক।

দর্শনার ‘দর্শন’ সিনেমা হলের মালিক মিন্টু শাহ জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা হলটি চালিয়ে আসছিলাম। কিন্তু বর্তমানে ঘরে ঘরে টিভিই সিনেমা হল হয়ে গেছে। এখন দর্শক আর টাকা দিয়ে টিকিট কেটে হলে আসতে চায় না। প্রতিমাসেই লোকসান গুনতে হচ্ছিল। তাই হলটি ভেঙে ফেলেছি।

এখানে হল ভেঙে মার্কেট নির্মাণ করবেন বলে তিনি জানান।

চুয়াডাঙ্গা পান্না সিনেমা হলের ম্যানেজার মিলু বিশ্বাস জানান, এ পেশায় আর সংসার চলে না। তাই এই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় যাব।

এদিকে, দামুড়হুদার একমাত্র সিনেমা হলটি ভেঙে বর্তমানে সেখানে একটি মাদরাসা ও ছাত্রাবাস নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে সিনেমা ব্যবসা যেভাবে চলছে তাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে সিনেমা ব্যবসা পুরোপুরি বিদায় নেবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে