রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০১:০৯:০২

বিয়ের পর দেবের সঙ্গে নিজের কেমিস্ট্রি নিয়ে খোলামেলা কোয়েল মল্লিক

বিয়ের পর দেবের সঙ্গে নিজের কেমিস্ট্রি নিয়ে খোলামেলা কোয়েল মল্লিক

পৃথা বিশ্বাস : পুজো মানেই তাঁর কাছে একরাশ আনন্দ আর আনলিমিটেড আড্ডা। বিয়ের পরেও পুজোগুলো বদলায়নি তাঁর। কিন্তু বেশ কিছু বছর পর এবারের পুজোটা কোয়েল মল্লিকের কাছে একটু অন্য রকম। কারণ পুজোয় এবার তাঁর ছবি রিলিজ করছে। শুধু তাই নয়। ফিরছে পুরনো দেব-কোয়েলের জুটি। তবে দেব-রুক্মিণীর জুটিও রয়েছে। কোনটা নিয়ে বেশি আগ্রহ দর্শকের? কোয়েলের মতামত জেনে নিল ‘ওবেলা’।

অনেক বছর পর আপনার পুজোয় ছবি মুক্তি পাচ্ছে...।
আমার ছবিগুলো পুজোয় মুক্তি পাওয়ার সুযোগই পায় না। এতগুলো বছর ভাবতাম, ইশ! পুজোয় এত ছবি মুক্তি পাচ্ছে, একটাও আমার নয়। কিন্তু ভাবতাম, একদিক থেকে ভালই। ছবিটা কেমন চলছে, সেই নিয়ে টেনশন থাকবে। আর ওই চারদিন কে আর টেনশন করতে চায়! তবে এবার ‘ককপিট’ নিয়ে আমি বেশ এক্সাইটেড। চার বছর আগে পুজোয় আমার আর দেবের ছবি মুক্তি পেয়েছিল আর সেটা ব্লকবাস্টার হয়েছিল। এবারও সেই জুটি!

পুজোয় মানুষ ছবি দেখেন বলে মনে হয়?
ডেফিনিটলি! পুজো আর সিনেমার একটা যোগ আছে। দুপুরবেলাগুলো মানুষ সাধারণত সিনেমা দেখতেই পছন্দ করেন। আমার মনে আছে ইন্ডাস্ট্রিতে আসার আগে পর্যন্ত পুজোর দিনগুলো সকালে অঞ্জলি হয়ে গেলে বা দুপুরের খাওয়া হয়ে গেলে হাতে একটু ফাঁকা সময় থাকত। সেই সময় জেঠিমা-কাকিমা-ভাই-বোনেরা মিলে হইহই করে সিনেমা দেখতে চলে যেতাম। আবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে ফিরে এসে সন্ধেবেলার জন্যে নতুন শাড়ি পরে সেজেগুজে তৈরি হয়ে যেতাম। পুজোয় সিনেমা দেখার ক্রেজটাই আলাদা।

এবার তো এতগুলো ছবি রিলিজ করছে। বাড়তি টেনশন হবে?
এত বছর হয়ে গিয়েছে, এখন আর তেমন টেনশন হয় না। আর সব ছবিরই তো আলাদা দর্শক রয়েছে। প্লেন ক্র্যাশ নিয়ে ছবি বাংলা কেন, ভারতেই আগে হয়নি। আর ছবিটা শুধু ফ্লাইট নিয়ে নয়, মানুষের ইমোশন নিয়ে। টিজার দেখে অনেকে ভাল ফিডব্যাক দিয়েছে। তাই আমি বেশ চিল্‌ড। গোটা পুজোয় আর টেনশন করব না। তবে ২২ তারিখ টেনশনটা হবেই! দর্শকের আমায় কেমন লাগল, সেগুলো ভাবতে থাকব। খুব টেনশন হলে আমি আবার সারাদিন ধরে ঘর গোছাই। এবারও তাই করব বোধহয় (হাসি...)।

দু’বছর পর ফের পরদায় আপনাকে দেখা যাচ্ছে। খুব ভেবেচিন্তে রোল নিচ্ছেন এখন। ‘ককপিট’ করতে কেন রাজি হলেন?
এই কয়েক বছরে এত রকম ছবি করেছি যে আমার খিদেটা বেড়ে গিয়েছে। সারাক্ষণ ভাবি নিজেকে নতুনভাবে কী করে পরদায় তুলে ধরব। চেহারা নিয়ে খুব একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে পারব না। খুব অন্য রকম ভূমিকা পেলে তবেই নিজেকে সেভাবে প্রেজেন্ট করা যায়। অনেকদিন আগে একটা পার্টিতে র‌্যান্ডমলি দেব আমায় বলেছিল, ‘একটা ছবি করছি, করবি’? আমি হ্যাঁ বলে পরে ভুলেও গিয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন ফোন করে দেব বলল, ‘ছবিটা করবি বলেছিলি, করবি তো’? আমি তো অবাক, কী ছবি, কখন বললাম কিছুই বুঝতে পারছি না। তারপর কমলদা (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, পরিচালক) এসে আমায় গল্পটা বললেন। আমার খুবই ভাল লেগেছিল। চরিত্রটা পাইলট দিব্যেন্দু রক্ষিতের স্ত্রী রিয়ার। সে ইতিহাসবিদ, এনজিওতে বাচ্চাদের নাচগান শেখায়। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর থেকে ভালবাসার মানুষটাকে খুব আঁকড়ে থাকে। ছবির গল্পে দু’টো প্যারালাল ট্র্যাক রয়েছে। একটা প্লেনে টারব্যুলেন্সের ফলে হচ্ছে। আরেকটা মাটিতে, যা কিছু মেয়েটার সঙ্গে ঘটছে। দু’টোর মধ্যে ভাল ব্যালান্স আছে বলে আমার বেশ ভাল লেগেছিল।

কমলেশ্বরের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করে কেমন লাগল?
এত ঠান্ডা স্বভাবের পরিচালক আমি খুব কম দেখেছি। ওঁর বোঝানোর ধরনটা এমন, যে অভিনেতারা ভাল করে বুঝে যাবে উনি ঠিক কী চাইছেন। লুক টেস্ট থেকেই যেন একটা ওয়ার্কশপের মতো হয়ে যায়। তাই সেট’এ কোনও রকম হাইপারটেনশন, চিৎকার, ঝামেলা কিছু হয় না। কাজ করে খুব আরাম।

রিয়ার চরিত্রটা বললেন ভালবাসার মানুষকে আঁকড়ে থাকে। আপনি কি বাস্তবে এরকম?
খুব একটা মিল নেই। তবে আমি ভালবাসার মানুষদের নিয়ে খুব পজেসিভ। একটু আঁকড়ে ধরে বাঁচি তো বটেই। তবে রিয়াকে দেখে দর্শকের কিছু জায়গায় মনে হবে যেন চরিত্রটা একটু একসেন্ট্রিক। ওর একটা শেড আছে যেটা কিছু কিছু জায়গায় বেরিয়ে পড়ে। আমি কিন্তু একদমই তেমন নই।

চার বছর আগের দেব-কোয়েলের রসায়ন কি এবারও দর্শক দেখতে পাবেন?
দর্শকের ভালবাসার জন্যেই আমাদের দু’জনের এতগুলো ব্লকবাস্টার হয়েছে। আশা করছি, এবারও তাঁদের ভাল লাগবে। তবে আমাদের রসায়নটা আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত। এই প্রথম আমি আর দেব স্বামী-স্ত্রীয়ের ভূমিকায়। এতদিন শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই ছিলাম। সেটা অন্য রকমের মজা। কিন্তু এবারের সম্পর্কটায় মাধুর্য বেশি।

দেব-কোয়েল না দেব-রুক্মিণী, কোন জুটি নিয়ে দর্শক বেশি এক্সাইটেড?
রুক্মিণীকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি। ও কিন্তু লম্বা রেসের ঘোড়া। যে কোনও কাজের আগে হোমওয়ার্ক করে। দেব-কোয়েলের জুটিটা আমি খুব একটা বুঝি না! তবে দর্শক খুব ভালবাসেন। দেব-রুক্মিণীর জুটিটা আমার ব্যক্তিগতভাবে খুব ফ্রেশ একটা জুটি মনে হয়।

পুজোয় বাড়িতেই থাকবেন নিশ্চয়ই?
অফকোর্স! সারা বছর আমার ভাইবোনদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে না তেমন। এই একটা সময় সকলে একসঙ্গে হই। একটুও সময় নষ্ট করি না আমরা! সারাদিন-সারারাত আড্ডা চলে। শুধু মাঝে একটা বিউটি ন্যাপ নিই। পুজোর দিনগুলোয় হঠাৎ ছোটবেলায় ফিরে যাওয়া যায় (হাসি)।

বিয়ের পরেও সেটা রয়েছে?
একদম এক! একটা বাড়তি সদস্য যোগ হয়েছে— রাণে। ওকেও এই পাগলামিতে সামিল করে নিই আমি। তবে ও খুব একটা হই-হট্টগোল এখনও ম্যানেজ করতে পারে না। আর কিছু বছর দিলে একদম আমাদের লেভেলে চলে আসবে (জোর হাসি...)।

দু’বছর যে কাজ করলেন না, ইন্ডাস্ট্রিটা মিস্‌ করতেন?
আমি তো বুঝতেই পারলাম না কীভাবে সময়টা কেটে গেল। যখন লোকে বলা শুরু করল, যে শেষ ছবি এক বছর আগে এসেছে, তখন বুঝলাম। তবে অনেক স্ক্রিপ্ট পড়েছিলাম। মনে হতো, সবই তো করে ফেলেছি। আসলে কোন ছোট বয়স থেকে ছবি করছি। প্রায় ৫০টা ছবি করে ফেলেছি। কোনওদিন কলেজ লাইফ উপভোগ করতে পারিনি। বন্ধুরা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরত, আর আমি ছবির স্ক্রিপ্ট পড়তাম। ওই দু’বছর তাই হ্যাংলার মতো সময় কাটিয়েছি। জঙ্গলে গিয়েছি, আমেরিকায় গিয়ে বিপজ্জনক রোলার কোস্টার রাইডগুলো চেপেছি। যা ইচ্ছে হয়েছে করেছি!

রাণেও কি এসব রাইড চাপতে পছন্দ করেন?
(হাসি...) ওকে দেখে হয়তো বোঝা যায় না, কিন্তু ও খুব স্পোর্টি। আমরা দু’জনেই খুব অ্যাডভেঞ্চারাস। তবে জীবন নিয়ে নয়। সেখানে দু’জনেই ব্যালান্সড।
n নায়িকারা ব্রেক নিলেও মানুষের বড্ড বেশি কৌতূহল। কখনও বিরক্ত লাগে?
নাহ্‌! এটা জীবনের বা কাজের একটা অংশ। ছোটবেলায় আমরাও তো সব সময় সেলিব্রিটি ম্যাগাজিন গিলতাম! সকলেরই কৌতূহল থাকে। তবে মিডিয়াকে মানুষ খুব বিশ্বাস করে। তাই একটাই জিনিস বলতে চাই, কোনও ভুলভাল গসিপের চেয়ে আসল ব্যাপারটায় ফোকাস করা উচিত।-এবেলা
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে