সোমবার, ০২ অক্টোবর, ২০১৭, ০৩:০৮:২৩

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ‘ককপিট’-এই সফল করলেন দেব

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ‘ককপিট’-এই সফল করলেন দেব

বিনোদন ডেস্ক: মাঝ-আকাশে এ পর্যন্ত উড়তে পেরেছে কি বাংলা সিনেমা? আসলে সেটা স্বপ্নতেই থমকে ছিল। প্লেনের শট তো হামেশাই থাকে। হঠাৎ হঠাৎ লন্ডন-প্যারিস-নিউইয়র্ক থেকে ফেরত আসে ডিগ্রিধারী ছেলে। ফ্লাইট উড়ে যায়। ফ্লাইট এসে ল্যান্ড করে। প্লেনের ভেতরে কী ঘটে, তাও ৩৬০০০ ফুট উপরে, সে ব্যাপারে ভাবতে বসলেই প্রোডিউসার জিজ্ঞাসা করে, ভ্রু কুঁচকেই, ‘বাজেট!’

সত্যি বলতে কী, ওই বাজেটের সিকিউরিটি চেকিং-টাই এতদিন করে উঠতে পারেনি বাংলা ছবির কোনও প্রোডিউসার। এ ব্যাপারে তাই সাহসিকতার মেডেলটা আগে দিতে হবে প্রোডিউসার দেবকে। তার পর অবশ্যই ক্যাপ্টেন দিব্যেন্দু রক্ষিতকে। তিনিই তো বাঁচালেন!

দর্শক যা পেল, তা অনবদ্য। অন্তত ছয় ছবির ছয়লাপে, সেরার স্বীকৃতি মনে মনে দর্শকই দিয়েছেন, এমনটা আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাই বলছে (ভিতরে ভিতরে রাজনৈতিক প্রক্ষেপণ যা-ই হোক না কেন!)

 ঝকঝকে সিনেমাটোগ্রাফির সঙ্গে টানটান উত্তেজনার কাহিনি দু ঘণ্টা কুড়ি মিনিটে। ইমপ্যাক্টটা অনেকটাই থ্রি-ডি স্ক্রিনের মতো প্রাঞ্জল। আর এই তৃতীয় মাত্রা যোগ করতেই ‘ককপিট’ ছবি অনেকটাই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এক কথায়, শুধু আকাশচুম্বীই নয়, অনেকটাই ভবিষ্যতের দিকে তির উঁচিয়ে আছে এই ছবি। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের বুদ্ধি আর দেবের আকাশ ছোঁয়ার সাহস, দু’টোই অক্সিজেন জুগিয়েছে এই ছবিতে।

অ্যাডভেঞ্চার এমনই তুঙ্গমাত্রায় পৌঁছেছে যে, সেটাই দর্শকের সিটবেল্ট। আটকে রাখবে সিটের সঙ্গে ছবির দৈর্ঘ জুড়ে। আসলে দর্শক এখন পর্দায় হয় ‘বাহুবলী’ দেখতে চান, নয়ত ‘সহজ পাঠের গপ্পো-’র মতো হৃদয়-ছোঁয়ার ছবি দেখতে হলে যাওয়ার প্রত্যাশা করেন। শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটির ছবি অনেকটা ধরেছেন শহুরে অডিয়েন্সের সেন্টিমেন্ট। তবুও খানিকটা শূন্যস্থান থেকেই গিয়েছিল, রিমেক ছবির বাজারে ধস নামায়। ‘ককপিট’ সেই বাণিজ্য ঘরানাতেই একটা নতুন বাঁক আনল বলা যায়। কারণ, এ ছবির আসল অনুভূতি, বিরাটত্ব আর ব্যাপ্তি কোনও ডাউনলোডেড ভার্সন এ পাবেন না। পেতেই পারেন না। সিনেমাহলে গিয়ে দেখতে বাধ্য করবে ‘ককপিট’। ঠিক যেমনটা হয়েছে বাহুবলী সিরিজের ক্ষেত্রে।

কোয়েল, রুক্মিণী, প্রিয়ঙ্কা সরকার। সুন্দরীরা অনেকটাই স্ক্রিন অধিকার করে আছেন। কিন্তু অভিনয়ে বাড়তি অতিরঞ্জন নেই। সাবলীল, সাধারণ। ‘ছায়া ও ছবি’-তে অনেকটাই মার্জিত, পরিণ অভিনয়ের ছাপ রেখেছিলেন কোয়েল। এখানে সীমিত পরিসরেও তাঁর অভিনয় ভাল লাগে। অন্য রকম স্বাদ পাওয়া যায়। একটা ফ্লাইটে যেমন নানা স্তরের যাত্রী দেখা যায়। বোঝা যায় তাদের গতিপ্রকৃতি, সেরকমই এই কাহিনিতেও সত্য। চমকে দেবেন রুক্মিণী। নতুন অভিনেত্রীর মধ্যে সব সময়েই এক স্ফুলিঙ্গের খোঁজ করেন পরিচালক। সেই তীব্রতা রুক্মিণী তাঁর পারফরম্যান্সে রাখতে পেরেছেন অনায়াসে। কোনও কোনও সময়ে এতটাই সাবলীল যে, মনে হয় অভিনয়টা তাঁর কাছে রাম্পে হাঁটার মতোই সোজা। এখন একটাই দেখার। দেবের কাটা গণ্ডির বাইরে এসে কতটা নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন তিনি! ভাল লাগে রোজা পারমিতা ও প্রিয়ঙ্কাকে।

সবশেষে, ছবিকে অন্য মাত্রা দিতে অবশ্যই পারত আরও নিখুঁত ভিএফএক্স। কল্পনার উড়ান একটু বেশিই উঁচুতে উড়ে গিয়েছে। এখনকার দর্শক ইউটিউবের দৌলতে অনেক ছবিই দেখে ফেলেছেন। জানেন নানারকমের টেকনিক্যাল দিকও। কাজেই, আরও ভাল হবে এই আশা নিয়েই তাকিয়ে থাকা সিকোয়েল বা প্রিক্যুয়েলের দিকে।
আরও ভাল করে দেখলে বুঝতে অসুবিধে হবে না যে, ভবিষ্যতে ‘ককপিট-টু’ হতেই পারে। প্রসেনজিতের  গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্সটাই এখানে তুরুপের তাস। আশা রাখি, সেই টেক-অফ আর এমার্জেন্সি ল্যান্ডিং, দু’টোই দুর্দান্ত হবে!
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/ এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে