মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর, ২০১৭, ১১:২৮:৫৯

‘বিয়ে আমি করবই, দু’টো বাচ্চা আমার চাই-ই চাই’

‘বিয়ে আমি করবই, দু’টো বাচ্চা আমার চাই-ই চাই’

বিনোদন ডেস্ক: অনেকদিন পর পুজোটা কলকাতায় কাটালেন সম্পূর্ণা লাহিড়ী। পুজোর পরেই ছবি-মুক্তি। পাশাপাশি চলছে জমাটি প্রেমও। সবকিছু নিয়েই আড্ডা দিলেন সম্পূর্ণা।

এবার পুজোয় কী করলেন বলুন?
আড্ডা মারা...ঘুমনো...ফের আড্ডা...এই করেই কাটল পুজোটা! মাঝে কিছু ঠাকুর দেখেছি। অনেকদিন পর এবার পুজোটা কলকাতায় কাটাতে পেরেছি। আমার হয়ে বন্ধুরাই সব প্ল্যান করে রেখেছিল। কোনদিন হাউসপার্টি, কোনদিন নাইট-আউট...সবটা!

পুজোয় নতুন প্রেম হল নাকি?
ধুর...সে সব তো ছোটবেলায় হতো! একবার আমারই এক বন্ধুর দাদার সঙ্গে একটা প্রেম হয়েছিল পুজোর সময়। লুকিয়ে ঘুরতে গিয়ে ধরাও পড়ে গিয়েছিলাম! প্রেমটা টিকেছিল মাস ছয়েক। আরেকবার ক্লাস টেনে পড়তে মা-বাবাকে মিথ্যে বলে নিউ এম্পায়ারে ‘ভুলভুলাইয়া’ দেখতে গিয়েছিলাম। সেটাও পুজোতেই...।

এ বছরই মাল্টিস্টারার ‘দুর্গা সহায়’ মুক্তি পেয়েছে। আবার নতুন পরিচালক অনিমেষ বসুর ছবি ‘তৃতীয়’তেও কাজ করলেন। ছবি বাছাইয়ের প্ল্যানিংটা কী রকম আপনার?
দেখুন, ‘দুর্গা সহায়’এর আগে আমি ‘অন্তর্লীন’ করেছিলাম। অরিন্দম ভট্টাচার্যের ছবি। এছাড়া বাপ্পাদার (প্রয়াত পরিচালক বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়) ছবিটাও করেছি— ‘কলকাতা ২০১২’। কবে রিলিজ করবে জানি না। ‘অন্তর্লীন’ খুবই প্রশংসিত হয়েছিল। অরিন্দমদা কিন্তু নতুন ছিলেন। ওঁর সঙ্গে শ্যুটিংয়ের আগে পর্যন্ত আমার দেখাই হয়নি। বলতে পারেন, ‘অন্তর্লীন’ করার পর থেকেই আমার নতুনদের সঙ্গে কাজ করার ভরসা আরও বেড়ে গিয়েছে। আর ‘দুর্গা সহায়’এর কাজ তো হইহই আর খাওয়া-দাওয়া করতে করতেই হয়ে গিয়েছিল...(হাসি)! যাই হোক, ইদানীং আর ছবি বাছার সময় প্রথমেই এক্সাইটেড হই না। ধীরে ধীরে চরিত্রটার মধ্যে ঢুকে পড়ি।

‘তৃতীয়’তে আপনার চরিত্রটা কী রকম?
‘তৃতীয়’ সাইকোলজিক্যাল ফিল্ম। ছবিটা করছি জেনে টুম্পাদি (সুদীপ্তা চক্রবর্তী) আমাকে ফোন করে বলেছিল, ‘এই চরিত্রটা নিয়েছিস তো সম্পূর্ণা, মন দিয়ে করিস’। ওঁর মতো একজন পারফর্মার এটা বলছে মানে আমি বুঝে গিয়েছিলাম, আমায় যথাসম্ভব প্রাণ ঢেলে কাজটা করতে হবে। আমার যে চরিত্র, তার সঙ্গে একটা ঘটনা ঘটে। তার পর থেকে মেয়েটার গোটা জার্নি নিয়েই ছবি। অনেকদিন পর মন দিয়ে করার মতো একটা কাজ পেয়েছিলাম ছবিটায়। বেশিরভাগটাই আউটডোর, পুরুলিয়ায় শ্যুট হয়েছে।

কলকাতা-মুম্বই করছেন অনেকদিন হল। ওখানে কী রকম কাজ পাচ্ছেন?
রাজপাল যাদবের সঙ্গে অনেকদিন আগে একটা হিন্দি ছবি করেছিলাম— ‘পাইড পাইপার’। অনেক ফেস্টিভ্যালে ঘুরেছে, অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে, কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পায়নি। আদৌ পাবে কি না, জানি না। রাজপালজি’র সঙ্গে আমার পরে কথা হয়েছে কয়েকবার। উনিও চান ছবিটা তাড়াতাড়ি রিলিজ করুক। পলিটিক্যাল স্যাটায়ার ছিল ‘পাইড পাইপার’। এছাড়া বেশ কয়েকটা হিন্দি আর দক্ষিণী বিজ্ঞাপনের কাজ করেছি। সামনেই একটা মালয়ালি ছবি হাতে নিয়েছি। এ মাসেই শ্যুট শুরু। তাই কোচি যাচ্ছি। ভাষাটা শিখতে হবে।

মুম্বাই না কলকাতা, কোথায় স্ট্রাগ্‌ল করাটা বেশি কঠিন?
আমি একজন শিল্পী। যেখানে সুযোগ বেশি, কাজ বেশি, সেখানে গিয়েই থাকব। এখন অনেকে বলছেন বটে যে বাংলা ছবি ইমপ্রুভ করছে, এগোচ্ছে। তবে মুম্বইতে কাজের ক্ষেত্রটা অনেক বড়। ওখান থেকে পঞ্জাবি ছবির কাস্টিং হয়, দক্ষিণী ছবির জন্য অডিশন হয়, প্রচুর বিজ্ঞাপনের সুযোগ আসে। কলকাতায় কাজের ব্যপ্তি নেই। এখানে যা কাজ করি, তাতে আমার ৫০ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও হয়তো ব্যাঙ্কে কিচ্ছু জমবে না। তাই মনে হয়েছিল, সময় থাকতে থাকতে আমায় কলকাতার বাইরে গিয়েও ট্রাই করতে হবে। সেটাই করছি।

এখানে কাজ কম বলছেন?
বলতে চাইছি, মুম্বইয়ে স্ট্রাগ্‌ল করাটা আমার কাছে কলকাতার চেয়ে সহজ। ওখানে অনেক অপশন। এখানে কার কাছে কাজ চাইব? কিছু বছর কাটানোর পর সবাই সবাইকে চিনে যায় এখানে। সেই বাঁধা-ধরা কয়েকজনই ঘুরেফিরে ছবি করছেন। তাঁরা সকলকেই চেনেন। ছবিতে নিতে হলে নেবেন, নাহলে না। কাজ পাওয়ার আসল রাস্তাটা এখানে কী, সেটা এখনও জানি না। আমার মনে হয়, পুরোটাই পরিচালক এবং প্রযোজকের মাথায় থাকে, কাকে দিয়ে কোন কাজটা করাবেন। আমি হয়তো ওঁদের মাথায় থাকি না। অথবা আমি নিজেকে নিয়ে হয়তো একটু বেশিই আশা করি। যতটা কাজ করার যোগ্য ছিলাম বা আছি, ততটা কাজ এখানে পাচ্ছি না আমি। মুম্বইয়ে অডিশন দিয়ে, শর্টলিস্ট করে সিলেকশন হয়। অনেক ফেয়ার এবং সিস্টেম্যাটিক। ওখানে প্রত্যেকদিন ঘুম থেকে ওঠার পর মোবাইলে অন্তত ১০-১২টা মেসেজ আসে অডিশনের জন্য। ভাল ভাল প্রোডাকশন হাউস থেকে। সেই সিস্টেম এখানে কোথায়?

এরপর কোনও বাংলা ছবি করছেন? কিংবা ওয়েব-সিরিজ?
আপাতত নতুন কোনও অফার পাইনি। দু’টো বাংলা ছবি আসছে সামনেই। সেগুলোর প্রচারে থাকব যতটা পারি। আর সামনে অনেকটা সময় সাউথে কাটাতে হবে আমায়, মালয়ালি ছবিটার জন্য।

‘বিগ বস্‌’এ যাওয়ার সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন কেন?
‘বিগ বস্‌’এ গিয়ে আমি নিজেকে চিনতে পেরেছি। ছোটবেলা থেকেই আমার আত্মবিশ্লেষণ করার বদভ্যাস। আমি মনে করি, প্রত্যেক মানুষকে চেনা যায় তার কমফর্ট জোন থেকে বার করে আনলে। আয়্যাম প্রাউড অফ মাইসেল্‌ফ যে, ‘বিগ বস্‌’ সেটা করার পরেও আমি স্বার্থপর বা হিংস্র হয়ে উঠিনি। বেশ কয়েকজনের দাঁতনখ বেরিয়ে আসতে দেখেছি। আবার কয়েকজনকে দেখেছি পাল্টায়নি। বিক্রম যেমন।

এখানে কাজ কম পাচ্ছেন বলছিলেন। আরও কাজ পাওয়ার চেষ্টা কীভাবে করেন?
সৃজিত মুখোপাধ্যায় আমায় একবার বলেছিলেন, ‘তুই বড্ড এক ট্র্যাকে ভাবিস। এদিক-ওদিক মাথা চলে না তোর’। আই থিংক দিস ইজ আ গ্রেট সাইড অফ মাইন, যে আমি কোনওরকম ছকবাজি করে বা কারও ক্ষতি করে কিছু হাসিল করতে যাই না। হয়তো তার জন্য অনেক কিছু পাইও না। আমার দরকারও নেই সেটার। যেটুকু আছে, তাই নিয়েই আমি খুশি।

স্বপ্নের চরিত্র আছে কিছু?
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘কালের মন্দিরা’র রট্টা যশোধরার চরিত্রটা। ক্লাস সেভনে পড়েছিলাম বইটা।

পুজোর প্রেমের গল্প তো বললেন। আর সত্যিকারের প্রেমটা?
ঋষি (চন্দ, সংগীত পরিচালক) আমার ভাল বন্ধু। তবে বিয়ের কথা এখনই কিছু ভাবিনি। তবে বিয়ে আমি করবই। দু’টো বাচ্চা আমার চাই-ই চাই। আমার মতে, কেরিয়ারের পাশাপাশি সংসার আর সন্তানও একজন নারীকে সম্পূর্ণ করে। আর আমার নামের মানেটাই তো তাই!-এবেলা
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে