শুক্রবার, ০৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১০:১৮:১০

‘ঢাকা অ্যাটাক’ আমার জীবনের গল্প: সানী সানোয়ার

‘ঢাকা অ্যাটাক’ আমার জীবনের গল্প: সানী সানোয়ার

সাদ্দিফ অভি : ঢাকা অ্যাটাক মুক্তির পঞ্চম সপ্তাহে (৩ নভেম্বর) এসেও দেশজুড়ে হাউজফুল তকমা নিয়ে শাসন করছে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মন। শুধু দেশে নয় সফলতার প্রতিধ্বনি মিলছে বিদেশের প্রেক্ষাগৃহ থেকেও।

স্বাভাবিক, সিনেমাটির গল্প, চিত্রনাট্য, নির্মাণশৈলী, বিষয় এবং সংশ্লিষ্টদের ‘ডাউন টু আর্থ’ মন্তব্য- জয় করে নিচ্ছে প্রায় সবস্তরের দর্শক-সমালোচকের মন। ফলে বছরের সবচেয়ে সফল এবং আলোচিত সিনেমার তালিকায় অলরেডি এক নম্বরে উঠে বসে আছে দীপঙ্কর দীপনের এই কাজটি।

আর সেই সফলতার বিহাইন্ড দ্য সিন-এ বসে আছেন সাদামাটা একজন পুলিশ অফিসার। নাম সানী সানোয়ার। পেশায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার। যিনি নিজের জীবনের ছোট ছোট গল্পগুলোকে একটু আধটু এদিক সেদিক করে একটি সুতোয় গেঁথে দিয়েছেন দীপনের হাতে, চিত্রনাট্যের আদলে।

বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন তার বুকে জমানো গল্পগুলো। দীপঙ্কর দীপন সেই কাগজে আঁকা চরিত্রগুলোতে প্রাণ দিয়েছেন ক্যামেরার ভাষায়।

দীপঙ্কর দীপন এবং আপনার প্রথম সিনেমা এটি। একে অপরের প্রতি ভরসার জায়গাটা কোথায় ছিল? সিনেমা তো চাট্টিখানি কথা নয়...

সানী সানোয়ার: আমাদের ভরসার জায়গাটা এরকম ছিল, যে গল্পটা তরুণ প্রজন্ম চায় সেটা আমরাও চাই। কারণ যেই ধরনের চিত্রনাট্য নিয়ে আশেপাশের দেশে সিনেমা হচ্ছে সেই গল্প আমরা পাচ্ছিলাম না। এমন ভাবনা থেকে মনে হয়েছে এখানে একটা সুযোগ আছে আমাদের। আমরা সম্মত হলাম এই ধরনের অ্যাকশন-থ্রিলার ছবি বানানো যেতে পারে।

প্রশ্ন: গল্পটি লেখার প্রক্রিয়া কেমন ছিল?

সানী সানোয়ার: আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, একটা বিষয়ের ওপর গল্পটা সাজাতে হলে অভিজ্ঞ এবং এই ক্ষেত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন একটা ব্যক্তির গল্প লাগবে। সেটা যে কোনও কিছুর ওপর হোক না কেন। সেক্ষেত্রে আমি দেখলাম তরুণরা কিংবা আমি নিজেও অ্যাকশন-থ্রিলার মুভি পছন্দ করি। যদি থ্রিলার বা অ্যাকশন কাহিনি লিখতে যাই তাহলে আমার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা এবং ঘটনাগুলোকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে দিতে পারলে হয় তো ভালো কিছু হবে।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনি পেশায় একজন পুলিশ অফিসার। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বিভাগে আপনার বিস্তর কর্মঅভিজ্ঞতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিদিনই এমন অনেক অ্যাকশন-থ্রিলার গল্পের মুখোমুখি হতে হয়। যা আপনার কাছে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়! সেটিকে আবার পর্দায় তুলে আনার আগ্রহ তৈরি হওয়ার কথা নয়।

সানী সানোয়ার: একমত। আমিও তাই মনে করতাম। কারণ, এমন আরও অনেক ভয়ঙ্কর এবং বাস্তব গল্প রয়েছে আমার জীবনে- যা স্বাভাবিক ঘটনা বলেই মনে করি। তবে সেসব ঘটনা যখন আমি অন্য পেশার বন্ধু কিংবা স্বজনদের সঙ্গে আড্ডায় শেয়ার করতাম বা এখনও করি, তখন সেই সাদামাটা গল্পগুলো আমার কাছে অসাধারণ হয়ে ধরা দেয়। মূলত সেখান থেকেই ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এর চিত্রনাট্য তৈরির উৎসাহ পাই।

প্রশ্ন: পুলিশের চাকরির পাশাপাশি গল্প লেখার সময় কিভাবে করলেন?

সানী সানোয়ার: আসলে লিখতে বেশি সময় লাগে না, সময়টা লাগে চিন্তা করতে। গল্পের কাঠামো কী হবে, শুরু এবং ধারাবাহিকতা কেমন হবে- এটা ভাবতে প্রচুর সময়ের দরকার পড়ে। অফিসের ব্যস্ততার ফাঁকে, ট্র্যাফিক জ্যামে বসে কিংবা বাসায় গিয়ে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আবার জেগে উঠে রাতে ২-১ ঘণ্টা কাজ করা বা ছুটির দিনে পুরোটা সময় বাসায় বসে বসে লেখার কাজটি শেষ করেছি। তাও প্রায় এক বছর সময় লেগেছে।

প্রশ্ন: আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং অভিজ্ঞতার বড় একটা অংশ নিশ্চয়ই আছে এই সিনেমায়।

সানী সানোয়ার: নিজের পর্যবেক্ষণ কিংবা অভিজ্ঞতা নিয়ে মানুষ যখন কিছু লিখতে যায় তখন নিজের চোখে যা দেখেছে সেগুলোই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে। যেহেতু গল্পকার আমি, আমার জীবনে যা হয়েছে, অভিযানে যা পেয়েছি বা এধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে আমি কী করবো বা কী হতে পারে সে বিষয়গুলো মূলত গল্পে চলে এসেছে।

প্রশ্ন: তা তো বটেই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ বলা যায়?

সানী সানোয়ার: এটা আসলে আমার জীবনেরই গল্প। ক্যারিয়ারের শুরুতে বিসিএস দিয়ে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের এসি হিসেবে জয়েন করলাম। তখন আমার টিম নিয়ে যেভাবে মুভ করতাম বা কাজ করতাম, ভেতরে যে দেশপ্রেম আর আবেগ ঠিক একই জিনিস আমি ‘আবিদ’ চরিত্রটির মধ্যে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।

সোজা কথায়, বাস্তবের সানী আর পর্দার আবিদ- একই মানুষ। সিনেমার আবিদ আমারই বাস্তব প্রতিচ্ছবি বলা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ইনচার্জ ছাড়াও গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করতে হতো আমাদের। আমি যখন পদোন্নতি পেয়ে এডিসি হলাম তখন অনেকগুলা ইউনিটের মধ্যে একটা ছিল বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট আর অন্যান্য টিমগুলা অপরাধ তদন্ত করতো। -বাংলা ট্রিবিউন
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে