বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ১১:৪৩:৫৩

মাহবুব আহমেদ থেকে সাদেক বাচ্চু হয়ে ওঠার গল্প

মাহবুব আহমেদ থেকে সাদেক বাচ্চু হয়ে ওঠার গল্প

বিনোদন ডেস্ক :  ঝলমলে রঙিন পর্দার খলনায়ক সাদেক বাচ্চুকে সবাই চেনেন। নায়কের চরিত্রসহ প্রায় ৫০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু এই সাদেক বাচ্চু হওয়ার গল্পটা কিন্তু সহজ নয়।

সদ্য মেট্রিক পাস করা সাদেক বাচ্চুর বাবা মারা যাওয়ার পর ভাই-বোন-মা-দাদি সহ ১১ জনের পুরো সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে কাঁধে। সেই দায়িত্ব পালন করে নিজের পড়াশোনা, অভিনয় চালিয়ে গিয়ে আজ তিনি সকলের পরিচিত সাদেক বাচ্চু।

মাহবুব আহমেদ থেকে সাদেক বাচ্চু হয়ে ওঠার গল্প ;- ১৯৬৩ সালে খেলাঘরের মাধ্যমে রেডিওতে অভিনয় শুরু। একইসাথে মঞ্চেও বিচরণ করেন। প্রথম থিয়েটার 'গণনাট্য পরিষদ।' ১৯৭২-৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যখন এদেশের সাংস্কৃতিক বলয় নতুনভাবে তৈরি হচ্ছিল, তখন যোগ দেন গ্রুপ থিয়েটারের সাথে। সে সময়ে উন্মোচন নামের একটি গ্রুপের সাথে পথ চলা। উন্মোচন ভেঙে যাওয়ার পর সম্মিলিতভাবে তৈরি করলেন 'প্রথম পদক্ষেপ।'

এই গ্রুপ্টাও একস্ময় ভেঙে যায়। কিন্তু উদ্যমী সাদেক বাচ্চু হতাশ হন না। বলেন, আমরা যারা থিয়েটারের সাথে লেগেই থাকতাম তারা হতাশ হই না। ৮৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'মতিঝিল থিয়েটার।' ৩৪ বছর আগেই প্রতিষ্ঠিত এই থিয়েটারের সাথেই এখন পর্যন্ত যুক্ত রয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ভ্যালেন্টাইন দিবসে শিল্পকলা একাডেমি'র স্টুডিও থিয়েটারে হয়ে গেল নতুন একটি প্রযোজনা।

এরই মাঝে সাদেক বাচ্চু নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। চাঁদনী চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়ে যান। যদিও ছোট পর্দার মাধ্যমে আগেই জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ৭৪ সালে প্রথম টেলিভিশনে অভিষিক্ত হন।

প্রথম নাটক ছিল 'প্রথম অঙ্গীকার নাটকটি পরিচালনা করেন আবুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। সোজন বাদিয়ার ঘাট, নকশী কাঁথার মাঠ সহ অসংখ্য নাটকে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। ঝুলিতে যুক্ত হয় প্রচুর সুপারহিট নাটক।

প্রথম চলচ্চিত্র শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'রামের সুমতি' অবলম্বনে রামের সুমতিতে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। শহীদুল আমিন ছিলেন পরিচালক। আরও একটি চলচ্চিত্রেও সুনেত্রার বিপরীতে নায়ক চরিত্রে ছিলেন কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি।

খল চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন 'সুখের সন্ধানে' চলচ্চিত্রে। শহীদুল হক খানের এই ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চন নায়ক ছিলেন। সাদেক বাচ্চু বলেন, 'এই ছবির মাধ্যমেই আমি একদম নতুন চরিত্রে আসি। হয়ে গেলাম ভিলেন। জাস্ট ভিলেন তখন।'

চলচ্চিত্রে অভিষেকের পরেও টিভি নাটকে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল এই সময়েই তিনি জিয়া আনসারীর প্রযোজনায় করেন 'জোনাকী জ্বলে' সে সময়ে বিটিভির তুমুল হিট নাটক ছিল এটি। এই নাটকের মাধ্যমে সাদেক বাচ্চুর পরিচিতি গরে ওঠে।

এখানে রাজাকার চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর সেলিম আল দ্বীনসহ অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেন। এরপরই চাঁদনী। শাবনাজ নাঈম এই জুটির ছবি'র কথা কারো অজানা নয়।

সাদেক বাচ্চুর আসল নাম মাহবুব আহমেদ সাদেক। চাঁদপুরে দেশের বাড়ি হলেও জন্ম ঢাকায়। সাদেক বাচ্চু বলেন,  এহতেশাম সাহেব চাঁদনী চলচ্চিত্রে আমার নেমপ্লেট বসিয়ে দিল 'সাদেক বাচ্চু।' সেই থেকে আমি হয়ে গেলাম সাদেক বাচ্চু। তিনি আমাকে সেটে দেখে বলেন, 'তু বাড়া বাচ্চু হ্যায় রে, তেরে নাম বাচ্চু, সাদেক বাচ্চু। সেই থেকে সাদেক বাচ্চু-ই হয়ে গেল আমার নাম।

মৌসুমী চলচ্চিত্রে 'চাচা ঢাকা কতদূর?' সাদেক বাচ্চুর এই সংলাপটি ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। রিকশা, টেম্পু, বেবিট্যাক্সির পেছনে পেছনে কমন সংলাপ লেখা। সাদেক বাচ্চু বলেন, এখনো অনেকে আমাকে দেখলে এই সংলাপটি বলেন।

টিএন্ডটি নাইট কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেন সাদেক বাচ্চু। তিনি বলেন, মেট্রিকের মাত্র তিন মাস পরে আমার বাবা মারা যায়। আমি বুঝেছি হোয়াট ইজ লাইফ! ৫টা বোন, বিধবা দাদি, ফুফুসহ ১১ জন সদস্যের পরিবার চালানো পড়াশোনা করা কি যে কষ্টের ছিল, হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। এখন আফসোস নেই। এখন আমি সুখি। তার স্ত্রীর নাম শাহনাজ জাহান।

তিনি শুধু অভিনয়ই নয়, সাথে লেখালেখিও করেন। মুক্তধারা প্রকাশনীর কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা সাদেক বাচ্চুর লেখা নাটক প্রকাশ করেছেন। পেশায় সাদেক বাচ্চু বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একজন কর্মকর্তা।

এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে