মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০১:১৭:১০

‘শ্রীদেবীকে প্রকাশ্যে মারধর করতেন শাশুড়ি’

‘শ্রীদেবীকে প্রকাশ্যে মারধর করতেন শাশুড়ি’

বিনোদন ডেস্ক : বলিউড সুপারস্টার শ্রীদেবীর মৃত্যুতে আরো একটি বোমা ফাটালেন পরিচালক রাম গোপাল বর্মা। তিনি বললেন, ‘শ্রীদেবীকে প্রকাশ্যে মারধর করতেন শাশুড়ি’। তাকে তিরস্কার করতেন ননদ। শ্রীদেবীর মৃত্যুতে তীব্র বেদনা নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ এক চিঠি লিখেছেন রাম গোপাল বর্মা। এতে তিনি এসব বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছেন। তার ওই চিঠির শিরোনাম ‘মাই লাভ লেটার টু শ্রীদেবীস ফ্যানস’।

অর্থাৎ শ্রীদেবীর ভক্তদের কাছে আমার প্রেমপত্র। দীর্ঘ ওই চিঠিটি সরাসরি তুলে ধরেছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস। এখানে ওই চিঠিটির অনুবাদ তুলে ধরা হলো:নিজের সঙ্গে যুক্তিতর্কের লড়াই করলাম। লড়াই করলাম এ নিয়ে  যে, কিছু নামের উল্লেখ করা ঠিক হবে কিনা। কিন্তু দৃঢ়তার সঙ্গে আমার মনে হলো, অন্যে যেকারো চেয়ে ভক্তদের কাছে শ্রীদেবী বড়। তাই তাদের সব সত্য জানা উচিত।

শ্রীদেবীর ভক্তদের কাছে আমার প্রেমপত্র
---রাম গোপাল বর্মা
হ্যাঁ, আপনাদের মতো লাখ লাখ মানুষের মতো আমিও বিশ্বাস করি, তিনি (শ্রীদেবী) ছিলেন সবচেয়ে সুন্দরী। তিনি ছিলেন সব সময়ই কমনীয়। আমরা সবাই জানি, দেশে সবচেয়ে উজ্বল সুপারস্টার ছিলেন তিনি। ২০ বছরের বেশি সময় তিনি বড় পর্দায় প্রধান নায়িকা হিসেবে বিচরণ করেছেন। কিন্তু এসব হলো একটি কাহিনীর অংশবিশেষ। যাহোক, শ্রীদেবীর মৃত্যুতে আমি মর্মাহত। বেদনাহত।  জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে যে রহস্য তা কতটা অপ্রত্যাশিত, নিষ্ঠুর ও ঠুনকো তা রুক্ষ্মতার সঙ্গে আরো একবার স্মরণ করিয়ে দিলে।

তার মৃত্যুর পরে, আপনাদের অনেকের মতো নির্দিষ্টভাবে আমিও বলি, বেশির ভাগ মানুষ তাকে নিয়ে কি বলতেন। তারা বলতেন তিনি কত সুন্দরী ছিলেন। কি বড় মাপের অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। তার মৃত্যু এসব মানুষের ওপর কি প্রভাব ফেলে গেছে।

এ জন্যই আমার সুযোগ হয়েছিল তার সঙ্গে দুটি ছবি করার মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ হওয়ার। এর একটি হলো ‘ক্ষণাক্ষণম’ ও অন্যটি হলো ‘গোবিন্দা গোবিন্দা’। বাইরের দুনিয়ায় যেমনটা হয় তার থেকে একজন প্রকৃত অভিনেত্রী, সেলিব্রেটির জনীন কেমন হয় তার একটি ক্লাসিক উদাহরণ হলো শ্রীদেবীর জীবন।
অনেকের কাছে শ্রীদেবীর জীবন ছিল যথার্থ।

তার সুন্দর মুখশ্রী, চমৎকার মেধাবী মানুষ, দৃশ্যত তার একটি স্থিতিশীল পরিবার ছিল দুটি সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে। বাইরে থেকে দেখে মনে হতো সব কিছুই চলছিল বাঞ্ছনীয় ও প্রত্যাশিতভাবে। কিন্তু শ্রীদেবী কি বাস্তবে অত্যন্ত সুখী একজন মানুষ ছিলেন? তিনি কি খুব সুখী জীবন যাপন করেছেন?
তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর থেকে আমি তার জীবন সম্পর্কে জানি।

তার পিতার মৃত্যুর পর আমি তাকে দেখেছি। দেখেছি কিভাবে আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখির মতো তার জীবন। এটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। আমি দেখেছি, এরপরই ওই মুক্ত পাখি কিভাবে একটি খাঁচায় বন্দি হয়ে পড়ে। তাকে তার মা ভীষণভাবে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেন।

ওই সময়ে অভিনেতাদের পারিশ্রমিক দেয়া হতো কালো টাকার হিসাবে। আয়কর ধরা হবে এই ভয়ে তার পিতা তার বন্ধু, আত্মীয় ও সবাইকে বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তারা সবাই প্রতারণা করেছে। এ অবস্থায় তার মা বেশ কিছু সম্পদের খাতে ভুল বিনিয়োগ করেন।  সব কিছু মিলে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয় যাতে শ্রীদেবী প্রায় কপর্দকশূণ্য হয়ে পড়েন।

তখনই তার জীবনে আসেন বনি কাপুর। ওই সময় তিনি (বনি কাপুর) ছিলেন বিশাল মাপের ঋণে। তিনি তাকে যা দিয়েছিলেন তা ছিল কান্না।
শ্রীদেবীর মার ব্রেনে অপারেশন করানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু সেই অপারেশন ভুল হয়। এতে তিনি মানসিক রোগি হয়ে যান। এমনই পথ পরিক্রমায় তার (শ্রীদেবীর) ছোটবোন শ্রীলতা গোপনে পালিয়ে যান।

তিনি বিয়ে করেন তাদের এক প্রতিবেশীর ছেলেকে। মারা যাওয়ার আগে মা সব সম্পত্তি দিয়ে যান শ্রীদেবীর নামে। ফলে শ্রীদেবীর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন শ্রীলতা। ওই মামলায় তিনি দাবি করেন, তার মার মস্তিষ্কবিকৃতি ছিল। তিনি সজ্ঞানে উইলে স্বাক্ষর করেন নি।

সুতরাং এর প্রভাবে বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ যে নারীকে প্রত্যাশা করে তিনি একা হয়ে পড়েন। কপর্দকশূন্য হয়ে পড়েন। তার পাশে শুধু থাকেন এক বনি কাপুর।

কিন্তু বনির মা শ্রীদেবীকে বাসায় কাজের মানুষ হিসেবে দেখতে থাকেন। লোকজনের সামনে প্রকাশ্যে তার পেটে ঘুষি মেরেছেন। এ ঘটনা ঘটেছে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে। অভিযোগ, বনি কাপুরের প্রথম স্ত্রী মোনার সঙ্গে তিনি খারাপ আচরণ করেছেন। শুধু ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবির স্বল্প সময় বাদে এই পুরোটা সময় শ্রদেবী ছিলেন চরম মাত্রায় অসুখী একজন নারী। তার সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত।

তার ব্যক্তিগত জীবনে নানা চড়াই উৎরাই জীবনের ওপর গভীর রেখাপাত করে। এর বেশির ভাগই কষ্টের বা কুৎসিত। তা স্পর্শকাতর মানসিকতায় দাগ কেটেছে এই সুপারস্টারের। তাই তিনি কখনো শান্তিতে ছিলেন না।

শৈশব থেকেই তিনি আর্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। জীবনে এতসব ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে গেছেন যে, জীবন তাকে কখনো স্বাভাবিক গতিতে বেড়ে উঠতে সুযোগ দেয় নি। বাহ্যিক শান্তির চেয়ে তার অন্তরের অবস্থা ছিল অত্যন্ত উদ্বিগ্নতায় ভরা। এটাই তাকে তার জীবন সম্পর্কে পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে।

বহু মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সুন্দরী। কিন্তু তিনি কি কখনো ভাবতে পেরেছেন যে, তিনি সুন্দরী ছিলেন? হ্যাঁ, তিনি ভেবেছিলেন। কিন্তু প্রতিজন নায়িকা বা অভিনেত্রীর সবচেয়ে বড় ভয় হলো তার বয়স। তিনি এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। অনেক বছর তিনি মাঝে মাঝেই কসমেটিক সার্জারি করিয়ে যাচ্ছিলেন। তার এই সার্জারির চিহ্ন পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।

সব সময় তিনি ঠিকপথে থাকতেন না। কারণ, তিনি তার চারপাশে মনস্তাত্ত্বিক এক দেয়াল তৈরি করেছিলেন। তার ভিতরে কি চলছে কেউ জেনে যেতে পারে এটা নিয়ে তিনি সব সময় থাকতেন শঙ্কিত অবস্থায়। তার অনিরাপত্তা কিসে এটা নিয়ে কেউ যদি জানতে চাইতেন তাতেই তিনি পীড়িত বোধ করতেন।

তিনি খুব ছোট বয়সেই খ্যাতি কুড়িয়েছেন। এটা তার দোষ নয়। কিন্তু এই খ্যাতি তাকে কখনোই স্বাধীন হওয়ার সুযোগ দেয় নি। তিনি প্রকৃতপক্ষে যা হতে পারতেন তাকে তা হতে দেয় নি। তিনি প্রকৃতপক্ষে যা হতে চেয়েছিলেন তা হতে দেয় নি।

তাকে মেকাপ পরতে হতো। সেটা ক্যামেরার সামনে হোক বা না হোক। একই সঙ্গে ক্যামেরার পিছনে তার প্রকৃত জীবনের সত্য লুকানোর জন্য তাকে মানসিক একরকম মেকাপ নিতে হতো।

তিনি অব্যাহতভাবে পরিচালিত হয়েছেন তার পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, তার স্বামীর নির্দেশনা মতো। কখনো কখনো তাকে চলতে হয়েছে  নিজের সন্তানদের ইচ্ছায়। তিনি শঙ্কিত ছিলেন নিজের মেয়েদের নিয়ে। শঙ্কা ছিল যে, তার মেয়েদের মেনে নেয়া হবে কিনা, যেমনটা হয় বেশির ভাগ তারকা দম্পতির ক্ষেত্রে।

শ্রীদেবী প্রকৃতপক্ষে এমন একটি শিশু, যিনি একজন নারীর অবয়ব ধরা দেহের ভিতর বন্দি হয়ে পড়েছিলেন। তিনি একজন সাদাসিধে মানুষ। তবে সন্দেহবাতিক। কারণ, তার তিক্ত অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা খুব ভাল অনুভূতির সমাবেশ নয়। তার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহকে একপাশে রেখে আমি সাধামাটাভাবে বলতে পারি না ‘রেস্ট ইন পিস’ বা তার আত্মা শান্তি পাক, যেটা আমরা বলে থাকি মানুষ মারা গেলে।

কিন্তু আমি তার ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষেই বলতে চাই, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করিÑ তিনি মারা গেছেন। তাই তার জীবনে শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো তিনি সত্যিকারভাবে শান্তি পান।

তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ক্যামেরার সামনে তাকে আমি শুধু একবারই শান্তিতে দেখেছিলাম। সেটা হলো একশন এন্ড কাট-এর মাঝে। এর কারণ ছিল, তিনি কঠিন বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। নিজের একটি ফ্যান্টাসি দুনিয়ায় বিচরণ করেছিলেন।
সেজন্যই আমি এখন নিশ্চিত তার আত্মা চিরদিন শান্তি পাক, কারণ তাকে যা দেয়া হয়েছে, যা তাকে অনেক বেদনাহত করেছে, তা থেকে তিনি এখন শেষ পর্যন্ত অনেক অনেক দূরে।

আরআইপি শ্রীদেবী, কিন্তু আমি নিশ্চিত করে আপনাকে বলতে পারি, বিশ্ব আপনাকে এই শান্তিটুকু দেবে না। আমরা আপনার ভক্তিরা ও আপনার নিকটজনেরা আপনাকে শুধুই কষ্ট দিয়েছি। প্রতিটি ইস্যুতে আপনাকে আমরা কষ্ট দিয়েছি। যা আপনি পেয়ে এসেছেন সেই শৈশব থেকে।

বিনিময়ে আপনি আমাদেরকে দিয়েছে আনন্দ আর সন্তুষ্টি। হ্যাঁ, এটা একটা ভাল বিনিময় নয়। কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, আপনাকে সেই বিনিময় দেয়ার ক্ষেত্রে। এখন আমার দৃষ্টিতে দেখি, আপনি স্বর্গের উদ্যানে আপনার মতো করে সত্যিকার শান্তি ও সুখে একটি মুক্ত পাখির মতো উড়ছেন।

আমি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমি এখন এটা বিশ্বাস করি। কারণ, আমরা ভক্তরা পুনর্জন্মে আরও একবার আপনাকে চাই। সেই সময়ে আমরা আমাদেরকে সংশোধন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আপনাকে পাওয়ার জন্য আমাদের মতো করে চেষ্টা করবো।

আমরা সবাই সত্যিকার অর্থে আপনাকে ভালবাসি। তাই দয়া করে আমাদেরকে আর একটি সুযোগ দিন।  আমি এভাবে লিখে যেতে পারবো। কিন্তু আর আমি আমার কান্নাকে থামাতে পারছি না.....আরজিভি (রাম গোপাল বর্মা)।

এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে