বিনোদন ডেস্ক : এখনও শ্রীদেবীর দেহ দেশে ফেরেনি! তা হলে কি তদন্তে অন্য কিছুর ইঙ্গিত পেয়েছেন গোয়েন্দারা? না হলে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেও কেন দেহ ছাড়া হল না? প্রশ্নটা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় বলেই মনে করছেন ভারতের পুলিশের সাবেক কর্তাব্যক্তিদের একাংশ।
গত তিন দিন ধরে খবরটা একটু একটু করে প্রায় পুরোটাই পাল্টে গিয়েছে। প্রথমে শোনা যাচ্ছিল, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে অভিনেত্রী শ্রীদেবীর। দু’দিন পর সোমবার জানা যায়, হার্ট অ্যাটাক নয়, জলে ডুবে মৃত্যু। দুবাই পুলিশের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডলে বা ফেসবুক পেজে তেমনটাই লেখা হয়েছে। সঙ্গে অচৈতন্য শব্দটাও ছিল।
দুবাইয়ের সংবাদপত্র খালিজ টাইমস তাদের ওয়েবসাইটে শ্রীদেবীর ডেথ সার্টিফিকেটের ফোটোকপির ছবি আপলোড করেছে। সেটা সোশ্যাল মিডিয়াতেও ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা এই ফোটোকপি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ‘ড্রাউনিং’ বানান।
তার মতে, এত বড় ভুল কোনও দফতর করবে বলে মনে হয় না। ডেথ সার্টিফিকেট এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তো মৃতের দেহের সঙ্গেই তার পরিবারের হাতে দেয় পুলিশ। এ ক্ষেত্রে দেহ হস্তান্তর হয়নি। কাজেই ওই সমস্ত নথি বাইরে আসারও কথা নয়। কী ভাবে এল এত গোপন তথ্য? প্রশ্ন উঠছে।
হোটেলের যে ঘরে অভিনেত্রী ছিলেন, তারই বাথরুমের বাথটাবের জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এখানেও তিনটি প্রশ্ন তুলছেন সাবেক পুলিশ কর্তাদের একাংশ। তাদের মতে, প্রথমত, এক জন যদি বাথরুমে গিয়ে হঠাৎই অচৈতন্য হয়ে পড়েন, তা হলে হয় তিনি উপুড় হয়ে পড়বেন অথবা চিৎ হয়ে। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে মৃতের শরীরে কোনও রকমের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেই খবর।
তা হলে ধরে নিতে হবে, তিনি উপুড় হয়ে জলে মুখ গুঁজে পড়েছিলেন। আর তাতেই শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, সেই পড়ে যাওয়াটা তো খুব একটা বিন্যস্ত হবে না। প্রায় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গোটা শরীরটাই বাথটাবের ভিতরেই পড়ল! দ্বিতীয়ত, তিনি হয়তো বাথটাবেই শুয়ে ছিলেন জলের ভিতর। তখনই অচৈতন্য হয়েছেন।
এবং জলের ভিতর শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, শুয়ে থাকলেও মাথাটা তো বাথটাবে হেলান দেওয়া অবস্থায় থাকে। তৃতীয়ত, কেউ তাকে বাথটাবে শুইয়ে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল? সাবেক আইপিএস প্রসূন মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘খবরে যা পড়ছি, তাতে দুবাই তো পুলিশ রীতিমতো তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনায় কোথাও অসঙ্গতি রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।’
আরও এক ধোঁয়াশার কথা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন। তাদের প্রশ্ন, বনি কাপূর তখন ঠিক কোথায় ছিলেন? এক এক সময় এক এক রকম জানা যাচ্ছে। কখনও শোনা যাচ্ছে, তিনি স্ত্রীকে ডিনারে নিয়ে যাবেন বলে ঘরে অপেক্ষা করছিলেন। অনেক ক্ষণ ধরে স্ত্রী বেরোচ্ছেন না বলে তিনি নাকি দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন।
তার পর তা ভেঙে গিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখেন, বাথটাবে স্ত্রী শুয়ে আছেন, অচৈতন্য অবস্থায়। আবার কখনও বলা হচ্ছে, হোটেলের এক রুমসার্ভিস কর্মী জল দিতে গিয়ে শ্রীদেবীর সাড়া না পেয়ে দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষ দরজা ভেঙে শ্রীদেবীর দেহ বাথটাব থেকে উদ্ধার করেন। কোনটা সত্যি?
ময়নাতদন্ত হয়ে যাওয়ার পরেও কেন দেহ এ দেশে নিয়ে আসার ছাড়পত্র মিলছে না? প্রসূনবাবুর কথায়, ‘আমার মনে হয়, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেও তদন্তকারীরা পারিপার্শ্বিক দিকগুলো ভাল করে খতিয়ে দেখছেন।’ তার মতে, সে কারণেই হোটেলের ওই ফ্লোর, ঘর— সবটা সিল করে দেওয়া হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসলে গোয়েন্দারা দেখতে চাইছেন, কে কে ওই দু’দিনে ওই ঘরে গিয়েছেন। কখন গিয়েছেন। বনি কাপূরও বা কখন এসেছিলেন। কখন ঘর থেকে বার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইত্যাদি।
প্রশ্ন উঠছে, বনি কাপূরের ভূমিকা নিয়েও। দেশে ফিরে ফের কেন আবার দুবাই উড়ে গেলেন তিনি? স্ত্রীকে না জানিয়ে তিনি নাকি ‘সারপ্রাইজ’ দিতে চেয়েছিলেন। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশ্ন, শ্রীদেবী কেন একা থেকে গেলেন দুবাইতে? কেন ওই দু’দিন তাকে এক বারের জন্যও বাইরে দেখা গেল না? উত্তরগুলো তাঁদের কাছেও কেমন ধোঁয়াশামাখা।
শোনা যাচ্ছে, শ্রীদেবীর রক্তে নাকি অ্যালকোহলের নমুনা মিলেছে। ধরা যাক, তিনি ওই সন্ধ্যায় মদ্যপান করেছিলেন। নিশ্চয়ই ওই দিনই জীবনে প্রথম বার মদ্যপান করেছিলেন এমনটা নয়। অচৈতন্য হয়ে যাওয়ার মতো পান করেছিলেন কি? সে ক্ষেত্রে ওই অবস্থায় বাথরুমে গেলেন কী ভাবে? আর বনিই বা তাকে ছাড়লেন কেন? জবাব মেলাতে পারছেন না সাবেক পুলিশ অফিসারদের একাংশ।
এমটিনিউজ/এসএস