শুক্রবার, ০২ মার্চ, ২০১৮, ০১:৪২:৪০

শুভেচ্ছা বন্ধ করে দেওয়াতেই আজ আমি এখানে : আবদুন নূর তুষার

শুভেচ্ছা বন্ধ করে দেওয়াতেই আজ আমি এখানে : আবদুন নূর তুষার

আলী আফতাব : গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করছে নাগরিক টিভি। আর এই টিভি চ্যানেলটির সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুন নূর তুষার। বর্তমান টেলিভিশন মিডিয়ার বাজার, জনপ্রিয়তা, সাফল্য, ব্যর্থতা, মান—নানা দিক বিশ্লেষণ করেছেন দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে।

নাগরিক টেলিভিশন নামটি কেন?

নাগরিক টেলিভিশন নামটি পছন্দ করেছেন আমাদের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ও তার স্ত্রী রুবানা হক। নাগরিক শব্দের অর্থ নগরবাসী নয়, সিটিজেন অর্থে—এটি ছিল আমাদের ভাবনা। একটি গণমাধ্যম কিন্তু বৃহৎ অর্থে নাগরিকদের একটি বিশাল প্লাটফর্ম। কারণ আমরা মানুষের কথা বলি, মানুষকে বিনোদন দিই, মানুষকে আনন্দ দিই। আমরা যা করি মানুষকে লক্ষ করেই করি। সে কারণে এটি সিটিজেনদের টিভি চ্যানেল। তাই এই টেলিভিশনটির নাম নাগরিক টিভি।

এত এত টেলিভিশন চ্যানেলের ভিড়ে ‘নাগরিক টিভি’ নিজেকে আলাদা করবে কীভাবে?

আসলে আমরা কেউ কারও থেকে আলাদা হয় নই। আমাদের প্রতিটি মানুষের দুটি হাত, দুটি পা, দুটি চোখ আছে। প্রতিটি টেলিভিশন স্টেশন কিন্তু প্রায় একই ধরনের যন্ত্র দিয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করে। আলাদা আসলে আমরা কোথায় হই? চিন্তা দিয়ে। আমরা চেষ্টা করব আমাদের নিজেদের চিন্তা দিয়ে এই টিভি চ্যানেলটি সাজাতে। তখনই আমরা অন্যদের থেকে আলাদা হব। আমাদের চেষ্টা থাকবে নতুন নতুন চিন্তা দিয়ে অন্যদের থেকে আলাদা হতে।

কিন্তু যে হারে টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না জনপ্রিয়তা। এর কারণ কি?

যত টেলিভিশন হবে, সব টেলিভিশনই জনপ্রিয় হবে বা সমান জনপ্রিয় হবে এমন ভাবা অযৌক্তিক। আর এজন্য কোনো প্রতিযোগিতার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। প্রতিযোগিতা তো থাকবেই, এর মানে এই নয়, কাউকে পেছনে ফেলে সামনে চলে যাওয়া। আমি প্রতিযোগিতা মানে বুঝি নিজেদের সক্ষমতা দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। তখনই প্রমাণ হয়ে যাবে কে জনপ্রিয়, কে জনপ্রিয় নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। কোনো ব্র্যান্ড যেমন একদিনেই ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে না। কোনো জনপ্রিয় মানুষ যেমন একদিনে জনপ্রিয় হন না, তার জ্ঞান, অভিজ্ঞতায় তিনি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেন, তেমনি প্রতিষ্ঠানও তাই। আমাদের জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত বিশ্বের সঙ্গে।

আগে টেলিভিশন মেধা বিকাশে অনেক অনুষ্ঠান নির্মাণ করত। বিজ্ঞানের অনুষ্ঠান, কুইজের অনুষ্ঠান হতো। এখন প্রতিভা অন্বেষণ মানেই গানের অনুষ্ঠান অথবা কোনো সুন্দরী বা সুদর্শনকে খোঁজা। আপনি নিজেও কুইজের অনুষ্ঠান করেছেন। মেধা বিকাশে ব্যক্তিগতভাবে কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা?

এ ধরনের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। এর কারণ হলো—আমরা অতি দ্রুত টেলিভিশনগুলো নিয়ে বিশ্বের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি। যার ফলে দর্শকের সংখ্যা বেড়েছে। আপনি যে সময়টার কথা বলছেন, সে সময় টেলিভিশনটা দেখা যেত শহরে, নগর অঞ্চলের মধ্যভিত্ত পরিবার পর্যন্ত। সে সব পরিবারে শিক্ষার হার ছিল বেশি। এখন যখন আমরা টেলিভিশন নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছি। সেখানে সবাই কিন্তু শিক্ষিত নয়। এখন টেলিভিশনগুলো বৃহত্তর জনগণের জন্য অনুষ্ঠান তৈরি করে। সে ক্ষেত্রে এখন কুইজের অনুষ্ঠান থেকে সিনেমার গানের অনুষ্ঠান অনেক বেশি জনপ্রিয় হবে, খুবই স্বাভাবিক। যখন আমাদের সমাজে শিক্ষার হার আরও বাড়বে তখন দেখবেন এ ধরনের অনুষ্ঠান আবার শুরু হয়ে যাবে। আর একটি জিনিস হয়, টেলিভিশনগুলোকেও চেষ্টা করতে হবে আমি দর্শকদের কিছু বিষয়ে অভ্যস্ত করে তুলব। যদি নাও পারি তবু এ ধরনের একটি-দুটি অনুষ্ঠান ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। সব কিছুর জন্য চেষ্টা করতে হবে।

দেশে ভালো মানের উপস্থাপক তৈরি হচ্ছে না কেন?

না, আমি বলব না যে, দেশে ভালো মানের প্রেজেন্টার একেবারেই নেই। এখন অনেকই ভালো কাজ করছেন। এখনো দেশে বহু ভালো মানের প্রেজেন্টার রয়েছেন। তবে সামনের দিনগুলোতে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্জনে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। সে জন্য এ পেশায় জড়িতদের আরও প্রফেশনাল হতে হবে। আসলাম আর অটোকিউ দেখে অনুষ্ঠান উপস্থাপন করে চলে গেলাম—এমনটা করে ভালো উপস্থাপক হওয়া সম্ভব নয়। প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। যতটা সম্ভব জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। দেশ এবং বিশ্বসেরা প্রেজেন্টারদের ফলো করাও যেতে পারে।

আপনি হতে চেয়েছিলেন একজন পেশাদার চিকিৎসক, এখন আপনি টেলিভিশন পারসোনালিটি। আফসোস হয় কখনো?

আমি ছোটবেলা থেকে যা করেছি নিজের তাগিদে। আমি ছোটবেলা থেকেই চাইতাম বড় হয়ে আমি একজন ডাক্তার হব। যখন আমি পেশাগত জগতে গেলাম, দেখলাম যে সরকারি চাকরিতে নানা ধরনের তদবির, নানা ধরনের অনিয়ম, যেগুলোর সঙ্গে আমি মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। তখন আমি টেলিভিশনে ফিরে আসি। আমি কিন্তু ছোটবেলা থেকেই টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। যখন আমি ঠিক করলাম আমি আর ডাক্তারি করব না, তখনই টেলিভিশনকে আমার আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিলাম।

একটি প্রশ্ন এখনো মানুষের মনে। আজ থেকে ১৭ বছর আগে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘শুভেচ্ছা’ কেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

এটি একটি বিশাল গল্প। ‘শুভেচ্ছা’ আসলে বন্ধ হয়নি, এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কোনো এক বিশেষ মহলের চাপে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠান যখন জনপ্রিয় হয় তার যেমন বন্ধু থাকে, তেমনি শক্রও থাকে। অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে আমার উপকার হয়েছে। শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়াতেই আজ আমি এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। বন্ধ না করলে আমি হয়তো এখনো শুভেচ্ছা অনুষ্ঠান তৈরি করতাম।

এই চ্যানেলে আপনি কী কোনো শো করবেন শুভেচ্ছার মতো?
শুভেচ্ছার মতো অনুষ্ঠান করলে তো এটি শুভেচ্ছা হয়ে যাবে। করতেও পারি, আবার নাও পারি। এ মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। -বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে