সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০, ০৯:২০:৩৯

যে পরিস্থিতিতে আত্মহ'ত্যা করেছিলেন সালমান শাহ : জানালো পিবিআই

যে পরিস্থিতিতে আত্মহ'ত্যা করেছিলেন সালমান শাহ : জানালো পিবিআই

বিনোদন ডেস্ক : ৯০ দশকের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর মৃ'ত্যুর র'হ'স্য উ'দঘা'টনের দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির দাবি, সালমান শাহকে হ'ত্যা করা হয়নি। ব্যক্তিগত জীবনে নানা ঝামে'লা থাকায় তিনি আ'ত্মহ'ত্যা করেছেন। সালমানের প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্য জীবন, পারিবারিক ও অভিনয় জীবনে টা'নাপো'ড়েন চলছিল। 

তাই আবেগপ্রবণ সালমান আ'ত্মহ'ত্যা করেন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পিবিআইর প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সালমান শাহ মৃ'ত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হ'ত্যা মামলার ত'দ'ন্তের অ'গ্রগ'তি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, ''সালমান শাহ আ'ত্মহ'ত্যা করেছেন। তাকে খু'ন করা হয়নি। আমরা ত'দ'ন্তে আ'ত্মহ'ত্যার প্রমাণ পেয়েছি।''

ঘটনার আগের দিন : ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সালমান শাহ'র স্ত্রী সামিরা হঠাৎ এফডিসির ডাবিং থিয়েটারে যান। সেখানে রেজা হাসমত পরিচালিত সালমান শাহ ও শাবনূর অভিনীত সিনেমার ডাবিং চলছিল। সামিরা সেখানে গিয়ে দুজনকে অ'ন্তর'ঙ্গ অবস্থায় দেখে রা'গারা'গি করেন। সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে বাসায় চলে আসেন সামিরা। প্রোডাকশন বয় আবুল হোসেন তাকে অনুসরণ করে পেছনে পেছনে আসেন। তবে সামিরাকে তিনি থামাতে পারেননি।

ঘটনার আগের রাতে 'শাবনূরের ফোন' : এফডিসি থেকে সামিরা চলে যাওয়ার পর ডাবিং ব'ন্ধ রেখে সালমানও বাসায় ফেরেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে সালামন শাহ'র সিটিসেলে একটি ফোন আসে। সালমান ফোন ধ'রে চিৎ'কার করে বলতে থাকেন, তাকে যেন আর ফোন না দেয়। কথা বলতে বলতে তিনি বাথরুমে চলে যান। বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর সামিরার সঙ্গে ঝ'গ'ড়া হয় তার।

সামিরা গভীর রাতে বাসা ছাড়েন : রাত ১২টার দিকে সালমানের সিটিসেলে ফের ফোন আসে। সামিরা বাসা থেকে বের হয়ে নিচে চলে যান। এসময় সালমান বাসার ইন্টারকমে ফোন দিয়ে নিরা'পত্তাকর্মীদের নির্দে'শ দেন সামিরা যেন বাসা থেকে বের না হতে পারে। সামিরার পেছনে পেছনে সালমানের ব্যক্তিগত সহকারি আবুল হোসেনও যান। বাসার নিরা'পত্তাকর্মী ও আবুল হোসেন সামিরাকে বুঝিয়ে ওপরে নিয়ে আসেন। বাসায় ফিরে সামিরা কা'ন্নাকা'টি করেন।

সালমান ফোন ভেঙে ফেলেন : রাত আনুমানিক সোয়া ১২টার দিকে সালমানের সিটিসেলে ফের শাবনূরের ফোন আসে। সালমান উত্তে'জিত হয়ে তার সিটিসেল ফোনটি আ'ছড়ে ভে'ঙে ফেলেন। এমনকী সেসময় তিনি শাবনূরের কাছ থেকে উপহার পাওয়া একটি ফ্যানও ভে'ঙে ফেলেন। পরদিন সকালে গৃহপরিচারিকা মনোয়ারা বেগম ভা'ঙা ফ্যান ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেন। সামিরা ও সালমানের মধ্যে রাতে আরও ঝ'গড়া হয়।

সালমানের বাবা সকালে তার বাসায় আসলেও ছেলের সঙ্গে দেখা হয়নি : সালমানের বাবা কমর উদ্দিন ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালের সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টায় তার বাসায় আসেন। সামিরা তাকে চা-নাস্তা খেতে দেন। তবে সালমান শাহ ঘুমাচ্ছেন জেনে আর তাকে তুলেননি। তিনি নিজের বাসায় চলে যান।

ঘুম থেকে উঠে গৃহপরিচারিকার কাছে দুই মগ পানি চান সালমান: সালমান শাহ ঘুম থেকে উঠে তার পানি খাওয়ার মগ নিয়ে রান্নাঘরে যান। রান্নাঘরে গিয়ে তিনি গৃহপরিচারিকা মনোয়ারা বেগমের কাছে পানি চান। প্রথমে একমগ পানি শেষ করে ফের আবার এক মগ পানি চান তিনি। সালমান কখনও কোনও কিছু কারও কাছে চেয়ে না খেলেও সেদিন রান্না ঘরে গিয়ে পানি চাওয়ায় গৃহপরিচারিকা অ'বা'ক হন।

মালি জাকির তিন বাসের বকেয়া বেতন চেয়েছিল সালমানের কাছে : পানি পান করার কিছুক্ষণ পর তার বাসার টবের গাছ দেখাশোনা করা মালি জাকির হোসেন আসে। সালমান নিজেই দরজা খুলে দেন। জাকির সালমানকে জানায়, তার তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। টাকাটা দেবেন কিনা? জাকির দুইশ টাকা বেতনে কাজ করতেন। সালমান তাকে কিছু না বলেই ভেতরে চলে যান।

বাসায় কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার নির্দেশ দেন সালমান : বাসার ইন্টারকমে নিরা'পত্তাকর্মী দেলোয়ার হোসেনকে ফোন দিয়ে সালমান নির্দে'শ দেন, তার বাসায় কাউকে যেন ঢুকতে না দেওয়া হয়।

৬ সেপ্টেম্বর সকালে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ছিলেন সালমান : মালি জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা শেষ করে ভেতরে গিয়ে বেডরুমের দরজা খুলে তার স্ত্রী সামিরার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন সালমান। এসময় সামিরা তাকে জিজ্ঞাস করেছিলেন, কি দেখো? সালমান শাহ কোনও উত্তর না দিয়ে বাথরুমে চলে যান। বাথরুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিং রুমে যান সালমান। গিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন।

সালমানের পালক ছেলে ওমর : ডলি নামে একজন গৃহপরিচারিকা ছিল সালমানের বাসায়। তার ছেলের নাম ওমর। সালমানকে বাবা বলে ডাকতো সে। ওমরকে পড়াশোনা করে বড় করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সালমান। ঘটনার দিন সকালে ডলি বেগম ওমরকে গোসল করান। কিন্তু তার জামা কাপড় ছিল সালমানের ড্রেসিং রুমে। ওমর 'বাবা-বাবা' করে ডাকলেও ভেতর থেকে দরজা খুলছিলেন না সালমান। বিষয়টি সামিরাকে জানান ডলি। সামিরা চাবি নিয়ে আসেন।

দরজা খুলেই দেখেন সালমান ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিলেন : সালমান ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন, এই খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন স্ত্রী সামিরা, গৃহপরিচারিকা মনোয়ারা বেগম, ডলি ও সালমানের ব্যক্তিগত সহকারি আবুল হোসেন এবং ওমর। সামিরা দরজা খুলেই দেখতে পান ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছেন সালমান। তিনি চিৎকার দিয়ে সালমানের পা জড়িয়ে ধরেন। ডলি রান্নাঘর থেকে বটি নিয়ে এসে অ্যালুমিনিয়ামের মই বেয়ে ফাঁসের রশি কে'টে দেয়। সালমানকে বেডরুমে নিয়ে আসা হয়।

আবুল হোসেন ও মনোয়ারা তার প্যান্ট পরিবর্তন করে একটি থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরিয়ে দেন। তারা তেল গরম করে হাতে পায়ে ঘ'ষতে থাকেন এবং মাথায় পানি দেন। বাসার সবার চিৎ'কার শুনে ওপরে উঠে আসে দারোয়ান দেলোয়ার। খবর দেওয়া হলে সালমানের বাবা কমর উদ্দিন, মা নীলা চৌধুরী এবং সালমানের ছোটভাই আসেন। নীলা চৌধুরী এ সময় সামিরাকে লাথি মেরে বলেন, ''তুই আমার ছেলেকে খু'ন করেছিস।''  

উপস্থিত সবাই তাকে শান্ত করে নিচে নিয়ে যান। এসময় সালমানের ছোট ভাইও সামিরাকে ব'কাঝ'কা করেন। তবে সালমানের বাবা সামিরার প্রতি সহানভূতিশীল ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সালমানকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ কেস বলে সেখানকার চিকিৎসকরা সালমানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরা'মর্শ দেন। এরপর সালমানকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃ'ত ঘোষণা করেন।

যে কারণে সিলেটে যাননি সামিরা : সালমানের বড় মামা আলমগীর কুমকুম সামিরাকে সিলেট নিতে চেয়েছিলেন। সামিরার পরিবারও রাজি ছিল। কিন্তু সালমানের বাবা সামিরার কানে কানে বলেছিলেন, ''তুমি সিলেটে যেও না। গেলে তোমাকে তারা মা'রধ'র করতে পারে।''

১৯৯০ সালে দুইবার সালমান আ'ত্মহ'ত্যার চেষ্টা করেছিলেন : পিবিআই সাক্ষীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সালমান ১৯৯০ সালে দুইবার আ'ত্মহ'ত্যার চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমবার ঘুমের ওষুধ খেয়ে এবং দ্বিতীয় বার স্যাভলন পান করে।

যেভাবে আত্মহ'ত্যার প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই : ঘটনা'স্থলে উপস্থিত ২ গৃহপরিচারিকা, নিরা'পত্তা কর্মী, বাড়ির ম্যানেজার সালমানের ব্যক্তিগত সহকারী, সামিরাসহ মোট ১০ জনের জ'বা'নব'ন্দি গ্রহণ করা হয়। এদের প্রত্যেকের জবা'নব'ন্দিতেই সালমান শাহ আত্মহ'ত্যা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া মেডিক্যাল রিপোর্ট, সুরতহাল প্রতিবেদন, ভিসেরা রিপোর্ট, গলার দা'গ পর্যালোচনা করে এটি আ'ত্মহ'ত্যা বলে প্রমাণিত হয়। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে