বিনোদন ডেস্ক : ইরফান খানের কাছের বন্ধুরা সকলেই একবাক্যে মেনে নেয়- ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে আজ পর্যন্ত ইরফানের আর মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে লড়া'ই করে গিয়েছে একজন, অভিনেতার সহধর্মিনী, তার বেস্ট ফ্রেন্ড, সবচেয়ে বড় সমালোচক সুতপা শিকদার।
ইরফান খান নিজের মুখে স্বী'কার করে নিয়েছিলেন তার সব লড়া'ইয়ের রসদ, তার সব শ'ক্তির উৎস তার স্ত্রী সুতপা শিকদার। আজীবন, ভালো-খা'রাপ সব সময় ইরফান খানের হাতটা শ'ক্ত করে ধ'রে রেখেছিলেন এই বাঙালি কন্যা। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ইরফানের ক্যানসারে আক্রা'ন্ত হওয়ার খবর সামনে আসার পর থেকে ২০২০ সালে ২৯ এপ্রিল, দীর্ঘ দু বছর ইরফান আর মৃত্যুর মধ্যে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইরফান পত্নী সুতপা শিকদার।
তিনি সবরকমভাবে সা'হস জুগিয়েছিলেন ইরফানকে। তারকা পত্নী-যিনি বরাবর অন্তরালে থাকতেই ভালোবাসতেন। সালটা ১৯৮৪ ন্যাশান্যাল স্কুল অফ ড্রামার শিক্ষীর্থী দুজনেই। প্রথম দেখাতেই এই বাঙালি কন্যার প্রেমে পড়েছিলেন ইরফান। দিল্লিতে জন্ম সুতপার। অভিনয় নয় লেখার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল সুতপার। শুরু থেকেই বন্ধুত্বটা জমে উঠেছিল। সেটা প্রেম পর্যন্ত গড়াতে বেশি সময় নেয়নি।
কেরিয়ারের নিশ্চয়তা ছিল না ইরফানের। দুজনেই ঠিক করেছিলেন আগে কেরিয়ারে মন দেবেন, এখনই বিয়ে নয়। এক দশক পর ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, কোনও জাঁকজমক পূর্ন অনুষ্ঠান নয় আইনি মতে বিয়ের পর্ব সারেন। প্রেম, আর বিশ্বাসই ছিল তাদের এই সম্পর্কের আধার। ধর্ম সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ইরফান খানের সবচেয়ে ভালো বন্ধু এবং সবচেয়ে বড় স'মালো'চক তার স্ত্রী সুতপা।
একসঙ্গে কাজও করেছেন দুজনে। ১৯৯৩ সালের টেলিভিশন সিরিজ বাত বনেগি আপনির চিত্রনাট্যকার ছিলেন সুতপা, যেখানে অভিনয় করেন ইরফান। মদারি (২০১৫) ছবির ক্রিয়েটিভ টিমেরও অংশ ছিলেন সুতপা। ২০১৯ সালে এপ্রিলে দেশে ফেরার পরেও খুব বেশি সাংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হননি ইরফান খান। কিন্তু যখনই কথা বলেছেন শোনা গিয়েছে স্ত্রী প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা আর সম্মানের কথা।
মুম্বাই মিররকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ইরফান বলেছিলেন, ''সুতপাকে নিয়ে কী আর বলব? ২৪ ঘন্টা ও রয়েছে, আমার পাশে, আমার সঙ্গে। আমি যদি বাঁচার আরও একটা সুযোগ পাই, তাহলে সেই জীবনের একমাত্র কারণ সুতপা।'' ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ইরফানের নিউরো এন্ডোক্রিন টিউমারে আক্রা'ন্ত হওয়ার খবর প্রথম সামনে আনেন তার স্ত্রী। বলেন, আমার প্রিয় বন্ধু আমার পার্টনার বীর যো'দ্ধার মতো লড়া'ই করছে। অত্যন্ত সাহস এবং শক্তি দিয়ে এই মা'রণরোগের মো'কাবিলা করছে সে।
এরপর লন্ডনে ইরফানকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান সুতপা। প্রায় এক বছর সেদেশেই ছিলেন তারা। তাদের সেই লড়া'ই নিয়ে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। ২০১৯-এর এপ্রিলে দেশে ফেরেন ইরফান খান। সেই সময় সুতপা ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছিলেন- ''এটা ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে লম্বা এক বছর।'' ইরফান খান ও সুতপা শিকদারে দুই পুত্র- বাবিল খান ও অয়ন খান।
বুধবার মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে শুধু ইরফানের লড়া'ই থামল না, লড়া'ই শেষ করলেন সুতপাও। গত ৩৫ বছর ধ'রে যে হাতটা শ'ক্ত করে ধ'রে রেখেছিলেন তিনি। সেই হাতটা অবশেষে ছেড়ে দিলেন। পার্টনার, বেস্ট ফ্রেন্ডকে 'করিব করিব সিঙ্গল' রেখে চলে গেলেন ইরফান খান।