‘মোদি’ ম্যাজিকে বাজিমাত 'বাজিরাও মাস্তানি'
শতরুপা বসু : 'বাজিরাও মাস্তানি'র বাজিমাত করার নেপথ্যে একটা বড় ফ্যাক্টর অঞ্জু মোদী৷ তার হাত ধরেই ইতিহাস গড়ে উঠেছে রূপোলি পর্দায়৷ ওস্তাদের মার শেষ রাতে৷ বছর শেষে সেটাই প্রমাণ করল 'বাজিরাও মাস্তানি'৷
সঞ্জয় লীলা বনশালি-দীপিকা পাডুকোন-রণবীর সিং ত্রিকোন যে আবার নিঃশব্দে বিস্ফোরণটি ঘটিয়ে ফেলেছেন তার জলজ্যান্ত প্রমাণ সব শুকনো স্ট্যাটিকটিকস পেরিয়ে মোহিত দর্শকের রিপোর্ট কার্ড৷ হবে নাই বা কেন? সঞ্জয় এই ছবি নিজের মধ্যে রেখেছিলেন ১২ বছর৷
সেই স্বপ্নকে পর্দায় যেমন মূর্ত করেছেন দীপিকা-রণবীর-প্রিয়াঙ্কা, তেমনই ডিজাইনার অঞ্জু মোদী, যাঁর টানা দু'বছরের নিরন্তর রিসার্চ আর পড়াশানার ফল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে চরিত্রদের সাজে, ব্যক্তিত্বে৷ সঞ্জয় তাঁকে 'গোলিও কা রাসলীলা - রাম-লীলা'য় এনেছিলেন৷ বলিউডের জার্নি সেই শুরু৷
বলছেন অঞ্জু, 'আসলে 'গোলিও কা রাসলীলা - রাম-লীলা' করে প্রচুর অ্যাপ্রিসিয়েশন পেয়েছিলাম৷ এখানে তো বটেই, গ্লোবাল মার্কেটেও৷ আমার ওপর সঞ্জয় বিশাস আর আত্মবিশ্বাস রেখেছিল৷ তাই এই 'ড্রিম প্রজেক্ট'-এ কাজ করবার চ্যালেঞ্জটাও নিয়ে নিই৷ এটা আমার কাছে এটা একটা লাইফটাইম অপরচুনিটি৷
যে তিনটে প্রধান চরিত্র আছে - রণবীর, দীপিকা আর প্রিয়াঙ্কা - তারা ব্যক্তিগতভাবে এতটাই পারফেক্ট যে ওদের সঙ্গে কাজ করাটা গর্বের ব্যাপার৷ প্রায় বছর দুয়েকের কঠিন পরিশ্রম আর নিরন্তর রিসার্চের পর করেছি ছবিটা৷ পুনে, নাসিক, মহারাষ্ট্রর বিভিন্ন গ্রাম, দুর্গ, রাজপ্রাসাদ ঘুরে জোগাড় করেছি আঠারশ শতাব্দির তথ্য, তাঁতিদের সঙ্গে থেকে বোঝার চেষ্টা করেছি ওই সময়কার 'ফিল', ফ্যাব্রিক আর কাট৷ মাহারাষ্ট্রে একটি দুর্গ আছে যেখান থেকে মারাঠারা একটা যুদ্ধও হারেনি৷
সেখানেও গিয়েছি৷ তিনটে চরিত্র তিন রকম৷ এই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সঙ্গে ছিল আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ - এ রকম চরিত্র সাজাতে গিয়ে একটা প্রবণতা থাকে সাজটাকে লার্জার দ্যান লাইফ আর 'বলিউডি' করে ফেলতে৷ সেই প্রবৃত্তিকে লাগাম দিতে হয়েছে৷ তবে সঞ্জয় যেরকম ফ্রেম বা চরিত্র ভিস্যুয়ালাইজ করেছে, আমার কস্টিউম সেগুলোতে 'অ্যাড-অন' করেছে৷
কারণ, যে এফেক্টটা হয়েছে সেটা পুরোটা মিলিয়েই৷ তা ছাড়া, নিজেকে চরিত্রদের মধ্যে বসিয়েছি৷ তাদের অনুভূতি, রোম্যান্স, টানাপোড়েনগুলো নিজের মধ্যে নিয়ে চরিত্রগুলোকে বোঝার চেষ্টা করেছি৷ সেইমতো ডিজাইন করেছি৷ আর সবক'টা পোশাকই চরিত্রের মুডের সঙ্গে মানিয়ে তৈরি করেছি৷
রণবীর সিং (পেশোয়া বাজি রাও): রণবীর এমনিতেই পাওয়ারফুল অভিনেতা৷ তার ওপর চরিত্রটাও রয়্যাল আর শক্তিশালী যোদ্ধার৷ সেই অনুযায়ী বর্ম, আংরাখা, ধুতি বানিয়েছি৷ সমস্ত হ্যান্ডলুম ফ্যাব্রিক আর খাদির পোশাক নিয়ে সেগুলোকে ডেভেলপ করেছি৷ অ্যান্টিক বর্ডার, ব্রোকেড, ভেলভেট, কোলপুরি স্টাইলে লেদার বুটস, হেলমেট - পুরোটাই হাতে করে সেই সময়কার মতো ডেভেলপ করা হয়েছে৷
দীপিকা পাডুকোন (মাস্তানি): মাস্তানি চরিত্রটাকে বইতে খুব একটা পাওয়া যায় না৷ চরিত্রটাকে ছেঁচে বের করে তৈরি করতে হয়েছে৷ পোশাক আর গয়নার রেফারেন্স নিয়েছি ২০০ বছরের পুরোনো পেন্টিং, বই আর আর্ট গ্যালারি থেকে৷ একটা পরিপূর্ণ চরিত্র মাস্তানি - যে অসাধারণ সুন্দরী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বীর যোদ্ধা, অপূর্ব নর্তকী৷ সঙ্গে একটা স্বতন্ত্র মন আছে তার৷ এত অ্যাকমপ্লিশড যে একটা মিস্টিসিজম আছে চরিত্রর মধ্যে৷
আসলে দীপিকার মধ্যেও এই ব্যাপারটা আছে৷ যখন ও স্ক্রিনে থাকে অন্য কারও দিকে চোখ যায় না৷ এমনকি সঞ্জয়ও এই কথা বলে৷ ওর সৌন্দর্য ও এত সুন্দর ক্যারি করে! তাই ওর মাস্তানিকে আমি ভারতীয় কোনও পাশাক দিইনি৷ কাট থেকে রং - পুরোটাই পার্শিয়ান ধাঁচে করা৷ ওর পোশাকে প্রচুর লেয়ারিং আছে৷ রঙের ক্ষেত্রে পাউডার ব্লু, ব্লাশ পিঙ্ক, ব্ল্যাক, ম্যাট গোল্ডেন ব্যবহার করেছি৷ ছেলে কোলে তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করবার সময় দিয়েছি ডার্ক চকোলেট ব্রাউন৷ কুর্তি, দোপাট্টা, শারারা - পোশাকের বেস ছিল শিফন, লেস, নরম মসলিন, বেনারসি৷ দোপাট্টার ওপর ছিল পিওর গোটার কাজ৷ তার ওপর পার্শিয়ান প্রিন্টস আর সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারির কাজ৷ জুয়েলারির ক্ষেত্রে সঞ্জয় বলেছিল টিপিক্যাল চাঁদবালি চায় না৷ তাই সেই সময়কার নিজাম স্টাইলবুক মেনে গয়না বানিয়েছি৷ সমস্ত গয়না খাঁটি সোনা আর মুক্তোর৷ বহু কোটি টাকার ব্যাপার৷ অবশ্যই স্পনসর করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত চারদিকে সিকিওরিটি গার্ড নিয়ে শ্যুটিংটা করাটা ছিল খুব অসুবিধের৷ দীপিকার কাঁধ-ছোঁয়া লম্বা মুক্তোর কানের দুলটাই প্রথম বানিয়েছিলাম৷ সেটা দিয়েই লুক টেস্ট হয়েছিল৷ যতটা লম্বা, ততটা ভারীও বানাতে পারিনি৷ কারণ, দীপিকার কানের লতি এত নরম যে ছিঁড়ে যেত ওটার ভারে৷ এই সমস্ত নানা জটিলতার মধ্যেই কাজ করতে হয়েছে৷
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া (কাশিবাঈ) : কাশিবাঈ-এর ডিজাইন প্যালেট মাস্তানির থেকে একেবারে উল্টো৷ কাশিবাঈ একইসঙ্গে স্বাধিনচেতা, আদুরে আর জেদি৷ প্রিয়াঙ্কাও নিজেও তাই৷ কাশিবাঈ আবার সাংঘাতিক লয়্যালও৷ স্বামীর ভালো চেয়ে নিজেকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়৷ ওর ইমোশন মিলিয়ে আমি কালার প্যালেট তৈরি করেছি৷
প্রথম দিকে, ও যখন ভীষণ খুশি থাকে, তখন রঙিন কালারে মুড়ে রাখে নিজেকে - ব্রাইট হলুদ, পিঙ্ক৷ আস্তে আস্তে সেই রং ফিকে হতে থাকে৷ পরের দিকে যত ওর এক্সপ্রেশন বদলাতে থাকে, তত বদলে যায় রঙের ব্যবহার৷ হালকা সবুজ, নীল পরে কাশিবাঈ৷ এক জায়গায় দেখবেন সে শুধু একটা মঙ্গলসূত্র আর চুলে সামান্য গয়না পরে৷ মসলিনের সঙ্গে সঙ্গে জরি-দেওয়া ন'হাত পৈঠনি শাড়ি পরিয়েছি ওকে৷ -ইন্ডিয়া টাইমস
৩ জানুয়ারি,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসএস/এসবি
�