প্রসেনজিৎ, দেব ও যিশুকে অপমান, অসভ্যতা ক্ষোভ
অগ্নি পান্ডে: যার মস্তিষ্কপ্রসূত বেঙ্গল সেলিব্রিটি লিগ, ম্যাচ জেতা সত্ত্বেও, ম্যাচের নায়ক হওয়া সত্ত্বেও কাঁদতে কাঁদতে কিশোর ভারতী ছাড়তে হল তাকে। তিনি যিশু সেনগুপ্ত। যাকে সবাই এক ডাকে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ নামে চেনেন, সেই প্রসেনজিৎও স্টেডিয়াম ছাড়লেন একরাশ ক্ষোভ নিয়ে।
গাড়িতে উঠে রীতিমতো কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলেন, ‘তিরিশ বছর ধরে পরিশ্রম করে অনেক সম্মান অর্জন করেছি। তারপর আজ যা ঘটল, তারপর মনে হচ্ছে এটা আমার জায়গা নয়।’ শনিবার গভীর রাতে প্রসেনজিৎ নিজের বাড়িতে ডেকে নিলেন মেদিনীপুর মাইটিসের কর্ণধার দেব–কে। এই প্রতিবেদনের সময়ও রীতিমতো বৈঠক চলছে। প্রসেনজিৎ, দেবের সঙ্গে ছিলেন সস্ত্রীক যিশুও। যা আভাস, তাতে খুব ঘটা করে চলতে থাকা বেঙ্গল সেলিব্রিটি লিগ মাঝপথেই বন্ধের মুখে।
কিন্তু কেন? কিছু মানুষের মদ খেয়ে বেলেল্লাপনার কারণেই। শনিবার সন্ধেয় লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে পুরুলিয়া প্যান্থার্স ৫ উইকেটে হারিয়েছে জলপাইগুড়ি রয়্যালসকে। ৩২ রান করে ম্যাচের সেরা পুরুলিয়া প্যান্থার্সের অধিনায়ক যিশু সেনগুপ্ত। পুরুলিয়ার ইনিংসের একটি চারকে ঘিরেই যাবতীয় বিতর্ক। টিভি রিপ্লেতে চার দেখা গেলেও মাঠের আম্পায়াররা দিতে চাননি। এই নিয়ে বাদানুবাদ শুরু হয় দু’পক্ষের ক্রিকেটারদের মধ্যেই।
দলবল নিয়ে ঢুকে পড়েন জলপাইগুড়ির কোচ, বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার পুলক দাস। মাঠে ঢুকে পড়েন যিশু সেনগুপ্তও। তৃতীয় আম্পায়ার রিপ্লে দেখে চারের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর বাদানুবাদ তুঙ্গে ওঠে। যিশুর স্ত্রী নীলাঞ্জনা সেনগুপ্তর সামনেই অকথ্য গালিগালাজ শুরু করেন জলপাইগুড়ির কিছু ক্রিকেটার। পুরস্কার বিতরণীতেও যায়নি জলপাইগুড়ি রয়্যালস। হঠাৎই মাঠে ঢুকে চূড়ান্ত অসভ্যতা শুরু করেন জলপাইগুড়ি রয়্যালসের কর্ণধার তথা প্রিয়া সিনেমার মালিক অরিজিৎ দত্ত।
অভিযোগ, তিনি মত্ত অবস্থায় ছিলেন। তখন ম্যাচের সেরার পুরস্কার দেওয়া হচ্ছিল যিশুকে। একদিকে রাখা কঁাচের বাক্সের ভেতর থেকে ট্রফি বার করে তিনি তা তুলে দেন যিশুর হাতে। বলেন, তোমরাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছ। গোটা ঘটনাই ঘটে পুরুলিয়া প্যান্থার্সের দুই কর্ণধার সত্যম রায়চৌধুরি এবং প্রসেনজিতের সামনে। এই অসভ্যতাকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেন জলপাইগুড়ি রয়্যালসের সদস্য, অভিনেতা দিগন্ত। চূড়ান্ত টিপ্পনী ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন যিশু ও নীলাঞ্জনাকে উদ্দেশ্য করে। যা সহ্য করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন নীলাঞ্জনা। দলবল নিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান প্রসেনজিৎ।
চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমি বলছি এখানে দাঁড়িয়েই, এই টুর্নামেন্ট আর হবে না। চূড়ান্ত অশান্তি, চূড়ান্ত নোংরামো, দুর্ব্যবহার দেখলাম। একটা চ্যানেলে এই টুর্নামেন্ট সরাসরি দেখানো হচ্ছে। আমরা কী বার্তা দিলাম সাধারণ মানুষকে? আমি তো বটেই, আমার দলও এই নোংরামোর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে না। বিহ্বল যিশুর চোখেও তখন জল। তার কথায়, ‘আমিই জিতব, এই মানসিকতা নেই। খুব পরিশ্রম করে এই টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলাম। কিন্তু আজ যা হল, সেটা আমার প্রাপ্য ছিল না।’
প্রসেনজিৎকে উদ্দেশ্য করে নীলাঞ্জনাও বলেন, ‘বুম্বাদা, এই টুর্নামেন্ট বন্ধ করে দাও, এটা চলতে পারে না।’ এই সব যখন চলছে, হঠাৎই হুঁশ ফেরে অরিজিৎ দত্তর। তিনি এসে ক্ষমা চান প্রসেনজিতের কাছে। কিন্তু প্রসেনজিতের রাগ কমানো যাচ্ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে কিছু হবে না, যিশুর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় লিগের ম্যাচ দেখতে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু এতটাই বিরক্ত এবং বিধ্বস্ত লাগছিল প্রসেনজিৎকে যে, তিনি বলেই ফেলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী এলেও, আমি আসব না। আমরা তো প্রথম ম্যাচে দেবের দলের কাছে হেরেছিলাম, কিন্তু এরকম আচরণ তো করিনি! দেবকে আমি বুকে টেনে বলেছিলাম, তোরা দারুণ খেলেছিস। কিন্তু আজ এ কী অসভ্যতা। ইন্ডাস্ট্রিতে কি আমরা এই সব শিখিয়েছি।’
দৃশ্যতই হতাশ সত্যম রায়চৌধুরিও। বললেন, ‘ক্রিকেট মাঠের রুচির সঙ্গে এটা খাপ খায় না। এ কী দেখলাম!’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে দেখে তখন জলপাইগুড়ি রয়্যালসের কিছু ক্রিকেটার শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন প্রসেনজিৎকে। কিন্তু আবার বিপত্তি। বর্ধমান ব্লাস্টারের কর্ণধার কৌস্তভ রায়ও হম্বিতম্বি শুরু করেন প্রসেনজিতের ওপর। কৌস্তভও নাকি মত্ত ছিলেন। বলেন, ‘তোমরা আর দেবের দল ফাইনাল খেলবে, এটা ঠিক হয়েই আছে। আম্পায়ারদের তেমনই নির্দেশ দেওয়া আছে।’ প্রসেনজিৎ তখন পাল্টা বলে ওঠেন, ‘আমি আয়োজক নই, একটা টিমের মালিক মাত্র। কিন্তু এ আর সহ্য করা যাচ্ছে না।’ গাড়িতে উঠে পড়েন তিনি। ফের বলে ওঠেন, ‘আমি তো থাকবই না। সত্যমদাও নিশ্চয় থাকবেন না।’ ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত বারোটা। স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। বেঙ্গল সেলিব্রিটি লিগ এখন সত্যিই বিশবাঁও জলে।
৩ জানুয়ারি,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসএস/এসবি
�