আমির বিতর্কে চাপের মুখে বিজেপির গোমর ফাঁস!
বিনোদন ডেস্ক : আমির খান টাকা ছাড়াই ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’-র বিজ্ঞাপন করতেন! আমিরকে সরিয়ে যিনি দেশের পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হবেন, তিনিও কি টাকা ছাড়াই বিজ্ঞাপন করবেন?
এমন গুগলির মুখে যে পড়তে হবে, তা আশাই করেননি ভারতের পর্যটন সচিব বিনোদ জুৎসি। ভারতের পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সেই প্রশ্নই উঠল। তাকে কেন্দ্র করেই কংগ্রেস-সিপিএমের সাংসদরা মিলে বিজেপিকে কোণঠাসা করলেন। আক্রমণের মুখে বিজেপি সাংসদরা বলে বসলেন, আমির খান ‘দেশদ্রোহী’। তিনি দেশকে অপমান করেছেন। তাকে বের করে দিয়ে উচিৎ কাজই হয়েছে।
দু’দিন আগে ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটন অধিদপ্তর ঘোষণা করে, আমির খানকে আর ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’-র বিজ্ঞাপনে দেখা যাবে না। এরপরেই প্রশ্ন ওঠে, অসহিষ্ণুতা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেই কি পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের আসন খোয়াতে হল আমির খানকে! কারণ সম্প্রতি আমির বলেছিলেন, দেশে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। তার জেরে আতঙ্কিত আমিরের স্ত্রী অন্য দেশে চলে যাওয়ার কথাও ভেবেছেন।
শুক্রবার পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সরকারকে চেপে ধরতে কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতারা আগে থেকেই তৈরি ছিলেন। সূত্রের খবর, বৈঠকে পর্যটন সচিব বিনোদ জুৎসি হাজির হতেই কংগ্রেসের কুমারী সেলজা বলেন, ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়ার বিজ্ঞাপনের বিষয়ে আলোকপাত করুন। এরপরেই সিপিএমের সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, এ দেশে পর্যটনের জন্য আমির খান টাকা ছাড়াই বিজ্ঞাপন করতেন। এরপর যিনি বিজ্ঞাপনের মুখ হবেন, তিনিও কি টাকা ছাড়াই কাজ করবেন? সেলজাও তাকে জোরালো সমর্থন করেন। প্রথমে সচিব ‘আমাকে খোঁজ নিতে হবে’, ‘এটা আজকের বিষয় নয়’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও কংগ্রেস-সিপিএম নেতারা তাকে চেপে ধরেন। কংগ্রেসের কে সি ভেনুগোপাল বলেন, ঋতব্রতর প্রশ্নর উত্তর দিতেই হবে।
বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী মহেশ শর্মা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, পর্যটনের প্রচারের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। ওই সংস্থাই আমির খানকে বেছে নিয়েছিলেন। সরকার বাছেনি। এখন ওই সংস্থার সঙ্গে সরকারের চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে আমিরও বিজ্ঞাপনে থাকছেন না। শুক্রবার স্থায়ী কমিটিকে প্রশ্নের মুখে পড়ে পর্যটন সচিবও সেই একই যুক্তি দেন। তাতে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে, এবার যাকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হবে, তাকে কে বাছবেন? সরকার না বেসরকারি বিজ্ঞাপন সংস্থা?
বিপদ বুঝে মুখ খোলেন বিজেপির অভিনেতা-সাংসদ মনোজ তিওয়ারি। তিনি বলেন, আমির দেশদ্রোহী। তিনি দেশকে অপমান করেছেন। তাকে বিজ্ঞাপন থেকে সরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়েছে। মনোজকে সমর্থন করতে এগিয়ে আসেন আরেক বিজেপি সাংসদ রাম চরিত্র নিষাদ। তাতে ঋতব্রত পাল্টা যুক্তি দেন, কে দেশদ্রোহী আর কে নয়, তা স্থায়ী কমিটি ঠিক করবে না। আমির বলেছেন, তিনি টাকা ছাড়াই সরকারি বিজ্ঞাপন করেছেন। তার বদলে যে বিজ্ঞাপন করবেন, তাকে কে বাছবে? তিনিও টাকা ছাড়াই বিজ্ঞাপন করবে কি না?
আমিরকে নিয়ে যখন এই বাকযুদ্ধ চলছে, তখন বিজেপির সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা ‘খামোশ’ হয়েই বসেছিলেন। দলের কাজে ‘অসন্তুষ্ট’ শত্রঘ্ন বিজেপিকে কংগ্রেস-সিপিএমের জোড়া আক্রমণের মুখে পড়তে দেখে শুধু মিটিমিটি হেসেছেন। মুখ খোলেননি তৃণমূল সাংসদ দশরথ তিরকে-ও। কমিটির চেয়ারম্যান কে ডি সিংহ অবশ্য পর্যটন সচিবকে সাংসদদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেছেন। কিন্তু তিনি বৈঠকে উত্তর দিতে না পারায় দশ দিনের মধ্যে পর্যটন মন্ত্রনালয়কে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সরকারের একটি সূত্রের দাবি, আমির-কাণ্ড নিয়ে এই বিতর্কের জেরে নড়ে বসেছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরও। প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্র আমির খান তথা বিজ্ঞাপন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে পর্যটন মন্ত্রনালয়ের রিপোর্ট চেয়েছেন। আরেকটি সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, এমন কোনও রিপোর্ট চাওয়া হয়নি। কারণ আপাতত বিতর্ক ধামাচাপা দেওয়াই সরকারের উদ্দেশ্য।
৯ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি