বিনোদন ডেস্ক : রাজধানীর ব্যস্ততম সিনেমা হল গুলির মধ্য একটি কাকরাইলে রাজমনি সিনেমা হল। চলছে রাত ৬ টার শো। পরী মনি ও সায়মন জুটির ‘পুড়ে যায় মন’ চলছে। নাচ, গানে ভরপুর সিনেমা। চলছে তো চলছেই। দর্শকদের টু-শব্দটি নেই।
ভাবলাম ঘটনাটা কী? এমন সিনেমা আর একটা দর্শকও হাততালি দিল না, পরী মনিকে দেখেও একটা শীর্ষ দেয় না কেন কেউ? ডানে বামে সামনে পেছনে চেয়ারগুলো দেখে বুঝলাম- এই শ্মশানে সিনেমা দেখতে আসাটাই ভুল হইছে।
গোটা হলজুড়ে দর্শক মাত্র ৭ জন! হলের আসন ৪৫০। এর চেয়ে তো ঢাকা শহরের মেস বাড়িতেও অনেক বেশি লোক একসঙ্গে বসে হিন্দি সিনেমা দেখে। আর সেটাই বা কেন বলছি, বস্তিগুলোতে ১৪/১৬ ইঞ্চি রঙিন টিভিতে বাংলা সিনেমা চলে, ভরপুর দর্শক সেখানে।
ম্যানেজারকে না পেয়ে কর্মচারী কামাল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে বললেন, ‘ভাই কি আর কই। লোক নাই। নাইট শো হইলে আগে দেখতাম মানুষ টিকিট পাইতো না। এখন ৭ জনে শো-চলে। সবাই তো এখন ফোনেই সিনেমা দেখে।’
কথা সত্য। ফোনে এখন সবই পাওয়া যাচ্ছে। আগে গ্রামে ভিসিআর এনে ছেলেরা রাত জেগে সিনেমা দেখতো। দিনের বেলায় টিকিট কেটে দেখতে আসতো মেয়েরা। এমনকি রাত গভীর হলে ভলিউম কমিয়ে চলতো ফিল্ম। কিন্তু এখন এসব কিছুই মিলছে চার পাঁচ ইঞ্চির পর্দায়।
কথা হলো সিনেমা দেখতে আসা সোহেলের সঙ্গে। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বেশ কিছুদিন ধরেই কয়েকজন কলিগকে বলছিলেন একসঙ্গে সিনেমা দেখবেন। অনেক দিন হলে সিনেমা দেখেন না। কিন্তু কেউই আগ্রহ দেখায়নি। তাই একা একাই চলে এসেছেন।
এতো আগ্রহ নিয়ে এসে পেলেন লজ্জাজনক অভিজ্ঞতা। পুরো হলে লোক নেই, কোন চিল্লাফাল্লা নেই। এ কোন সিনেমা হল। তিনি বলেন, ‘আমি তো ভাবছি আমার সঙ্গে কেউ আসে নাই তাতে কি। হলভরা দর্শক থাকলে সেটা পুষিয়ে নেয়া যাবে। কিন্তু এসে দেখলাম হাহাকার। সিনেমার আসল মজাটাই পেলাম না।’
তারপরও রাতের বেলা ছুটির দিনগুলোতে যারা সিনেমা দেখতে আসেন তারা মূলত কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষ। নিম্ন আয়ের এ মানুষগুলো যা আয় করেন তা জমানোর পাশাপাশি কিছুটা বাঁচিয়ে সিনেমা হলে আসেন। আর দিনের বেলা যারা সিনেমা দেখতে আসেন তাদের অধিকাংশই ছাত্রছাত্রী। এ দিয়েই বেঁচে আছে দেশের সিনেমা হলগুলো। -বাংলামেইল
৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস