সাইমুম সাদ : ২০১৫ সালের শুরুটা বেশ ঝকঝকে ছিলো। ভালোই চলছিলো দিতির দিনকাল। নিজের হাতে সংসার সামলাতেন। পাশাপাশি টুকটাক নাটকে কাজ করতেন। জীবনটাও ছিলো রুটিনমাফিক। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে খুব একটা আমলে নেননি। কিন্তু পরে শরীর বেশ বিদ্রোহ শুরু করে। গেলেন ডাক্তারের কাছে। রিপোর্ট ঘেঁটে ডাক্তাররা জানালেন, মস্তিস্কে ক্যান্সার! সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। কিন্তু মনোবল হারাননি। আশায় ছিলেন সুস্থ হবেন। অনেক আশা নিয়েই চিকিৎসা শুরু করলেন।
কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় উড়াল দিলেন চেন্নাইয়ে। ভর্তি হলেন মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজিতে। ছায়ার মতো সঙ্গে ছিলেন ছেলে লামিয়া ও দীপ্ত। শুরু হলো দিতির ভিন্ন এক জীবন। রুটিন ধরে ধরে চলতো কেমোথেরাপি। কেমোথেরাপি বড্ড বেশি যন্ত্রণা দিতো তাকে। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় একসময় দিতির চুল ঝরা শুরু হয়। দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী ফেসবুকে জানিয়েছিলেন, ‘চুল যখন ঝরে পড়তে শুরু করলো , তখন তিনি সেগুলো একটি ব্যাগে জমাতে শুরু করলেন। চুল নিয়ে তার কোন চিন্তায় ছিলোনা। চিকিৎসকরা মাঝে মধ্যে চমকে যেতেন।’
কিন্তু কেমো ছাড়া তো আর উপায় নেই। আর হাসপাতালটাকে খুব একঘেয়ে লাগতো তার। চার দেয়ালে বন্দি চড়ুই পাখির মতো ছটফট করতেন। সাদা ধবধবে বিছানা বড্ড বিরক্ত লাগতো। ডাক্তারদের কাঁচির নিচে নিজেকে সঁপে দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। মাথায় ছিলো কাঁটাছেড়ার দগদগে দাগ। দাগটা মাথা থেকে বাসা বেঁধেছিল মনেও। পড়ন্ত বিকেলে ছেলে-মেয়ের কাঁধে ভর দিয়ে বিছানা ছেড়ে হাসপাতালে ব্যালকনিতে দাড়ান। ব্যালকনিটা ছিলো তার কাছে কাঁটাতার। এর বাইরে যাওয়ার শক্তি কিংবা সামর্থ্য কোনটায় ছিলোনা। আস্তে আস্তে হাঁটতে শুরু করলেন। এক পা দুপা করে নিজে নিজেই হাঁটতে পারতেন। ছেলে-মেয়েরা তো আনন্দে আটখানা। মা ভালো হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। সত্যিই দিনকে দিন তার শারীরিক অবস্থার উন্নতিই হয়েছে। মাসখানেক পারে ডাক্তারি নির্দেশনায় ঢাকায় আনা হয় তাকে। বিশ্রামে ছিলেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কথাও বলেছেন তখন।
তখন জানিয়েছিলেন, ‘হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনাই মনে পড়েছে। আর সেগুলো আমার মুখ থেকে শুনে একটি স্ক্রিপ্ট লিখেছে লামিয়া। যা আমার আত্মজীবনীই বলা যেতে পারে। সুস্থ হয়ে, এটা নিয়ে একশ পর্বের নাটক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি এর কাজ শুরু করব।’
দর্শকরাও প্রিয় অভিনেত্রীর ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করেছিলেন ভক্তরা। বন্ধু-বান্ধব-সহকর্মীরা সামিল হয়েছিলেন প্রার্থনার কাতারে। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় ফের অসুস্থ হন তিনি। ফের নেয়া হয় চেন্নাই। বেশ ক’দিন আইসিইউতে রাখা হয় তাকে। শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় ডাক্তাররা তার ফেরার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। ঢাকায় ফিরে আনা হয় তাকে। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভার্চুয়াল জগতে মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি বেঁচে আছেন। সেই ঘটনার দেড় মাসের মাথায় সত্যি সত্যিই তিনি পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিলেন। প্রায় একবছরের হাসপাতাল জীবনকে পাশ কাটিয়ে প্রবেশ করলেন ভিন্ন এক জগতে। যে জগত থেকে কেউ আর ফেরেনা এইখানে...।
প্রসঙ্গত, প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র এবং টিভি নাটকে দাপটের সাথে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী পারভিন সুলতানা দিতি। আজ রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।-বাংলামেইল
২০ মার্চ, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই