জহিরুল ইসলাম : ঢাকাই চলচ্চিত্রঅঙ্গনের বরেণ্য অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতি। তিনি প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ঢাকাই সিনেমার অন্যতম সেরা নায়িকা দিতি। আজ রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি…..রাজিউন)।
বর্তমান প্রজন্মের অনেক অভিনয়শিল্পীরা দিতিকে আইডল হিসেবে মানেন। গুণী এই অভিনেত্রীর সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করে অনেক কিছুই শিখেছেন তারা। শুধু এই প্রজন্মের নয়, দিতির সমসাময়িক তারকাদের হৃদয়ে জমে আছে অনেক স্মৃতি। না বলা অনেক কথা।
প্রিয় মানুষকে হারানোর কষ্টের ছায়াও তাদের মধ্যে ভর করেছে। শোকের এই ছায়া পড়েছে পুরো চলচ্চিত্রাঙ্গনেও। সদ্য প্রয়াত অভিনেত্রী দিতির সহশিল্পীদের স্মৃতিচারণ নিয়ে এই প্রতিবেদন।
শাকিব খান : যৌথ প্রযোজনার সিনেমা 'শিকারী'র শুটিং-এ কলকাতায় অবস্থান করছেন অভিনেতা শাকিব খান। ফেইসবুকে তিনি লেখেন, 'অভিনেত্রী পারভিন সুলতানা দিতি আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।'
সুবর্ণা মোস্তাফা : সহ-অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা শোক প্রকাশ করে তার ফেইসবুকে পোস্ট করেছেন দিতির সঙ্গে অভিনীত টেলিফিল্ম 'গেস্ট হাউস'-এর ইউটিউব লিঙ্ক। সঙ্গে লিখেছেন, 'দিতিকে স্মরণ করছি। শুটিং চলাকালীন কতো মজাই না হতো! শান্তিতে ঘুমাও আমার অপরূপা বন্ধু।'
ওমর সানি : হ্যাঁ আমি শুনেতে পেয়েছি। এখন ওনাকে (দিতি) ইউনাইটেড হাসপাতালে যাচ্ছি (অনেকটা আবেগ জড়ানো কণ্ঠে)। ওনাকে (দিতি) নিয়ে এত স্মৃতি জমা আছে যে, তার থেকে কটার কথা বলবো আপনাকে (এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন এই ওমর সানি)। আমি এখন কথা বলতে পারছিনা পরে কথা বলব?
মাহিয়া মাহি : তবুও ভালোবাসি চলচ্চিত্রে আমি ওনার সাথে কাজ করেছি। এ চলচ্চিত্রে উনি আমার শ্বাশুরির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তারপর থেকেই আমি ওনাকে শ্বাশু মা বলে ডাকতাম। উনি আমার চোখে আসাধানরণ একজন মানুষ। অনেক মানুষের টাকার প্রতি একটা নেশা থাকে। কিন্তু উনার মধ্যে এই বিষয়টি একেবারে ছিল না। অভিনয় করে উনি যে টাকা আয় করতেন তা নিয়ে ঘুরা-ফেরা ও আনন্দ করে ব্যয় করতেন। আমি শ্বাশুমার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
ইমন : আমি কিছুক্ষণ আগে এই দুঃসংবাদটি পেয়েছি। এখন আমি শুটিংয়ে আছি। খবরটি শোনার পর শুটিংও ঠিকমতো করতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে। কষ্ট লাগছে। আমি দিতি আপুর সঙ্গে অন্তরঙ্গ চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। এই চলচ্চিত্র চাষী নজরু ইসলাম স্যারের সর্বশেষ চলচ্চিত্র। দিতি আপু অভিনীতও শেষ চলচ্চিত্র এটি। নজরুল স্যার অসুস্থ হওয়ার পর আমি আর দিতি আপু শুটিং সেটে আলোচনা করছিলাম, সিনিয়র সবাই কেমন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তারপর-ই অসুস্থ হন দিতি আপু। অবশেষে উনিও চলে গেলেন। গুরুজন, প্রিয়জনকে একএক করে হারাচ্ছি।
ববিতা : দিতি আর আমি বলা যায় আমরা একই পরিবারের সদস্য। সোহেল খুন হবার পর দিতি খুব কষ্ট করে দুই ছেলে মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা করেছে। সত্যি বলতে কি দিতি আমার জুনিয়য়র হলেও তারসঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিলো বন্ধুর মতো। আউটডোরে যখন শুটিং-এ যেতাম তখন আমরা এক গাড়িতে করেই শুটিং-এ যেতাম। গল্প করতে করতে পথ হয়তো শেষ হয়ে যেতো কিন্তু' গল্প শেষ হতোনা। আমার নিজের প্রযোজনা সংসার' থেকে 'চ্লিদাস ও রজকিনী' চলচ্চিত্রে তাকে নিয়ে কাজ করেছিলাম। একজন ডেডিকেটেড শিল্পী ছিলো দিতি। সর্বশেষ তাকে যখন দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম তখন আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে চুমো খাচ্ছিলো বার বার। সেই শেষ স্মৃতি কখনোই ভুলবোনা। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্তবাসী করেন।
রিয়াজ : দিতি আপুর সঙ্গে চলচ্চিত্রের আসার প্রথমদিন থেকেই আমার বেশ ভালো পরিচয় এবং পারিবারিক সম্পর্ক। সৈয়দ হারুনের একটি চলচ্চিত্রে তারসঙ্গে প্রথম অভিনয় করি। এরপর 'আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা', 'সুইটহার্ট'সহ আরো বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করি। একজন মানুষ কতোটা উদার আর মহান হতে পারেন দিতি আপা ছিলেন তার যথাযথ উদাহরণ। এমন মানুষ সত্যিই আমাদের চলচ্চিত্র জগতে খুবই কম আছেন। তার এভাবে চলে যাওয়াটা সত্যিই মেনে নেবার মতো নয়। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসীব করেন।
পূর্ণিমা : চলচ্চিত্রে আমার প্রিয় মানুষদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন দিতি আপা। তারএভাবে চলে যাওয়াতে সত্যিই ভীষণ ক্ষতি হয়েগেলো আমাদের। দিতি আপু শুধু একজন অভিনেত্রীই ছিলেন না আমাদের একজন অভিভাবকও ছিলেন। একজন মানুষ কতোটা বড় মনের হতে পারে তিনি যেন তারই উদহারণ।
পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন : দিতি অভিনীত সবশেষ সিনেমা 'সুইটহাটর্'-এর পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন বললেন, 'ব্যাপারটা খুবই দু:খজনক। তিনি আমাদের এভাবে ছেড়ে চলে যাবেন তা আমরা কখনোই ভাবিনি। তার মৃত্যুসংবাদে আমি খুবই মর্মাহত।' ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটিতে দিতির কাজ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বললেন, 'শুটিং এর সময় আমাদের সব কিছুই তিনি খেয়াল রাখতেন। তিনি আমার কাছে আমার আপন বড় বোনের মতো ছিলেন।'
উল্লেখ্য, মস্তিষ্কে ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ায় গত ২৫ জুলাই থেকে ভারতের চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজি (এমআইওটি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন দিতি। মাঝে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন।
শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গত বছরের নভেম্বরে আবারও একই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৮ জানুয়ারি এ অভিনেত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার পরপরই তাঁকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে। দিতি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের নিউরো সেন্টার বিভাগের পরিচালক সৈয়দ সায়ীদ আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
২০ মার্চ, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই