সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১৬, ০৫:২৪:৫৭

গান চুরির অভিযোগে ভারতীয় পত্রিকায় ধুয়ে দিলো বাংলাদেশি নির্মাতা মুরাদকে

গান চুরির অভিযোগে ভারতীয় পত্রিকায় ধুয়ে দিলো বাংলাদেশি নির্মাতা মুরাদকে

বিনোদন ডেস্ক : সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এখানে শ্রেষ্ঠ কাহিনাকার ও নির্মাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন নির্মাতা মুরাদ পারভেজ। তিনি তার নির্মিত ‘বৃহন্নলা’ চলচ্চিত্রের জন্য এই পুরস্কারের জন্য মনোনতি হন।

এদিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনিত হওয়ার পর নির্মাতা মুরাদ পারভেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ছোট গল্প 'গাছটি বলেছিল' গল্পটি চুরি করে ‘বৃহন্নলা’ নির্মাণ করেছেন। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল বিতর্ক।

এবার একই নির্মাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ‘বৃহন্নলা’ ছবিতে ব্যবহৃত ‘প্রিয় তোর কীসের অভিমান’ গানটি বিশিষ্ট নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষের আলোচিত ছবি ‘রেনকোট’-এ ব্যবহৃত ‘পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান’ গানটি বাংলায় তরজমা করে চালিয়ে দিয়েছেন। যা চুরি বলেই দাবী করা হচ্ছে।

এ নিয়ে ভারতের ‘এবেলা’ তাদের অনলাইন ভার্সনে ‘এপার বাংলার গান বেমালুম ‘চুরি’ বাংলাদেশে? রইল ভিডিও প্রমাণ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করেছেন। এমটিনিউজের পাঠকের জন্য সে নিউজটি হুবহু তুলে ধরা হলো।  

‘অভিযোগ আগে কি ছিল না? ভারতের গান বা ছবি বেমালুম কপি হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে, এই নিয়ে অল্প এবং বিস্তর আলোচনা সাংস্কৃতিক মহলে ছিলই। তাবে, কোন ছবি, কী গান, তার কোনও নির্ধারিত হদিশ তেমন ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি এমন এক ঘটনা ঘটেছে যে, বিষয়টি সম্পর্কে উদাসীন থাকাটা দুরূহ হয়ে পড়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না।

ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘রেনকোট’ ছবির গান ‘পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান’ গানটির জনপ্রিয়তা নিয়ে আজ আর বিশেষ কিছুই বলার নেই। স্বয়ং ঋতুপর্ণের লেখা সেই গানে সুরারোপ করেছিলেন দেবজ্যোতি মিশ্র। গানটির দু’টি ভার্সন ছিল— একটি শুভা মুদগলের কণ্ঠে, অন্যটিতে কণ্ঠ গিয়েছিলেন হরিহরণ। তার সঙ্গে গানটিতে যুক্ত হয়েছিল গুলজারের কবিতা। ‘রেনকোট’ তার গান সমেত পেরিয়ে গিয়েছিল জাতীয়তার সীমান্ত। ভারত ছাড়িয়ে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশেও তুমুল জনপ্রিয়তা পায় সেই গান।

সম্প্রতি ইউটিউব-সূত্রে জানা গিয়েছে বাংলাদেশের ‘বৃহন্নলা’ নামের একটি ছবিতে নিপাট ব্যবহৃত হয়েছে সেই গান। সুর বেমালুম এক। কেবল ঋতুপর্ণের লেখা বাণীটি ছিল এক আশ্চর্য  ব্রজভাষায় রচিত। তার বদলে ‘বৃহন্নলা’-র গানটিতে ব্যবহৃত হয়েছে সেটির বাংলা তর্জমা। ‘পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান’ এখানে হয়ে দাঁড়িয়েছে— ‘প্রিয় তোর কীসের অভিমান’। ইউটিউব-সূত্রেই জানা যাচ্ছে, এই ছবির পরিচালক মুরাদ পারভেজ।

‘রেনকোট’ ২০০৪-এর ছবি। আর ‘বৃহন্নলা’-র গানটি আপলোড হয়েছে ২০১৪-এর মার্চ মাসে। ১০ বছর ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত। এই সময়-পর্বেই প্রয়াত হয়েছেন ঋতুপর্ণ।

সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্রের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমি পুরো ব্যাপারটায় মর্মাহত। ‘পিয়া তোরা’ আমার কাছে নিছক একটা গান নয়। তা আমার কাছে প্রিয়তম বন্ধুর স্মৃতি। তার উপরে এই গানে যুক্ত রয়েছে হরিহরণ, শুভা মুদগল এবং সর্বোপরি গুলজারের মতো মানুষের নাম। একে কি ‘কুম্ভীলকবৃত্তি’ বলব? মন না মানলেও তা-ই বলতে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত। আমার বাবা এবং মা দ’জনেই সাবেক পূর্ববঙ্গের মানুষ ছিলেন। সে দেশের জল-মাটি-হাওয়াকে আমি আমার আত্মার অংশ বলেই মনে করি। সেই দেশ থেকে এমন কাজ যখন গোচরে আসে, মর্মাহত হয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার সামান্য সাংগীতিক কেরিয়ারে বাংলাদেশের সঙ্গেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। জনাব এনামুল করিম নির্ঝর পরচালিত ‘আহা’ ছবিতে সুরারোপের সুযোগ পাই এবং সেই ছবির ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’ গানটি ফাহমিদা-র কণ্ঠে একপ্রকার মান্যতাও পায়। সে এক মধুর স্মৃতি। ‘বৃহন্নলা’-র ঘটনা সেই স্মৃতিকেই যেন আঘাত করল।’

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন দেবজ্যোতি। যোগাযোগ করেছেন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে। সে দেশ থেকেও বার্তা এসেছে সহমর্মিতার। তার গুণমুগ্ধের সংখ্যা ওপার বাংলাতেও কিছু কম নয়। তারা অনেকই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন একটাই— কীভাবে রোধ করা যায় এ জাতীয় অপ্রীতিকর, অস্বস্তিকর ঘটনা?’
২১ মার্চ, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে