বিনোদন ডেস্ক : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও মঞ্চকর্মী তনু হত্যার বিচারে ফুঁসে উঠেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। বাংলাদেশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় একজন শিক্ষার্থীকে পাশবিক অত্যাচারের পর হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ তুলছে বিচারপ্রার্থীরা।
তার পরিবারের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রী ও সচেতন সমাজ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেছে। পথে নেমেছেন সাংস্কৃতিক কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সোচ্চার প্রতিবাদ চলছে। তারকাদের অনেকেই মুখ খুলছেন। তনু হত্যার বিচারের দাবিতে ফেসবুকে লিখেছেন হালের ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। লেখাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
আমার নাম ফারিয়া শবনম তৃপ্তি (যদিও আপনারা চেনেন শবনম ফারিয়া নামে)। বাবা মা’র ছোট মেয়ে, বেশ আদরের মেয়ে। বাবার সরকারি চাকরীর সুবাদে আমার ছোটবেলা কেটেছে মফস্বলে।
জানেন মফস্বলে থাকা তৃপ্তির স্বপ্ন কি ছিল? আমার স্বপ্ন ছিল সাংবাদিক হওয়ার। কিন্তু কেন হতে পারিনি জানেন?
কারণ আমার বাবা মার ধারণা একটা মেয়ের যথেষ্ট নিরাপত্তা নেই এদেশে সাংবাদিকতা করার।
কিভাবে কিভাবে যেন আমি অভিনয়ে যুক্ত হই, কিন্তু জানেন এখনো আমি গাড়ি ছাড়া বাসা থেকে বের হই না? আমি ঢাকার বাইরে কখনো শুটিং করতে যাই না, গেলেও রাত ১২টার মধ্যে বাসায় পৌছাতে পারবো সেই দুরত্বে যাই। এখনো বেশি রাত হলে আমার মা আমাকে আনতে যায়।
কেন জানেন?
কারণ আমার বাবা মা এখনো বিশ্বাস করে এদেশে একটা মেয়ের চলাফেরা করার জন্য এখনো নিরাপদ না, রাত হয়ে গেলে একা আমি আমার নিজের ড্রাইভারের সাথেও নিরাপদ না।
আমাকে পহেলা বৈশাখে বাসা থেকে বের হতে দিতে চায় না, থার্টি ফাস্টে রাতে বাসার বাইরে তো দুরের কথা, দিনেও যেতে দেয় না। কিন্তু জানেন? আমি যে দেশে বাস করি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। বিরোধী দুই দলের প্রধানও নারী, কিন্তু আমার রাষ্ট্র আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
আমি মাঝে মাঝে হিজাব পরে মার্কেটে যেতাম, মনে হতো আমি একটু হলেও নিরাপদ…। কিন্তু না, গতকাল জানলাম আমি বোরখা পরলেও নিরাপদ না। কারন নিরাপদ হলে ১৮ বছর বয়সি তনুকে মরতে হতো না।
এতোদিন শুনে এসেছি মেয়েদের আশালীন কাপড় দায়ী এসব ঘটনার জন্য, মেয়েরা পহেলা বৈশাখে নাভি দেখায়ে শাড়ী পরে, তাই আমাদের ফুলের মত ইনোসেন্ট ভাইয়ারা একটু দুষ্টামি করে শাড়ি ধরে টান দেয়। তো যে মেয়েটা হিজাব পরে সেই মেয়েটার কি দেখে রেপ করে গলা কেটে খুন করা হলো?
আজ থেকে আর কোন মেয়ের পোষাক নিয়ে শঙ্কা/অভিযোগ দিবেন না।
আপনার ছেলেকে, ছোট ভাইকে মেয়েদের সম্মান করতে শেখান, ভক্ষক হওয়ার চেয়ে রক্ষক হওয়ায় কতটা বীরত্বের- তা বোঝান।
তনু একজন না, তনু হাজারজন, এক তনুকে হারিয়েছি, আর কোন তনু যেন না হারায়।
তনু হত্যার এমন বিচার হওয়া উচিত, এরপর যাতে কোন ছেলে কোন মেয়ের দিকে বাজেভাবে তাকাতেও ভয় পায়।
চলুন আমরা সবাই এবার একটু সোচ্চার হই, it's better to be late than never.
আমি নিজে বের হতে না পারলেও আমার ভাগ্নি যাতে নিশ্চিন্তে বের হতে পারে, পরের প্রজন্মটা যাতে নিরাপদ থাকতে পারে সেটা নিশ্চিন্ত করি...।
টানাটানির সংসারে দনু কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরেই টিউশনি করে নিজের খরচের কিছুটা যোগাতেন। তার বড় ভাই নাজমুল হোসেন বলেছেন, গত ২০ মার্চ রোববার বিকেলে তার বোন টিউশনি করতে গিয়েছিল। কিন্তু রাত আটটাতেও না ফিরলে তাদের মা খুঁজতে রাস্তায় খুঁজতে যান।
তিনি বলেন, তার বোন যে বাসায় পড়াতে যেতেন, সেই বাসায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ধ্যা সাতটাতেই তনু চলে গেছে। রাত দশটার দিকে তাদের বাবা বাসায় ফিরলে তখন আবার তারা খুঁজতে বের হন। যে পথ দিয়ে টিউশনির বাসায় যেতেন, সেই পথেই সেনানিবাসের ভেতরে একটি কালভার্টের নিচে মৃতদেহ পাওয়া যায়।
এদিকে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন। বিক্ষোভে অংশ নেয়া কয়েকজন বলেন, ঘটনার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার করে কিছু বলছে না, সেজন্য তাদের সন্দেহ হচ্ছে।
২৪ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম