নিউজ ডেস্ক : কেরানীগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালে প্রেগনেন্সি টেস্ট করাতে গিয়েছিলেন গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার পপি। ইউরিন টেস্টের পর গাইনীর ডাক্তার কাবেরী সালাম জানান, 'রোগী প্রেগনেন্ট'।
এ সময় তাকে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পরামর্শ দেয়া হয়। পরদিন রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে জানানো হয়, রোগী প্রেগনেন্ট কিন্তু বাচ্চা জরায়ুতে নেই, সেটা টিউবের ভেতর রয়েছে।
এ সময় তিনি রোগী ও স্বজনদের ভয় দেখান দ্রুত অপারেশন করে টিউব কেটে ফেলতে হবে। অন্যথায় টিউব ফেটে রোগীর প্রাণহানীর সম্ভাবনা রয়েছে। অপারেশনের জন্য ১৮ হাজার টাকা কাউন্টারে জমা দিতে বলেন এবং ৩/৪ ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে রাখতে বলেন। আকস্মিক এমন খবরে রোগী ও স্বজনরা হতভম্ব হয়ে যান এবং রোগীর জীবন বাঁচাতে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু অপারেশন শেষে ডাক্তার কাবেরী সালাম জানান, রোগীর বাচ্চা জরায়ুতে আছে, এমনকি তার টিউবও ভালো আছে। ডাক্তারের এমন কথায় রোগীর স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সব কিছু ভালো থাকলে পেট কেটে অপারেশন করা হলে কেনো? এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগী পরিবারের।
ওই গৃহবধূর স্বামী কেরানীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তরের কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি আবু জাফর জানান, গত ১৪ নভেম্বর বিকালে তার স্ত্রীর অপারেশন করেন সাজেদা হাসপাতালে ডা. কাবেরী সালাম।
তিনি জানিয়েছিলেন রোগীর অবস্থা খারাপ। দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। অপারেশন শেষে তিনি পুনরায় জানান, রোগীর যে সমস্যা মনে করা হয়েছিল আসলে তার ওই রকম কোনো সমস্যা নাই। এ সময় ডাক্তারের কাছে জনাতে চাওয়া হয়, সব কিছু ঠিক থাকলে রোগীকে অপারেশনের কথা বলে পেট কাটলেন কেন? এ বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি বলেও আবু জাফর জানান। জাফর জানান, ডা. যেখানে পাঠিয়েছে আমরা সেখানে গিয়েছি, যেখান থেকে পরীক্ষা করাতে বলেছে আমরা সেখান থেকে পরীক্ষা করিয়েছি। তাহলে এমন ভুল কেন?
আবু জাফর আরো অভিযোগ করেন, ভুল চিকিত্সা দেয়ার পরও বিলের নামে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কাছ থেকে মোটা অংকের বিল হাতিয়ে নিয়েছে। এ সময় মানসিকভাবে পুরো পরিবার চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার তার স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। কাটা পেট নিয়ে রোগী বাড়ি ফিরেছে। সুস্থ হতে মাসখানেক সময় লাগবে। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে আমি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দিলে সেখানে অভিযুক্ত সাজেদা হাসপাতালের বিরুদ্ধে ঝড় উঠে। সেখানে অনেক ভুক্তভোগী জানান, সাজেদা হাসপাতালে কোনো প্রেগনেন্সি রোগী ডাক্তার দেখাতে গেলে রোগীদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে সময়ের আগেই (পেট কাটার) সিজার করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। রোগীর লোকজন ভয় পেয়ে তাদের কথা মতো সিজার করতে বাধ্য হয়। এ যেন হাসপাতাল না কসাই খানা নানা ধরনের মন্তব্য আসে হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হারুন উর রশিদ জানান, এখানে ডাক্তারের দোষ নেই। তারা যে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট এনেছিল সেখানকার বিপোর্টটি ছিল ভুল। সেজন্য তিনি (ডা.) অপারেশন করেছেন। ভুক্তভোগী গৃহবধূর মা বিউটি বেগম জানান, এর আগে সিজারের মাধ্যমে তার মেয়ের একটি সন্তান হয়েছে। বর্তমানে মেয়ে আবারও প্রেগনেন্ট। এই অবস্থায় পেট কাটায় প্রচুর ওষুধ তাকে খেতে হচ্ছে। শারীরিক কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। পেটের বাচ্চা ঠিক থাকলে কয়েক মাস পর আবারো তার সিজার করতে হবে। বার বার পেট কাটা একজন মায়ের জন্য খুব কষ্টকর।
এ বিষয়ে ডা. কাবেরী সালাম জানান, প্যাথলজিক্যাল রিপোর্টের কারনে তিনি অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু পেট কাটার পর দেখেন রোগীর এরকম সমস্যা নেই। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকের মোহাম্মদ যোবায়ের জানান, এ বিষয়ে লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস