শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:৩৪:১০

৪ বছর ধরে প্রশ্নফাঁসে জড়িত খান বাহাদুর!

 ৪ বছর ধরে প্রশ্নফাঁসে জড়িত খান বাহাদুর!

নিউজ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপা হয় রাজধানীর ফার্মগেটস্থ ইন্দিরা রোডের একটি প্রেসে। সেই প্রেসের কর্মচারী খান বাহাদুর। নামেই শুধুই নয়, অপকর্মে যেন ভয়-ডর নেই তার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়িয়ে বিগত ৪টি বছরের প্রশ্নফাঁস করেছেন খান বাহাদুর। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি। ফাঁস করা প্রশ্ন বিক্রি, ছাত্রদের হাতে তুলে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে তৈরি করেছেন বড় একটি সিন্ডিকেট।

বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ইন্দিরা রোড থেকে প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুরকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ। গ্রেফতারের পর এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

শুধু খান বাহাদুর নয়, এ পর্বে মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র, একটি জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা ও একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রও রয়েছেন।

সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, বিগত চার বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিলেন প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর। গত ১৩ অক্টোবর ঢাবি ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগেই মেলে প্রশ্নপত্র। অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সাথে মিলও পাওয়া যায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নের। প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার ও সমালোচনা স্বত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করে প্রশ্নই ফাঁস হয়নি! বরং দ্রুতই অনুষ্ঠিত সে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, গত ২০ অক্টোবর ঢাবি এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রশ্নফাঁসের ডিভাইসহ মহীউদ্দিন রানা ও আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যে ১ নভেম্বর ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইশরাক হোসেন রাফি ও ও ফারজাদ সোবহান নাফিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ৩ নভেম্বর প্রশ্নফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা আনিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৪ নভেম্বর রংপুর থেকে তনয় ও গাজীপুর থেকে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ঢাবি প্রক্টরের সহযোগিতায় ও তনয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তানভীর আহমেদ মল্লিক, মো. বায়জিদ, নাহিদ ইফতেখার, ফারদিন আহমেদ সাব্বির. প্রসেনজিৎ দাস, রিফাত হোসাইন, আজিজুল হাকিম, তানভির হাসনাইন, সুজাউর রহমান সাম্য, রাফসান করিম ও মো. আখিনুর রহমান অনিককে গ্রেফতার করা হয়।

মোল্যা নজরুল বলেন, এ পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর নাটোর ও পাবনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রকিবুল হাসান ইসামীকে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়। গত ১৩ ডিসেম্বর জামালপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় সাইফুল ইসলামকে। খান বাহাদুরের সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় ছিল সাইফুলের। খান বাহাদুরের প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপার বিষয়টি জানতে পারেন সাইফুল। সাইফুলের দেয়া তথ্যে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয় প্রেসের কর্মচারী খান বাহাদুরকে। যে প্রেসে তিনি কাজ করতেন সেখানে ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ছাপানো হয় এবং তার মাধ্যমে প্রেস থেকে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে জানান মোল্যা নজরুল ইসলাম।

এরপর গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর জিগাতলা থেকে নাজমুল হাসান নাঈম, ৯ ডিসেম্বর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে বনি ইসরাইল ও রাজশাহীর বিনোদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় মো. মারুফ হোসেনকে। বনি ও মারুফ দুজনই ভর্তি জালিয়াতির জন্য ছাত্র সংগ্রহ এবং রকিবুল হাসান ইসামীকে ছাত্রদের তথ্য সরবরাহ করতেন।

অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম পলি টেকনিক্যাল থেকে পাস করে বিভিন্ন কাজ করতেন। সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রেস কর্মচারীর তথ্য পাওয়া যায়। প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর ইন্দিরা রোডের একটি প্রেসে ২০১০ সাল থেকে কাজ করছেন। আর প্রশ্নপত্র ফাঁস করছেন চার বছর ধরে। খান বাহাদুরই মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁস করতেন। তার হাত দিয়েই প্রশ্নপত্র অন্যদের কাছে পৌঁছাতো। এই চক্রে জড়িত অন্যরা সদস্য সংগ্রহ ও ডিভাইস সরবরাহসহ অন্যান্য কাজগুলো করে আসছিল।

তবে গ্রেফতার রকিবুলের ভাই রাবি ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সামসুজ্জোহা বলেন, ‘আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল সিআইডি। আমাকে শুধু বলেছিল প্রশ্নফাঁসে একটি কললিস্টে তার ভাইয়ের নম্বর পাওয়া গেছে। শুধু মাত্র জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে রকিবুলকে। এরপর তারা ফিরে আসবেন। কিন্তু রকিবুলকে সিআইডি কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করানোর পর তারা তাকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসে। তবে তারা ফের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু তারা নতুন করে জড়িত হওয়ার যে তথ্য দিচ্ছেন তা সম্পূর্ণ অসত্য। রকিবুলকে কেউ ফাঁসাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

প্রশ্নফাঁসে ঢাবি কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা ছিল কিনা জানতে চাইলে মোল্যা নজরুল বলেন, এটা তারাই বলতে পারবেন। প্রশ্ন যে ফাঁস হয়েছিল এটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। গ্রেফতারকৃত ২৩ জনের মধ্যে অধিকাংশই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে