বৃহস্পতিবার, ০১ মার্চ, ২০১৮, ০৮:১৩:৫৩

সীমান্তের দেড়শ’ গজের মধ্যে ভারী অস্ত্রসহ মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ, সতর্ক বিজিবি

সীমান্তের দেড়শ’ গজের মধ্যে  ভারী অস্ত্রসহ মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ, সতর্ক বিজিবি

নিউজ ডেস্ক : তমব্রু সীমান্তে নিজেদের অংশে প্রায় দেড়শ’ গজের মধ্যে ভারী অস্ত্রসহ মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড ট্রেনিং) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান। বিষয়টি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখে বিজিবির শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বিজিবির সদর দফতর পিলখানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান হক। তিনি আরও জানান, জরুরি পতাকা বৈঠক আহ্বানের পাশাপাশি মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনের ঘটনায় বিজিবি প্রতিবাদ পাঠিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘তমব্রু সীমান্তের জিরো লাইন এলাকায় বেশ কিছু রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। এলাকাটি মিয়ানমার অংশে। কিছুদিন ধরে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনী তমব্রু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া, সেগুলো আরও মজবুত করা, উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সার্ভেলেন্স ইকুয়েপমেন্ট স্থাপন করার কাজ করছে। এরমধ্যে শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে সেখানকার রোহিঙ্গাদের অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য তারা বারবার বলছে, যা গত এক মাস ধরে চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ (১ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা নাগাদ তমব্রু বর্ডার পোস্টের ৩৪ ও ৩৫ পিলারের মাঝামাঝি এলাকায় মিয়ানমার অংশের প্রায় ১৫০ গজ অভ্যন্তরে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে তারা। বেশ কিছু মিলিটারি প্যাটার্নের পিকআপের ট্রাক-লরির মাধ্যমে তারা সেখানে ভারী অস্ত্র স্থাপন করেছে। আমরা সার্ভেলেন্স ও ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমে এসব তথ্য জানতে পেরেছি। এরপর থেকে বিজিবিও সতর্ক অবস্থানে আছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের আহ্বান জানিয়েছি। এখনও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। আশা করি দ্রুততম সময়ে এর সমাধান হবে। আমরা প্রতিবাদলিপিও পাঠিয়েছি।’

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ পতাকা বৈঠকে সাড়া না দিলে বিজিবি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এমন প্রশ্নে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান হক বলেন, ‘বর্ডার এলাকায় ভারী অস্ত্র মোতায়েন, সৈন্য সমাবেশ করা বর্ডার নর্মসের বাইরে। আমরা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সতর্ক অবস্থানে আছি। যেকোনও ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত।’

মিয়ানমার কোন কারণে ও কী পরিমাণ সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে, এমন প্রশ্নে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘সৈন্যদের সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তবে বর্ডারে যে পরিমাণ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। আর সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে থেকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর কী কারণে তারা সৈন্য মোতায়েন করেছে, সেটা জানার জন্যই ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের আহ্বান করা হয়েছে। আলোচনায় বসলে জানা যাবে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক ও ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তমব্রু সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখানো অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার। নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করার পাশাপাশি তমব্রু সীমান্তের নিজেদের অংশে মিয়ানমারের সেনা সদস্য বাড়ানো হয়েছে। এতে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তে ভিড় করছেন।

মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়া সীমান্তের তংপিও লিতওয়ে এলাকায় মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠকের পরও তমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের ভীতি প্রদর্শন থামেনি। আতঙ্কিত হয়ে নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে অধিকাংশ সরে গেছে তমব্রু সীমান্ত থেকে। আজও বেশ কিছু রোহিঙ্গা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়ে জিরো পয়েন্ট ছেড়ে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় জড়ো হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গত ২৬ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলার মুখে প্রাণ বাঁচাতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তার মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তমব্রু কোনারপাড়ার নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান নেয় সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গা।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে