মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮, ১০:০৪:১১

প্রবাসীর সাথে ফোনে বিয়ে, ড্রাইভারের সাথে লাপাত্তা, অতঃপর ৩ জনের মৃত্যু!

প্রবাসীর সাথে ফোনে বিয়ে, ড্রাইভারের সাথে লাপাত্তা, অতঃপর ৩ জনের মৃত্যু!

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে রাজশাহী চলে যাওয়া জান্নাতুল ফেরদৌসী বন্যা (১৯) কে রাজশাহী থেকে উদ্ধার করে ফেরার পথে টাঙ্গাইলে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনে নিহত ৩ জন। তিনজনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তাদের কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। শোকার্ত তিন পরিবারকে শান্তনা দিতে আশপাশের লোকজন সোনারগাঁওয়ে ভাটিবন্দর ও জিয়ানগর গ্রামে ভীড় করেছেন।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার যাত্রীবাড়ী এলাকার মৃত আমির হোসেনের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী বন্যাকে নিয়ে তার মা সাইদা খানম সোনারগাঁওয়ের হাড়িয়া চৌধূরীপাড়া এলাকায় মামার বাড়িতে বসবাস করতো। গত ছয় মাস আগে উপজেলার বারদী ইউনিয়নের দলরদী গ্রামের সৌদি প্রবাসী আল আমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বন্যার কাবিননামা করে বিয়ে হয়। কোরবানীর ঈদের পর তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। এদিকে সম্প্রতি রাজশাহীর পিকআপ চালক রফিকুল ইসলাম রকির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্যার প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। পরে গত ১৬ জুন (ঈদের দিন) বিকেলে প্রেমের টানে বন্যা রাজশাহীর প্রেমিক রকির কাছে স্বর্ণলংকার নিয়ে চলে যায়। ঘটনার দুই দিন পর ১৮ জুন বন্যার মা সাইদা খানম বাদি হয়ে সোনারগাঁও থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন। ঘটনার দুই দিন পর বন্যা তার প্রেমিক রকির ফোন থেকে ফোন করে সে ভাল আছে বলে তার মাকে জানায়। পরে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে সোনারগাঁও থানা পুলিশের এসআই তানভীর আহম্মেদের নেতৃত্বে এএসআই হাবিবুর রহমান হাবিবসহ একটি দল গত রোববার বন্যাকে উদ্ধারের জন্য রাজশাহীতে যান। এসময় পুলিশের সঙ্গে ছিলেন বন্যার মামা সিরাজুল ইসলাম, খালাতো ভাই মো: ফারুক। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রেমিক রকি পালিয়ে যায়। তবে ঘটনাস্থল থেকে বন্যাকে উদ্ধার করে পুলিশ। বন্যাকে উদ্ধার করে ফেরার পথে টাঙ্গাইলের কুমিদীনি হাসপাতাল এলাকায় মাইক্রোবাস গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনে জান্নাতুল ফেরদৌসী বন্যা, তার খালাতো ভাই ফারুক (৪২) ও মামা সিরাজুল ইসলাম (৫৫) নিহত হয়। এসময় পুলিশের এসআই তানভীর আহম্মেদ, এএসআই হাবিবুর রহমান, কনস্টেবল আজহারুল ইসলাম ও গাড়ীর চালক আক্তার হোসেন আহত হন। আহতদের প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার নিহতদের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের স্বজনদের আহাজারীতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা স্বজনদের শান্তনা দিচ্ছেন। নিহতদের বাড়িতে আশপাশের লোকজন ভীড় করছেন।

নিহত ফারুকের ছেলে অনিক জানান, গতকাল (সোমবার) বাবা আমাদের ফোন করে জানায় বন্যা খালাকে খুজে পাওয়া গেছে। তাকে থানায় নিয়ে পথে আছেন। আমরা সন্ধ্যার পরই রওনা দেব। আজকে সকালে শুনি আবার বাবা নেই এ বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অনিক।

নিহত সিরাজুল ইসলামের ভাতিজা আতিকুর রহমান জানান, ঘটনাটি শোনার পর থেকে চাচী ও আমার চাচাতো ভাই বোন বার বার কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন। তাদের কান্না কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। গতকালও চাচার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। চাচা নেই এটা মানা খুব কষ্ট হচ্ছে।

সোনারগাঁও থানার ওসি মো. মোরশেদ আলম পিপিএম জানান, নিহত বন্যার মা বাদি হয়ে সাধারন ডায়েরী করেছেন। পরে মোবাইলের সূত্র ধরে গত রোববার আমরা একটি পুলিশের টিম বন্যাকে উদ্ধারের জন্য রাজশাহী যান। পরে তাকে উদ্ধার করে ফেরার পথে টাঙ্গাইলের কুমুদিনি এলাকায় রাস্তার স্প্রিড বেকারে প্রচন্ড ঝাকুনিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনে তিনজন নিহত হয়। এসময় পুলিশের তিন সদস্য ও গাড়ীর চালক আহত হয়। আহতদের প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওসি আরো জানান, লাশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হস্তান্তর করবে। আশা করছি লাশ রাতের মধ্যে সোনারগাঁওয়ে পৌছাবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে