শুক্রবার, ০১ মার্চ, ২০১৯, ১০:৪১:০৯

সারাক্ষণই ভাসে আগুন আর্তনাদ কুরআন পাঠের সুর

সারাক্ষণই ভাসে আগুন আর্তনাদ কুরআন পাঠের সুর

আবুল কালাম : দূর থেকে মাইকে ভেসে আসছে কুরআন পাঠের সুর। কালো কাপড়ে টানানো শোক ব্যানারে একাকার রাস্তা। তারই মধ্যে বাঁশ ঠেকিয়ে আটকে দেয়া বন্ধ রাস্তার মুখে উৎসুক মানুষের ভিড়। কারো হাতে তাসবিহ, গুনগুন সুরে মুখে কলমা, দরুদ। এতে আর বুঝতে বাকি থাকে না এটা চকবাজার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুরিহাট্টার রাজ্জাক ভবন। যা কিছুদিন আগে অনেকের অচেনা থাকলেও ২০ ফেব্রুয়ারির পর এখন ইতিহাস। স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা উৎসুখ মানুষের কাছে এটা এখন শোক স্তব্দের অতঙ্কিত মৃত্যুপুরী। স্থানীয়রা বলছেন, আগুন লাগার পর আটকে পড়াদের বাঁচার আর্তনাদ, মহান প্রভুর উদ্দেশে কলমা, দরুদ সবই তারা দেখেছেন, শুনেছেন। কিন্তু তাদের বাঁচাতে না পারার যন্ত্রণা তারা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। নিদ্রা-অনিদ্রায় রাত-দিন সারাক্ষণই তাদের সামনে ভাসে শুধু আগুন অর্তনাদ কলমা দরুদসহ ঘটনার করুণ চিত্র। 

গত মঙ্গলবার আগুনে পুড়া ভবনটির পাশে গিয়ে দেখা গেল এর সামনে ও আশপাশে মানুষের ভিড়। ভবনের ভেতরে এখন চলছে ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ। ভাষাহীন সবার নজর ভবনটির দিকে। সবার মনে শত প্রশ্ন। কিন্তু জবাব কোথায়? মনে তাই বোবা কান্না। 

প্রতিবেশীরা জানালেন, তাদের চোখের সামনে এমন ঘটনা ভুলতে পারছেন না তারা। চোখ বুজলেই ভেসে ওঠে দাউ দাউ আগুন। বারবার কানে বাজে হতাহতদের চিৎকার, কলমা ও দরুদ। ভুলতে না পেরে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার এলাকা ছেড়েছেন। আর যারা আছেন তারা কখন কী হয় এমন আতঙ্কে ঘুমাতে পারছেন না। তাদের মতে, যারা যাওয়ার তো চলেই গেছেন, কিন্তু মূল বিষফোঁড়া রাসায়নিকের গুদাম রয়েই গেছে। আবার কখন জানি নিজেরা লাশ হয়ে যাই এমন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটান অনেকে। 
আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনের ঠিক পেছনের ভবনে থাকেন মো: রফিকুল আলম (৫০)। তিনি জানান, নিহতদের আত্মা বারবার তাদের সামনে আসে। বারবার কানে বাজে আগুনে আটকা পড়া নিহতদের বাঁচার আকুতি। 

রফিকুল জানান, তাদের মসজিদের ইমামের পরিচিত এমন দুইজন লোকও এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন। 
স্থানীয় অধিবাসী আব্দুল মান্নান জানান, বয়স অনেক হয়েছে। কিন্তু এরকম মানসিক অশান্তিতে কখনো পড়িনি। ঘটনার পর একই ছবি বারবার চোখে ভাসে। কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারছি না।

রোকসানা (৫৬) ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে কান্না করছিলেন। চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। বললেন, কিয়ামত কাকে বলে দেখেছি। ঘটনার পর তিনি ও বাসার অন্য সদস্যরাও ঘুমাতে পারেন না। তিনি বলেন, আমরাতো বোমার ওপরে বাস করি। আতঙ্কে আমার মেয়ে বাসা ছেড়ে আরেক আত্মীয়র বাসায় চলে গেছে। রাত গভীর হলে আমার কানে চিৎকার-কান্নাকাটির শব্দ আসে। আতঙ্কে দিশা পাই না। তিনি বলেন, সব কারখানা না সরানো পর্যন্ত আমরা কেউ এখানে বসবাস নিরাপদ মনে করছি না। 

জাকির হোসেন (৫৫) জানান, তার সন্তানেরা মানসিক রোগীর মতো আচরণ করছে। রাতে ঘুমায় না। ব্যবসায়ী বরকত আলী বলেন, ঘটনার পর কেউ স্বাভাবিক হতে পারছেন না। রাত-দিন বারবার একই স্মৃতি চোখে ভাসে। তিনি বলেন, আতঙ্ক এমন যে দিয়াশলাই কাঠি জ¦ালাতেও ভয় পাই। আগুন লাগা ভবনের পাশের মসজিদের মোয়াজ্জিন আলী ইমরান জানান, ঘটনার পর তিনি এতটাই আতঙ্কিত যে রাতে লাইট জ¦ালিয়ে ঘুমান। অনেক সময় আগুনের স্বপ্নে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠেন। 

বাড্ডা থেকে এসেছেন মনিকাসহ তার পরিবারের তিন সদস্য। রাজ্জাক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ভবনের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে জানতে চাইলেন কিছু সাহায্য করতে চান। কার কাছে তা করা যাবে। পরে এরকম কউকে না পেয়ে ফিরে যান।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে