মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল: ফুটপাত ঘেঁষা রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি ভাতের হাঁড়ি বসানো মাটির চুলায় আগুন জ্বলছে। আধো আলো আধো অন্ধকারে ফুটপাতের ওপর থেকে সেই ভাতের হাঁড়ির দিকে তাকিয়ে আছে দুটি শিশু। তাদের মা সেই চুলায় রান্নায় ব্যস্ত। রান্নায় ব্যবহৃত কাঠের লাকড়ির আগুনের উজ্জ্বল আলোর দিকে শিশু দুটি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অপেক্ষাকৃত বয়সে বড় শিশুটি রান্নারত নারীকে প্রশ্ন করে, ‘মা, হেই যে সকালে রুটি দিলা, আর তো কিছু দিলানা। ক্ষুধায় পেডটা জ্বলতাছে।’ জবাবে শিশুটির মাকে বলতে শোনা যায়, ‘এইতো বাবা ভাত অইয়া গেছে। একটু অপেক্ষা কর, এই যে আলু কাটতাছি, ভাতের লগে আলু দিমু।’
এ দৃশ্য আজ (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে ৭টায় রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে পলাশীগামী রাস্তার মাঝামাঝি ব্যানবেইসের বিপরীত দিকের ফুটপাতের। নদী ভাঙনের কারণে ভিটেমাটি হারিয়ে দুই বছর আগে লালমনিরহাট থেকে জীবিকার সন্ধানে স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় আসেন রেশমা বেগম।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রেশমা জানান, লালবাগ ও রমনা থানার বিভিন্ন ফুটপাতে দিন কাটে তাদের। কিন্তু কয়েক দিন পর পর পুলিশের লাথিগুতা খেয়ে এক ফুটপাত থেকে আরেক ফুটপাতে ঘুরে বেড়াতে হয়। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরেও পুলিশ এসে তাদের ফুটপাতের পলিথিনে ঘেরা ঘর ভেঙে দেয়। মাদক বিক্রির অভিযোগ এনে পুরুষ সদস্যদের লাঠিপেটাও করে।
রেশমা বলেন, ঘর ভেঙে দেয়ায় সারাদিনই মালপত্র নিয়ে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত থাকায় চুলায় আগুন জ্বালাতে পারেননি। ঘর ভেঙে দেয়ার পর বাচ্চাদের নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। পুলিশ চলে গেলে ফুটপাতের বিপরীত দিকের রাস্তায় নতুন করে পলিথিন দিয়ে ঘর বানান। এরপর এক কেজি চাল চুলায় তুলে দেন।
শুধু রেশমা নন, অভাবের তাড়নায় একই এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রে ফুটপাতে বাস করে। কেউ রিকশা চালায়, কেউ চায়ের দোকানে কর্মচারী, কেউ বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ, কেউবা ভিক্ষা করে সংসারের খরচ চালায়।
হাজেরা খাতুন নামে এক বৃদ্ধা বলেন, পেটের ক্ষুধার জ্বালায় ঢাকা শহরে আসতে হয়েছে। কয়েক দিন পর পর পুলিশের লাথিগুতা খেয়ে এক ফুটপাত থেকে আরেক ফুটপাতে দিন কাটে। এ জীবন আর ভালো লাগে না।-জাগো নিউজ