নিউজ ডেস্ক : দিনাজপুরের বিরলে চোর সন্দেহে পুলিশকে পেটানোর ঘটনায় মামলা পর থেকে পুলিশের আটকের ভয়ে তিনটি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। এই তিন গ্রামের এক হাজারেরও বেশী পরিবারের নারী ও শিশুরা এখন নিরাপত্তাহীনতা আর আতঙ্কের মধ্যে।
ওই সব এলাকায় এখনও বন্ধ রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষিকাজ। আতঙ্কে শিক্ষার্থীরাও।
এদিকে অহেতুক কাউকে হয়রানি বা আটক করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন বিরল থানার ওসি আব্দুল মজিদ।
চোর সন্দেহে পুলিশকে পেটানোর ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর বিরলের মঙ্গলপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই তুলশী রায় বাদী হয়ে বিরল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় ৩৫ জন আসামির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০/৫৬ জনকে আসামি করা হয়।
আসামিরা সকলেই বিরল উপজেলার ধামইর ইউপির নেহালগ্রাম, হরিশচন্দ্রপুর এবং গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। মামলার পর থেকে পুলিশ আতঙ্কে নেহালগ্রাম, হরিশচন্দ্রপুর এবং গোবিন্দপুর গ্রামের পুরুষরা পালিয়ে যায়। ফলে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। গ্রামের কৃষি জমিতেও নেই কোনো কৃষক।
নেহালগ্রাম মিলবাজারসহ আশেপাশের বাজারগুলোর দোকানপাট বন্ধ। আতঙ্কের মধ্যে শুধুমাত্র নারী ও ছোট শিশুরাও।
নেহালগ্রামের বৃদ্ধা কানুবালা রায় জানান, তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার ছেলে কৈলাশ চন্দ্র রায়। আতঙ্কে তার ছেলে বাড়িছাড়া।
সুমিত্রা রানী জানান, তার স্বামী গৌরাঙ্গ রায় পুলিশের ভয়ে পালিয়েছে।
ধামইর ইউপি সদস্য আনন্দ চন্দ্র রায় জানান, পুলিশের ভয়ে এলাকার পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। এই গ্রামে হাজারেরও বেশী পরিবার থাকে।
তিনি আরও জানান, কয়েকদিন আগে পাশের গ্রাম কাশিডাঙ্গাসহ আশেপাশে বেশ কয়েকটি চুরি সংঘটিত হয়েছে। তাই এলাকার মানুষ চোর-ডাকাত আতঙ্কে ছিল। আর এই চোর সন্দেহে আতঙ্কিত মানুষ চোর মনে করে সাদা পোশাকধারী পুলিশদের উপর আক্রমণ করে। তবে সাদা পোশাকে না এসে পুলিশ পোশাকে অভিযান চালাতে এলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না বলেও তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে বিরল থানার ওসি আব্দুল মজিদ আশ্বস্ত করে বলেন, পুলিশ নিরীহ কোনো মানুষকে হয়রানি করছে না বা করবেও না। এখনও কাউকে আটক করা হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ওই গ্রামের মানুষদের বলেছি, আপনারা নির্ভয়ে এলাকায় থাকুন। কাউকে হয়রানি বা আটক করা হবে না।
পুলিশ জানায়, ২৮ অক্টোবর রাতে বিরল উপজেলার ধামইর ইউপি’র নেহালগ্রামে কয়েকজন মাদক সেবনকারী রিকশা-ভ্যানের মধ্যে বসে মাদক সেবন করার সংবাদ পেয়ে মঙ্গলপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি সাদা পোশাকধারী দল সেখানে উপস্থিত হয়। এসময় মাদক সেবনকারীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ মাদক সেবনকারীদের বসে থাকা ভ্যানটি নিয়ে আসার চেষ্টা করলে মাদক সেবনকারীরা চোর চোর বলে চিৎকার করে।
স্থানীয় লোকজন তাদের চিৎকারে ছুটে আসলে চোর বলে পুলিশের উপর চড়াও হয় এবং মারধর শুরু করে। এ সময় বাকি পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও মাদকসেবনকারীদের কবলে পড়ে মঙ্গলপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার হাফিজুর রহমান ও কনস্টেবল আলতাফুর রহমান গুরুতর আহত হয়। পরে বিরল থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাঁদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস