সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:০৩:৫০

রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধার দাফন, সেই এসিল্যান্ডকে স্ট্যান্ড রিলিজ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধার দাফন, সেই এসিল্যান্ডকে স্ট্যান্ড রিলিজ

দিনাজপুর থেকে : মুক্তিযোদ্ধা ও তার ছেলের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের দায়ে দিনাজপুর সদরের এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি) আরিফুল ইসলামকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। সোমবার সকালে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার অফিস।

দিনাজপুর সদর উপজেলার যোগীবাড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন ছেলেকে অ'পমা'ন করে চাকরি কেড়ে নেয়ায় ক্ষো'ভে-দু:'খে মৃ'ত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন করার কথা বলে যান। তার অসিয়ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। মুক্তিযোদ্ধার ছেলে অসম্মান করা এসি ল্যান্ডের বিচারের দাবি উঠে। এমতাবস্থায় আজ সকালে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলো।

এদিকে আজ সকালে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের কবর জিয়ারত করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। এ সময় মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নূর ইসলামকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম হাসপাতালে একটি চাকরি দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার এস এম তরিকুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি জিপ গাড়ি উপহার দিয়েছেন দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম হাসপাতালে। কয়েকদিনের মধ্যে গাড়িটি হাসপাতালে চলে আসলে সে গাড়িটিই চালাবেন নূর ইসলাম।
 
এদিকে মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মানের ঘটনার প্র'তিবা'দে সোমবার সকালে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে মানববন্ধন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এর আগে এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলামকে অ'বা'ঞ্ছিত ঘোষণা করে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জয়নুল আবেদিন ও সদর এসিল্যান্ডকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়েছিল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

জানা গেছে, দিনাজপুরের এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভুমি) অফিসে অস্থায়ী ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নুর হোসেন গত ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গাড়িচালক পদে চাকরি পান। চাকরি নেয়ার পর থেকেই দিনাজপুরের এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নিজ বাড়ির বাজার করিয়ে নিতেন। 

বাড়ির যাবতীয় অন্যান্য কাজও করিয়ে নিতেন তাকে দিয়ে। এমনকি বাড়ির রান্না ও শৌচাগারও পরিষ্কার করিয়ে নিতেন। সম্প্রতি নুর ইসলামকে গাড়িচালক পদ থেকে চাকরি'চ্যু'ত করেন এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ছেলের এমন অ'প'মান সইতে পারছিলেন না ইসমাইল হোসেন।

মৃত্যুর আগে তিনি একটি চিঠি লিখে গেছেন, ‘অ'স্ত্র হাতে জীবন বাজি রেখে যে দেশ স্বাধীন করলাম, সে দেশে আমার ছেলের রুজি-রোজগারটুকুও অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়া হলো! এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি আমার ছেলেকে চাকরি ও বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মে'রে'ছে। তাই মৃ'ত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদার অংশ হিসেবে তাদের স্যালুট আমার শেষ যাত্রায় চাই না।’

চিঠিতে ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করেন, তার ছেলে নূর হোসেনকে দিয়ে ভূমি কমিশনার বাসার রান্নাসহ বিভিন্ন কাজ করাতেন। সামান্য কারণেই কমিশনার ছেলের সঙ্গে দু'র্ব্য'বহার করতেন। অফিসে যেতে দেরি করায় এবং বাসার শৌ'চা'গার পরিষ্কার করতে রাজি না হওয়ায় গত আগস্টে তার কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নেয়া হয়। তিনি ঈদগাহ বস্তি এলাকায় সরকারি একটি প'রি'ত্য'ক্ত বাসায় থাকতেন। পরে সেখান থেকেও নূর হোসেনকে বের করে দেয়া হয়। চাকরির পর বাসা থেকেও উ'চ্ছে'দ হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেশ কষ্টে দিন যাপন করছেন নূর হোসেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে