দিনাজপুর: দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে নিবন্ধন জালিয়াতি করে করোনার টিকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৬০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক।
এ ঘটনায় টিকা নিবন্ধনে জালিয়াতির অভিযোগে মো. মনিরুল ইসলাম (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ীর ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সম্প্রতি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন অভিনব ঘটনা ঘটেছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, প্রথম দফা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন টিকা প্রদানের নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৩৬৩টি। নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৮৮০০ জন নিবন্ধন করেন। চাহিদার তুলনায় অনলাইন ডাটাবেজে টিকা পেতে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় কয়েক দিন থেকে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
নবাবগঞ্জ উপজেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, করোনার টিকা দেওয়া শুরুর দিকে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেওয়ার সময় গড়মিল পরিলক্ষিত হয়। আব্দুল খালেক এবং আব্দুল বাকি নামের দুই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের সংখ্যা ব্যবহার করে কয়েকদিন ধরে টিকা নিবন্ধন হওয়ায় বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়। এরপর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিটি ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে পুনরায় অনলাইনে যাচাই করা শুরু করে। এর অংশ হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন নিতে আসা ব্যক্তির নিবন্ধন ভুয়া বলে শনাক্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী জানান, ভুয়া নিবন্ধনধারী এক ব্যক্তির টিকা দিতে আসলে নিবন্ধনের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। ওই ব্যক্তি উপজেলা পরিষদ চত্বরের গেট সংলগ্ন মনিরুল ইসলাম মনির পেপার হাউজ থেকে নিবন্ধন পাওয়ার কথা জানান। তিনিসহ ৬০জন ভুয়া নিবন্ধন দিয়ে টিকা নেওয়া ব্যক্তি উক্ত ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিবন্ধনের কাগজ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
তিনি জানান, পরে ভুয়া নিবন্ধন করার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট (ইউএনও) মোছা. নাজমুন নাহার মনির পেপার হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. মনিরুল ইসলামকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। মনিরুল ইসলাম উপজেলার শাল্টি মুরাদপুর গ্রামের মো. আফছার আলীর ছেলে।
তিনি আরও জানান, ওই টিকা নেয়া ৬০ জনের নাম বৈধভাবে নেওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে তাদের নাম-ঠিকানা সংযোজন করা হচ্ছে।
কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, শিক্ষক হিসেবে টিকা পেতে অনলাইন ডাটাবেজে বেশ কয়েকটি শ্রেণি উল্লেখ করা হয়েছে। যে শ্রেণির মধ্যে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা পড়ে না। তাই টিকা পেতে এমন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, নিবন্ধন জালিয়াতির বিষয়ে জেনেছি। বিষয়টি দেখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার পর জেলার প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকাদানের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে। বিডি প্রতিদিন