এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দিনাজপুরের বিরামপুরে ঘূর্ণিঝড়ে আশ্রয়ণসহ শতাধিক বাড়িঘরের টিন উড়ে গেছে। এতে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার, টিন এবং নগদ অর্থ সহায়তার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ রবিবার দুপুরে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে এই বাড়িগুলো ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো মধ্যে বিরামপুর দিওড় এলাকার বাঁশবাড়িয়া আশ্রয়ণসহ ২৮টি, নবাবগঞ্জ বিনোদনগর ও গোলাপগঞ্জ এলাকার শতাধিক এবং হাকিমপুর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া এলাকার পাঁচটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ রবিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৭৭ মিলিমিটিরা বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে।
তবে আগামী দুই দিন এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আসাদুর জামান আসাদ।
সরেজমিনে বিরামপুর উপজেলার দিওড় ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি এলকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, উড়ে গেছে চারটি ঘর, কোনো কোনো ঘরের সামনের বারান্দার অংশগুলো বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে অবস্থানরত ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত টিনগুলো কুড়িয়ে জমা করছেন।
ওই আশ্রয়ণের ঘরে থাকা মমতা বেগম বলেন, ‘বিরামপুর এলাকায় কদিন থেকেই লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ঘরের মধ্যে বসে আছি।
হঠাৎ করে প্রবল বেগে ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে আমার ঘরের ওপরের টিনগুলো উড়ে যায়। বারান্দার টিনগুলো উড়ে পাশের ঘরে ওপর পড়ে যায়। এক পর্যায়ে আমার ঘরে থাকা চৌকির নিচে শুয়ে পড়ি।’ সাইদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল।
পরিবারের কয়েকজন নিয়ে ঘরের ভেতর ছিলাম। হঠাৎ বাইরে ঝড় শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পর কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার ঘরের চালাগুলো উড়ে যায়। টিনগুলো এলোমেলোভাবে উড়তে থাকে। আমরা এমনিতেই অসহায়। আমাদের আর কিছু থাকল না। রাতে কী খাব, কোথায় ঘুমাব, আমরা জানি না। শুনছি আমাদের নাকি সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাইনি। আমরা এখন অসহায়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুপুরে আকস্মিক ঝড়ে নবাবগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়ন, হাকিমপুর উপজেলা খট্টা মাধবপাড়া ইউনিয়নের বেশ কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারের জন্য শুকনা খাবার, নগদ অর্থ এবং এক বান্ডেল টিন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইএনও নুজহাত তাসনীম আওন বলেন, ‘দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে বিরামপুর উপজেলার আশ্রয়ণের চারটি বাড়িসহ বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু গাছ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো পরিদর্শন করে শুকনা খাবার, এক বান্ডেল টিন এবং নগদ অর্থ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।’
জানতে চাইলে দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, ‘আমার সংসদীয় আসনে আজ হঠাৎ এক ঘূর্ণিঝড়ে শতাধিক বাড়ি, গাছপালা এবং ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের তিন হাজার টাকা, এক বান্ডেল টিন এবং শুকনা খাবার দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি শারীরিক অসুস্থতার জন্য ঢাকায় আছি। রাতেই রওনা হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে আমি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে বলেছি তারা যেন ওই পরিবারগুলোর পাশে থাকে। আমি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও তাদের সহায়তা করব।’