দিনাজপুর : কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরে বিভিন্ন হাটবাজারে কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ৮০ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। বর্তমানে তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি দরে।
দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় কাঁচা বাজার বাহাদুর বাজারসহ জেলা উপজেলার ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহের কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মরিচ ক্ষেত নষ্ট হওয়ার কারণে আমদানি কমে গেছে। সে কারণে মরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজার, সুইহারী বাজার, রামনগর বাজার, উপশহর বাজার, পুলহাট বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি হলেও বাজারে মরিচের দামের ওপর এর প্রভাব পড়ছে না। কারণ আমদানী হওয়া কাঁচা মরিচ দিনাজপুরের বাজারে পাওয়া যায় না।
সব চলে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে। চাহিদার তুলনায় কাঁচামরিচ আমদানি কম হওয়ায় এবং দেশে উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দিকে নিত্য প্রয়োজনীয় মসলা ও সবজি জাতীয় পণ্যেরও দাম বাড়ছে। পিয়াজও বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সোমবার সকালে বাহাদুর বাজারে বাজার করতে আসা লুৎফর রহমান বলেন, ‘সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি। আগে এক পোয়া নিলেও আজকে নিলাম ১০০ গ্রাম। এভাবে দাম বাড়লে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চলা কঠিন হয়ে যাবে।’
এছাড়াও দিনাজপুরের চিরিবন্দর, বীরগঞ্জ,বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বাজার গুলোতেও খবর নিয়ে একই খবর পাওয়া গেছে।
বিরামপুর বাজারের ব্যবসায়ী কুদ্দুস আলী বলেন, ‘কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে মরিচ নষ্ট হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে কাঁচামরিচ আমদানি হচ্ছে না। সেই কারণে বাহির থেকে বেশি দামে কাঁচামরিচ কিনে আনতে হচ্ছে।’
বাহাদুর বাজারের সহরাফ আলী নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমদানী কম তাই দাম বেড়েছে। আমরা বেশি দামে কিনছি তাই চড়া দামে বিক্রি করছি।’
ফুলবাড়ী উপজেলার মাদিরাহাট গ্রামের কৃষক জনাব আলী বলেন, ‘বৃষ্টির পর অতিরিক্ত গরমের কারণে মরিচ গাছের পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। গাছ মরে যাছে। ফলে মরিচের উৎপাদন কম হচ্ছে। ১০ কাঠা জমিতে মরিচ লাগিয়েছিলাম। ১৫ দিন পর মাত্র ২০ কেজি মরিচ তুলতে পেরেছি। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘৫০ শতক জমিতে এবার মরিচ আবাদ করেছি। খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। মরিচের গাছ বৃষ্টির কারণে মরে যাচ্ছে। আজ ১ হাজার গাছ থেকে মরিচ তুলেছি মাত্র ৪০ কেজি। পাইকারি ২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। মরিচের গাছ নষ্টের কারণে ফলন কম হওয়ায় লোকশান গুনতে হচ্ছে।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর দিনাজপুরে মরিচ আবাদ হয়েছে ৯৬২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৭৩২ টন। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৯৯০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজার ৭৮২ টন।’
দিনাজপুর কৃষি বিপণন সিনিয়র কর্মকর্তা রবিউল হাসান বলেন, ‘লাগাতার বৃষ্টির কারণে মরিচ চাষিদের ক্ষেত নষ্ট হওয়ার কারণে ফলন কম হচ্ছে। ফলে মরিচের দাম দিন দিন বাড়ছে।’