সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:২৯:৩৮

ঘোড়ায় চড়ে ৯০ বছর

ঘোড়ায় চড়ে ৯০ বছর

সরোয়ার মোর্শেদ: প্রায় ৯০ বছর ধরে ঘোড়ায় চড়ে সব জায়গাতেই চলাচল করেন আবু তালেব সরকার। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার পাবনার চাটমোহর-ভাঙ্গুরা সড়কের গুনাইগাছা ইউনয়ন পরিষদের সামনে থেকে তোলা l প্রথম আলোজন্মের পরই ছেলের জন্য ঘোড়া কিনে এনেছিলেন বাবা। দুই বছর বয়সে বসতে শেখার পর থেকে বাবার কোলে উঠে ঘোড়ায় চড়া শুরু। ৮-১০ বছর বয়সে নিজেই সওয়ার হওয়া শুরু করেন ছোট ঘোড়ায়। এখন ৯২ বছর বয়সেও ঘোড়ায় চড়েই চলেন তিনি।
শৌখিন এই ব্যক্তির নাম আবু তালেব সরকার। বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে। ২০ বছর বয়সে সরকারের টিকাদান কর্মসূচিতে চাকরি পেয়েছিলেন। ঘোড়ায় চড়া যাবে না বলে তা-ও ছাড়েন। পৈতৃক জমি দেখাশোনা ও কৃষিকাজ করে জীবিকা চালাচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চাটমোহর-ভাঙ্গুরা সড়কে দেখা মেলে আবু তালেব সরকারের। পাকা সড়ক দিয়ে টগবগ করে ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছিলেন। চোখে-মুখে বয়সের ছাপ। ঠিকমতো শুনতে পান না। সড়কে চলা মানুষ তাঁর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল।
চলার পথেই কথা হয়। আবু তালেব তাঁর ঘোড়ায় চড়ার গল্প শোনান। বলেন, পরিবারের বড়দের কাছ থেকে জেনেছেন, দুই বছর বয়সে তিনি যখন বসতে শেখেন তখন থেকেই বাবা তাঁকে কোলে নিয়ে ঘোড়ায় চড়তেন। বাবার সঙ্গে ঘোড়ায় চড়ে এখানে-সেখানে যেতেন। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ধীরে ধীরে তাঁদের ছোট ঘোড়াটি নিজেই দেখাশোনা করা শুরু করেন। গোসল করানো থেকে শুরু করে ঘাস খাওয়ানো—সবই করতেন তিনি। এরপর নিজেই সওয়ারি হয়ে ওঠেন। মৃত্যুর আগে বাবা তাঁর জন্য তিনটি ঘোড়া রেখে যান।

শৌখিন এই ঘোড়সওয়ার বলেন, ২০ বছর বয়সে কলেরা-বসন্তের টিকাদান কর্মসূচিতে তাঁর চাকরি হয়। কিন্তু সেখানে ঘোড়ায় চড়ার সুযোগ ছিল না। ফলে বাবার ইচ্ছায় চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। শুরু করেন পৈতৃক জমি দেখাশোনা। সেই থেকে তিনি এ পর্যন্ত ঘোড়ায় চড়েই চলছেন। হাট-বাজারে যাওয়া, বেড়ানো, জমির খাজনা দেওয়াসহ সব কাজেই তিনি ঘোড়ায় চড়ে যেতেন।
আবু তালেব সরকার বলেন, ‘ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতি ভালো লাগে। শরীল-মন ভালো থাহে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ঘোড়ায় চড়েই চলবের চাই।’

স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, আবু তালেব সরকার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের বাবা। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। সবাই এখন পৃথক থাকেন। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে বাস করেন। এই বয়সেও তিনি বেশ সবল। ফলে ঘোড়া দেখাশোনা থেকে শুরু করে সব কাজ নিজেই করেন।

গুনাইগাছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবেদ আলী বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই ওনাকে (আবু তালেব) ঘোড়ায় চলতে দেখছি। উনি যখন সামনে দিয়ে যান, তখন আগেকার দিনের জমিদার, রাজা-বাদশাহদের কথা মনে পড়ে। বিষয়টা বেশ ভালো লাগে।’

চাটমোহর উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী রনি রায় বলেন, ‘আবু তালেব প্রতি হাটবারে এখানে ঘোড়া নিয়ে আসেন। শখ যে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে পারে, তার উদাহরণ তিনি। তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হই।’-প্রথম আলো
২১ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে