সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ০৫:৫৯:১০

মারা গেছে শিশুটি, ৪ মিনিট দেরিতে আসায় চিকিৎসা করেননি নিষ্ঠুর এক ডাক্তার!

মারা গেছে শিশুটি, ৪ মিনিট দেরিতে আসায় চিকিৎসা করেননি নিষ্ঠুর এক ডাক্তার!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রোগী দেখানোর নির্দিষ্ট সময়ের মাত্র চার মিনিট পরে পৌঁছানোর কারণে পাঁচ বছরের এক মেয়েশিশুর জরুরি চিকিৎসা করেননি এক নারী চিকিৎসক। এমন অমানবিক ঘটনার মাত্র পাঁচ ঘণ্টা পরে অ্যাজমা আক্রান্ত শিশুটি মারা গেছে।

ঘটনার জন্য অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত এবং চিকিৎসক নিবন্ধন তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন শিশুটির পরিবার।

২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যে শিশুটি মারা যায় বলে সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নিউপোর্টের বাসিন্দা এলি মে নামের শিশুটি এবং তার মা কিছুক্ষণ দেরিতে ক্লিনিকে পৌঁছালে শিশু চিকিৎসক জোয়ানে রো তাদের ফিরিয়ে দিয়ে পরদিন আসতে বলেন।

এর পাঁচ ঘণ্টা পর অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে শিশুটি মারা যায়।

এদিকে অমানবিক ঘটনার জন্ম দিলেও ডা. রোকে শুধু সতর্ক করেই দায়িত্ব শেষ করেছে যুক্তরাজ্যের জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল।

ঘটনার ব্যাপারে নানি ব্রান্ডি ক্লার্ক বলেন, এলি ও তার মা শানিস মাত্র কয়েক মিনিট পরে ক্লিনিকে পৌঁছেন। শানিস ক্লার্ক রিসিপশনিস্টকে তাদের ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারার কথা জানান। কিন্তু চিকিৎসক কোনও কথা না শুনে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেন।

আমাদের আদরের ফুটফুটে শিশুকে জীবন দিয়ে চিকিৎসকের এমন কঠোর সিদ্ধান্তের মূল্য দিতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ব্রান্ডি ক্লার্ক।

তিনি বলেন, এলির মৃত্যুতে আমাদের জীবন ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। কিন্তু ডা. রো নতুন চাকরি করার অনুমতি পেয়েছেন এবং তিনি পুরোপুরি জীবনকে এমনভাবে গুছিয়ে নিয়েছেন যেন কিছুই ঘটেনি।

শিশু এলি মে বিভিন্ন সময়ে গুরুতর অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়েছিল। এরমদ্যে তাকে পাঁচবার হাসপাতালে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল।

রবিবার ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ কারণে একজন অ্যাজমা আক্রান্ত হয়ে এলি মের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে জানিয়ে একজন শিশু চিকিৎসক ডা. রোকে তার আচরণের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন।

ঘটনার দিন ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি এলি মে স্কুলে গেলে সেখানে তার অ্যাজমার সমস্যার অবনতি হয়। বিষয়টি টের পেয়ে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্কুল শিক্ষক।
 
এরপর ২৫ বছর বয়সী সিঙ্গেল মা শানিস তার মেয়ের জরুরি চিকিৎসার জন্য নিউপোর্টের গ্রেঞ্জ ক্লিনিকে যোগাযোগ করেন। তখন তাকে বিকাল ৫টায় ক্লিনিকে যেতে বলা হয়।

শানিস ফোন করার পর তার হাতে মাত্র ২৫ মিনিট সময় ছিল। এ সময়ের মধ্যে তাকে দু মাস বয়সী আরেকটি বাচ্চাকে একটি শিশুযত্ন কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করতে হয় এবং এক মাইল দূরের ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে একজন বন্ধুকে অনুরোধ করতে হয়।

একারণে অসুস্থ এলিকে নিয়ে নির্দিষ্ট সময় পাঁচটার মাত্র চার মিনিট পরে ক্লিনিকে পৌঁছান শানিস। তখন তাদের রোগীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পরে নির্দিষ্ট সময় না পৌঁছানোর অভিযোগ তাদের ফিরিয়ে দিয়ে সকালে আসতে বলা হয়।

এদিকে চিকিৎসা না পেয়ে বাসায় ফেরার পর এলির অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে সে অসাড় হয়ে গেলে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে '৯৯৯' নম্বরে ফোন করেন মা শানিস।

পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিউপোর্টের রয়্যাল ওয়েন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা দেড় ঘণ্টা চেষ্টা করেও এলিকে সুস্থ করতে ব্যর্থ হন।

মেয়ের এমন করুণ পরিণতির কারণে এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি শানিস। এ কারণে তিনি এ ব্যাপারে কোনো কথাও বলতে পারেননি।

এলির নানি বলেন, আমরা সবাই প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছি। আমি মনে করি ডা. রো যা করেছে এজন্য তার জেলে যাওয়া উচিত। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে চিকিৎসক নিবন্ধন তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, এমনকি ডা. রো আমাদের কাছ ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি। তাকে শুধু সতর্ক করার মতো হাল্কা শাস্তি দেয়া হয়েছে। তাকে আরেকটি চাকরি নিয়ে স্বাভাবিক জীবন কাটানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ডা. রো ১৯৮৬ সালে চিকিৎসক হিসেবে ডিগ্রি অর্জন করেন। গ্রেঞ্জ ক্লিনিকে ২২ বছর একজন সিনিয়র চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ক্লিনিকটির শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান ছিলেন।
এমটি নিউজ২৪ ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে