মো. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর প্রতিনিধি : দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের মেলা আয়োজনের খবর পাওয়া যায়। মেলায় বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাওয়া যায়, কিন্তু কখনো কি শুনছেন জামাইদের মাছের মেলার কথা, যেখানে বিশাল বিশাল মাছ উঠে থাকে। জামাইদের মধ্যে মাছ কেনার প্রতিযোগিতা চলে। যিনি সবচেয়ে বড় মাছ কিনেন তার নাম তালিকায় নাম্বার ওয়ান।
জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে মাছের মেলার আয়োজন করা হয়। মূলত এটা জামাই মেলা। এ দিন ঘিরে এখানে দিনব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী। মেলায় একসঙ্গে রথও দেখা হয়, কলাও বেচা হয়।
এটা জামাই মেলা হলেও এখানে বসে মাছের বিরাট মেলা। বিনিরাইল ও এর আশপাশে গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সেসব জামাই এ মেলার মূল ক্রেতা। এ মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে নীরব প্রতিযোগিতা। কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে পারেন তা দেখার অপেক্ষায় থাকে দর্শনার্থীরা।
অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি নবান্ন উৎসবে এ মেলার আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫০ বছর ধরে এ মেলার আয়োজন হয়ে আসছে।
গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ এ মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে আসেন। প্রতিবছর পৌষ-সংক্রান্তির সময় অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।
মেলায় প্রায় তিন শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টির পসরাও রয়েছে। মাছের মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কাল বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইন, কাইকলা, রূপচাঁদার পাশাপাশি পাওয়া যায় নানা রকমের দেশীয় মাছ।
একটি বাঘাড় মাছের দাম হেঁকেছেন ২২ হাজার টাকা। মাছটিকে ঘিরেই সবার আকর্ষণ। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় রামচন্দ্রপুর এলাকার জামাই ফারুক মাছটির দাম করেছেন ১১ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রেতার চাহিদা আরো বেশি। চলছে দর কষাকষি। মাছটি দেখার জন্য ক্রেতার চেয়ে উৎসুক জনতার ভিড়।
মাঘ মাসের দ্বিতীয়দিন শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার জামালপুর, বক্তারপুর ও জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় লোকে লোকারণ্য।
মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু ও সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন শেখ সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে বলে জানান তারা।
তারা জানান, অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে এ মেলার আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫০ বছর ধরে এ মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে মেলাটি।
১৫ জানুয়ারি,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম