সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৫:১৫:৫৯

আমাদের দেশে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার

আমাদের দেশে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আমাদের দেশের অনেক মানুষই কুসংস্কার বিশ্বাস করে থাকেন। আর কুসংস্কারের বিষয়গুলোই আমাদের দেশে অভাব নেই। অবশ্য শুধু আমাদের দেশেই বা কেন? কম-বেশি কুসংস্কার সব দেশের মানুষের মাঝেই লক্ষ করা যায়। দেখে নেয়া যাক, আমাদের দেশে কোন কোন কুসংস্কার গুলো সবথেকে বেশি মানা হয়। আর এর পিছনের যুক্তিগুলোই বা কি থাকতে পারে!

১) খাওয়ার সময় ঢেঁকুর উঠা : খাওয়ার সময় যদি কারো ঢেঁকুর আসে বা মাথার তালুতে উঠে যায় তাহলে মনে করা হয় কেউ স্মরণ করছে বা গালি দিচ্ছে। এতে অনেকে খুব বেশি খুশি হন। কারণ দূরে থাকা আপনজন তাকে স্মরণ করছে।

২) বিড়ালে রাস্তা কাটা : এবিষয়টা আমাদের দেশে খুবই মানা হয়। রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যেতে যেতে অথবা হেঁটে যাওয়ার সময় কোনও বিড়াল রাস্তা পার হলে, বিশেষ করে কালো বিড়াল দেখলেই মানুষ দাঁড়িয়ে পড়ে। তার কারণ ধরা হয় যে, সাধারণত, বিড়াল জাতীয় প্রাণীদের অন্য বড় পশুরা তাড়া করে। সেক্ষেত্রে বিড়ালকে দেখার পর একটু দাঁড়িয়ে গেলেই ভালো হয়। তাহলে বিপদের সম্ভাবনা কম থাকে।

৩) গভীর রাতে পেঁচার ডাক : পেঁচা তো রাতেই ডাকবে! তার পরও গভীর রাতে পেঁচার ডাককে অনেকে ঝগড়া-বিবাদের সংকেত মনে করেন। পেঁচা রাতে মাটি কামড়ে নাকি ঝগড়া বাড়িয়ে দিতে চায়। বাস্তবে ইঁদুর শিকারের জন্য রাতে পেঁচা মাটিতে নেমে আসে।

৪) ভাঙা আয়না ব্যবহার করা : অনেকেই আয়না ভেঙে যাওয়ার পরও তা ব্যবহার করেন। এবিষয় টাকেই আমাদের সমাজে কুসংস্কার হিসেবে মনে করেন। এই আয়না রাতের বেলারয় দেখলে বাবা-মা মারা যেতে দেখতে পাবেনা। ভাঙা আয়না মুখ দেখা ভালো নয়, অমঙ্গল হয়। এমন কিছু কুসংস্কার আমাদের সমাজে বিরাজমান। মূল কথা হলো এতে চোট লাগার সম্ভাবনা থাকে।

৫) রাতে বিশেষ কিছু হস্তান্তর না করা : রাতের বেলা কাউকে সুই-সুতা, টাকা, চুন, হলুদ জাতীয় কিছু না দেওয়ার রেওয়াজ আছে। তাই গেঞ্জি ও গামছা ছিঁড়ে গেলে রাতে সেলাই করেন না অনেকে। রাতের বেলা কাউকে চুন ধার দিলে চুন না বলে দই বলা হয়।

৬) সূর্যাস্তের পর নখ না কাটা : সূর্যাস্তের পর নখ কাটতে বারণ করা হয়। কারণ রাতের বেলাতে নখ কাটলে অমঙ্গল হয়। মূলত তার পিছনে যুক্তি হল, সূর্য ডোবার পর আলো কমে যায়। তাই নখ কাটতে গিয়ে আঙুল কেটে যেতে পারে।

৭) হাতের তালু চুলকানো : ডান হাতের তালু চুলকালে টাকা আসবে। আর বাম হাতের তালু চুলকালে বিপদ আসবে।

৮) রাতে ফুল নাছেড়া : রাতে ফুল নাছেড়া বা ফুলে হাত দিতে মানা করা হয়। কারণ রাতে কানো কিছু ছেড়া ঠিকনয়। এতে অমঙ্গল হতে পারে। মূলত রাতে গাছে নানারকম বিষাক্ত পতঙ্গ থাকে। তা কামড়ে দিতে পারে। এই কারণেই বারণ করা হয়ে থাকে।

৯) রাতে ঘরের বাইরে পানি না ছোড়া : গ্রামে রাতের খাওয়ার পর হাত ধোয়ার পানি সাধারণত ঘরের বাইরে ছুড়ে ফেলা হয় না। সংস্কার আছে, রাতে এভাবে পানি ফেলা ঠিক না। এতে নাকি অমঙ্গল হয়।

১০) বাদুড় ঘরে ঢুকলে মৃত্যু হবে : সাধারণত, বাদুড়কে ভৌতিক প্রাণী বা পাখি হিসেবেই ধরা হয়। তাই বাদুড় ঘরে ঢোকাকে অশুভ হিসেবেই মানা হয়। কিন্তু এর পিছনে যুক্তিটা হল, বাদুড় রক্ত খায়। আর রক্তের স্বাদ পাওয়া কোনও প্রাণী ঘরে ঢোকা মানে বিপদেরই সম্ভাবনা।

১১) যাত্রাপথে খালি কলস দেখা : বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় যদি সামনে খালি কলস পড়ে বা কেউ খালি কলস নিয়ে গেলে অনেকে যাত্রা বন্ধ রাখেন। কারণ যাত্রাপথের খালি কলস কাজে ব্যর্থ হওয়ার লক্ষণ। আবার অনেকে এটাকে অভাবের আগাম সংকেত হিসেবে ধরে নেন।

১২) গায়ে টিকটিকি পড়া মানে মৃত্যু - সাধারণত আমাদের দেশে কারও গায়ে টিকটিকি পড়া মানে অশুভ ধরা হয়। বলা হয়, সেই মানুষটি মরে যেতে পারে। এর পিছনে যুক্তি হল, টিকটিকি বিষাক্ত প্রাণী। সে গায়ে পড়ার অর্থ কোনও বিষক্রিয়া হতেই পারে।

১৩) পিছন থেকে ডাকা : ঘর থেকে বের হলে পেছন ফিরে তাকানো নিষেধ। তাতে যাত্রা ভঙ্গ হয় বা অশুভ হয়। কবিতার ভাষায় বলা যায়, ‘খালি কলস দেখলে ভাল যদি ভরতে যায়, পিছনে ডাকলে মঙ্গল হয় যদি ডাকে মায়।’

আরও বলা হয়, বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়লে যাত্রা অশুভ হয়। বাইরে বের হওয়ার সময় কোনো কিছুতে বাধা পড়লে অনেকে একটু বসে যান। কারণ যাত্রার শুরুতে বাধা পড়লে পথে বিপদ হতে পারে।
১৮ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে