শনিবার, ০৭ মে, ২০১৬, ১২:৪০:৩০

৫ পয়সার মামলা আইনি লড়াইয়ে ৪০ বছর

৫ পয়সার মামলা আইনি লড়াইয়ে ৪০ বছর

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: আক্ষরিক অর্থে পাঁচ পয়সার মামলাই। আজ থেকে ৪০ বছর আগে পাঁচ পয়সা চুরির অপবাদে ভারতে এক ব্যক্তি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় জিততে আজও লড়ে যাচ্ছেন রণবীর সিং যাদব (৭০) নামের ওই ব্যক্তি। যদিও পাঁচ পয়সার পেছনে এরই মধ্যে লাখ লাখ টাকা ঢালতে হয়েছে তাঁকে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, ১৯৭৩ সালে ঘটনার সূত্রপাত। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া’র।

দিল্লির বাসিন্দা রণবীর তখন দিল্লি ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের বাস কন্ডাক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় অভিযোগ ওঠে, তিনি সরকারের পাঁচ পয়সা আত্মসাৎ করেছেন। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, এক মহিলা যাত্রীর কাছ থেকে ১৫ পয়সা ভাড়া নিয়ে তিনি নাকি ১০ পয়সার টিকিট দিয়েছিলেন।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দিল্লি ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন। সেখানে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৯৭৬ সালে চাকরি হারান রণবীর। কিন্তু অপবাদ মাথায় নিতে রাজি নন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন, সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন, মামলা করবেন। সেই মামলাই ৪০ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন রণবীর; আজও নিষ্পত্তি হয়নি।

সে ১৯৭৩ সালের কথা। তখন দিল্লি ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের বাসের একজন কন্ডাক্টর ছিলেন রণবীর সিং যাদব। তখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, তিনি এক নারী যাত্রীর কাছ থেকে ১০ পয়সার টিকিটে অতিরিক্ত ৫ পয়সা বেশি নিয়েছেন। মোট ১৫ পয়সা ভাড়া নিয়েছেন তিনি।

কর্তৃপক্ষ ওই বাসে থাকা অন্য স্টাফদের দিয়ে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে। তাতে প্রাথমিক অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়। তারই ভিত্তিতে রণবীর সিং যাদবকে বরখাস্ত করা হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। এ মামলায় লেবার কোর্টে ১৯৯০ সালে বিজয়ী হন রণবীর। তখন কোর্ট রায় দেয় যে, তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে অবৈধ উপায়ে।

এর পরের বছরই এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দিল্লি ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন। তারপর থেকে এ পর্যন্ত তারা এ মামলা জিততে খরচ করেছে ৪৭ হাজার রুপি।  এ বিষয়ে রণবীর বলেন, ওই সময়ে তিনি দুটি পুত্র সন্তানের জনক। তারা তখন অনেক ছোট। তারা পর্যন্ত তার কাছে জানতে চায়, তিনি প্রতারণা করেছেন কি না। রণবীর বলেন, তাদের কাছে আমার বেদনার কথা ব্যাখ্যা করতে পারিনি। বলতে পারিনি যে আমি প্রতারণা করিনি।

এ বছরের জানুয়ারিতে দিল্লি ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের পিটিশন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট। ডিটিসিকে আদালত থেকে নির্দেশ দেয়া হয়, তারা যেন রণবীর সিংকে ৩০ হাজার রুপি পরিশোধ করে। একই সঙ্গে তাকে ১ লাখ ২৮ হাজার রুপি গ্র্যাচুইটি ও এক লাখ ৩৭ হাজার রুপি সিপিএফ হিসেবে পরিশোধ করা হয়। শুনানির সময় আদালত ডিটিসির কাছে জানতে চায়, ওই ৫ পয়সা উদ্ধার করতে গিয়ে এত বছর আইনি লড়াইয়ে কত লাখ রুপি খরচ হয়েছে।

আদালত বলেন, এটা এমন একটা মামলা যে মামলায় ডিটিসির বিরুদ্ধে ৪০ বছরেরও বেশি আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রণবীর। তিনি লেবার কোর্ট ও হাই কোর্টে বিজয়ী হলেও এখনও এর ফল পাননি। দৃশ্যত আইনি লড়াই শেষ হয়েছে বলে মনে হলেও তা আসলে হয়নি। কারণ এ মামলার পরবর্তী আরেকটি শুনানি হবে ২৬শে মে। তা হবে করকরদুমা কোর্টে।

ওদিকে রণবীর সিংয়ের স্ত্রী বিমলা বলেন, ৫ পয়সা বা ২ পয়সা- যার জন্যই এ মামলা হয়ে থাকুক না কেন, আমাদেরকে যেভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে তার মূল্য লাখ লাখ রুপি। পয়সার প্রচলন বাতিল হয়ে গেলেও আমাদের কপাল আটকে আছে।

৭ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে