এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বছরের মধ্যে বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে বেড়ে যায় বজ্রপাতের সংখ্যা। বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। একদিনেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাতে মারা গেছেন ৩৯ জন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বের বজ্রপাতে মুত্যুর এক-চতুর্থাংশ ঘটে বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইটনিং সেফটি ইনস্টিটিউটের ২০১০ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে।
বজ্রপাতের সময় কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়- এ বিষয়ে ধারণা থাকা খুবই জরুরি। মৌসুমী বায়ু প্রবেশের আগ মুহূর্তে ঘন কালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে। রাস্তায় থাকাকালীন মেঘের আওয়াজ শুনলেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে।
পাকা বাড়িতে আশ্রয় বেশি নিরাপদ। গাড়ির ভেতরেও আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। গাছের নিচে, টেলিফোনের খুঁটির পাশে বা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের খুঁটির পাশে দাঁড়ানো মোটেও নিরাপদ নয়।
ফাঁকা মাঠের মধ্যে অবস্থান সবচেয়ে বিপজ্জনক। পানির সংস্পর্শে মোটেই যাওয়া যাবে না। বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন না থামা পর্যন্ত নিরাপদে থাকাটাই শ্রেয়।
বজ্রপাতের আওয়াজ শোনার আগেই তা মাটি স্পর্শ করে। সোজাসোজি মানুষের গায়ে পড়লে মৃত্যু অবধারিত। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করাও বিপজ্জনক। তবে শুকনো কাঠ দিয়ে ধাক্কা দিতে হবে।
ঝড়ের পূর্বাভাস দেখা গেলে খোলা মাঠ, পাহাড়ের চূড়া, সমুদ্র সৈকতে অবস্থান করা মোটেও ঠিক নয়।
অনেক সময় নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। তখন নিজেকে যতটা সম্ভব গুটিয়ে নিতে হবে।
মাথার চুল যদি একদিকে লম্বা হয়ে থাকে তাহলে বজ্রপাত পড়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ বজ্রপাত সব সময় উঁচুতে আঘাত হানে।
বজ্রপাতের সময় কোনো খোলা মাঠে বা খোলা স্থানে কোনো অবস্থাতেই দাঁড়ানো যাবে না। ওই স্থানে যদি কোনো বড় গাছ না থাকে, তবে আপনি সেই স্থানের সবথেকে উঁচু। তাই বজ্রপাত আপনাকেই স্পর্শ করবেই।
যদি খোলা মাঠে থাকেন তাহলে পায়ের পাতায় ভর করে হাঁটুর উপর হাত রেখে যতটা সম্ভব মাথা নিচু করে রাখুন। তবে হাঁটু বা হাত কোনোটাই যেন মাটিতে না স্পর্শ করে।
বজ্রপাতের সময় শুয়ে পড়তে হয়- এমন ধারণা মারাত্মক ভুল। এতে বজ্রপাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা শতভাগ। যদি নদীতে নৌকায় থাকেন তাহলে একইভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিন।
সম্ভব হলে ছইয়ের নিচে অবস্থান নিতে পারেন। বনের মধ্যে থাকলে বড় গাছের নিচে না গিয়ে ছোট গাছপালার নিচে নিজেকে গুঁটিয়ে রাখুন।
কর্ডযুক্ত কোনো ফোন ব্যবহার করবেন না। বাড়ি নিরাপদ রাখতে আর্থিং সংযুক্ত রড বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত পানির ফোয়ারায় গোসল করবেন না।
বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হলে বিদ্যুতের সব সুইচ এবং দরজা-জানালা ভালোমতো বন্ধ রাখতে হবে। বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালা স্পর্শ করবেন না।
এ সময় ধাতববস্তু যেমন- বাড়ির ধাতবকল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র যেমন- টিভি, ফ্রিজ, পানির মোটর ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরা যাবে না।
বজ্রপাতের আভাস পেলে আগেই এগুলোর প্লাগ খুলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণগুলো ভালোভাবে জেনে রাখা উচিত।
আশপাশে বজ্রপাত হওয়ার আগ মুহূর্তে কয়েকটি লক্ষণে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন- বিদ্যুতের প্রভাবে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির ভাব আসবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য বজ্রপাত প্রাকৃতিক চার্জ হিসেবে কাজ করে। বজ্রপাতকে কখনোই প্রতিরোধ করা যাবে না। তবে উপস্থিত বুদ্ধি ও কৌশল জেনে কাজে লাগালে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
১২ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম