বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:২০:৪৯

শুধু চিপস খেয়ে ১৫ বছর

শুধু চিপস খেয়ে ১৫ বছর

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ব্রিটেনের কর্নওয়ালে হানা লিট্ল নামের এক তরুণী ২০ বছর ধরে ধরে শুধু চিপস খেয়েই বড় হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তাকে পিৎজা খাওয়াতে সক্ষম হলেন লন্ডনের এক মনোবিদ।

মনোবিদদের মতে, ‘সিলেকটিভ ইটিং ডিসঅর্ডার’ (এসইডি)-এর শিকার হানা। কোনও খাবার দেখলেই আতঙ্কে, ভয়ে শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। পাঁচ বছর বয়সে মুখরোচক চিপসের স্বাদ পেয়েছিল হানা। তার পর থেকে আর কোনও খাবারই খাওয়ানো যায়নি তাঁকে। কিছু দিন পরে খাদ্যতালিকায় যোগ হয় স্যালাড। ব্যাস, এটুকু খেয়েই দেড় দশক কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তবে দিনগুলো এতটা সহজ ছিল না । হানা বন্ধুদের আড্ডায় সহজ ভাবে যোগ দিতে পারতেন না। সব সময় দুশ্চিন্তা থাকত, সেখানে কী খাওয়া দাওয়া হবে, আর সে সব খাবারের সামনে পড়ে কী প্রতিক্রিয়া হবে তার।

হানা বললেন, নানা রকমের খাবার দেখলেই ভয় লাগত আমার। এমনকী খাবার দেখে যে কী করে ফেলব, সে সম্পর্কে নিজের ওপরেই নিয়ন্ত্রণ ছিল না। বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি, পিকনিক নানা জায়গায় গেলেও খাবারের আতঙ্ক সব সময় তাড়া করে বেড়াত আমায়।

কিন্তু চিপ্স জিনিসটা যে কোনও কারণেই হোক অতটা বিপদে ফেলেনি হানাকে। তাঁর কথায়, একমাত্র সাধারণ চিপ্সই খেতে পারতাম আমি। আসলে নানা রকম মশলার গন্ধই উত্তেজিত করে তুলত। এ প্রসঙ্গে প্রথম বার প্রেমিকের বাড়িতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা জানালেন হানা।

হানা বললেন, ও জানত না আমার অসুখের কথা। প্রথম যখন ওর বাড়িতে গেলাম, আমায় পাস্তা বানিয়ে দিয়েছিলেন ওর মা। কিন্তু মুখে তুলতে পারিনি আমি। সে সম্পর্ক অবশ্য ভেঙে গিয়েছিল, এই অসুখের কারণে সম্প্রতি ছাড়তে হয় চাকরিও। অনেক ডায়েটিসিয়ান, মনোবিদ দেখিয়েও কোনও কাজ হয়নি। সব মিলিয়ে বাড়ছিল অবসাদ।

কিন্তু উত্তর লন্ডনের সম্মোহন বিশেষজ্ঞ ও মনোবিদ ফেলিক্স ইকোনোম্যাকিসের কাছে যাওয়ার পরেই সমাধানের রাস্তা বেরোল। সম্মোহনকে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা শুরু করলেন তিনি। ফেলিক্স বললেন, এসইডি আক্রান্ত রোগীদের মূল সমস্যা লুকিয়ে থাকে অবচেতনে। হানার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল।

খাবার নিয়ে শৈশবের কোনও খারাপ স্মৃতি ওর সচেতন মনে না থাকলেও অবচেতনে থেকে গিয়েছে। এমনকী ওর বাবা মা-ও এ বিষয়ে কিছু মনে করতে পারেননি। আমি সম্মোহনের মাধ্যমে ওর অবচেতনে ঢুকে সেই খারাপ স্মৃতির উৎসটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করি। অতীত খুঁড়ে আতঙ্কটাকে বার করে আনার চেষ্টা করি।

চিকিৎসা শুরুর প্রথম দিন হানাকে একটি আম খাওয়ান ফেলিক্স। হানা বললেন, সে দিনই প্রথম আমি আমের স্বাদ পেলাম। এখন আমার সব চেয়ে পছন্দের ফল আম। আর আমের পরেই পিৎজা। এখনও চলছে চিকিৎসা। তবে গোড়া থেকেই খুব ভাল সাড়া মিলছে চিকিৎসায়। নিজেকে এখন অনেক সুস্থ মনে হয়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরে আমি খুব খুশি। বললেন হানা।
২৪ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস
 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে