শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭, ০১:৫৮:২০

ফরিদপুরে হেভিওয়েটদের সঙ্গে পাল্লায় তরুণ প্রার্থীরা

ফরিদপুরে হেভিওয়েটদের সঙ্গে পাল্লায় তরুণ প্রার্থীরা

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর থেকে : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন সরগরম ফরিদপুরের রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা এরই মধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন।

এ জেলায় বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণ প্রার্থীরা মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জেলার চারটি (২১১, ২১২, ২১৩ ও ২১৪) আসনেই এখন পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেটের মাধ্যমে বার্তা পাওয়া যাচ্ছে আগামী নির্বাচনের। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিতরে-বাইরে কম-বেশি দ্বন্দ্বও রয়েছে।

নানা কর্মসূচিতে সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশও হচ্ছে আওয়ামী লীগে। গ্রুপিংয়ের কারণে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সাংগঠনিকভাবে বিএনপি এখন অনেকটাই দুর্বল। জেলা কমিটি ঘিরে রয়েছে নানা বিভাজন। জাকের পার্টির কিছু জনসমর্থন থাকলেও জাতীয় পার্টি, জামায়াত বা অন্য কোনো দলের তেমন কোনো তৎপরতা নেই ফরিদপুরে।

কার্যত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। তবে একটি বাদে জেলার তিনটি আসনে দুই দলেরই প্রার্থীর ছড়াছড়ি। দুই দলে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।

ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-মধুখালী) আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চলছে জটিল সমীকরণ। তিনটি উপজেলায় কোন্দলে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ। ফলে এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বেশ চাপের মধ্যেই রয়েছেন।

গত দুবারের নির্বাচিত এমপি আবদুর রহমান একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চাইবেন। নিজের মতো করে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তিনি। তবে মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও তিনজন শক্ত প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন— আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও আমিন জুয়েলার্সের কর্ণধার কাজী সিরাজুল ইসলাম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার এবং অনলাইনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ঢাকা টাইমস টুয়েন্টিফোর ডট কমের সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন।

এ ছাড়াও এ আসনে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া, দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার সম্পাদক লায়ন সাখাওয়াত হোসেনও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন আবদুর রহমান, কাজী সিরাজুল ইসলাম ও আরিফুর রহমান দোলন।

এলজিআরডি মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠভাজন হিসেবে এলাকায় আরিফুর রহমান দোলন সম্প্রতি বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারও তরুণদের মধ্যে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এ আসনে বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন যুদ্ধে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক এমপি ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে সদস্য সংগ্রহ অভিযানও চলছে। এ ছাড়াও এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির। জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. কামরুজ্জামান মৃধা ও আকতারুজ্জামান খান মনোনয়নের জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা-কৃষ্টপুর) এ আসনের রাজনীতি এখন বেশ ঘোলাটে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যন্ত নেতা-কর্মীরা। তবে সুস্থ থাকলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে দলের একক প্রার্থী সংসদ উপনেতা এমপি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তিনি নির্বাচন করতে না পারলে এ আসনে তার বড় ছেলে আয়মন আকবর বাবলু চৌধুরীও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মেজর (অব.) আতমা হালিম, নগরকান্দা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরদার ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জামাল হোসেন মিয়া। এক সময়ে জাতীয় পার্টির নেতা এখন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েলও নৌকা প্রতীক পেতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মরহুম কে এম ওবায়দুর রহমানের কন্যা শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দলের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্র থেকে ‘সবুজ সংকেত’ও পেয়েছেন তিনি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিয়মিত এলাকায় থেকে নেতা-কর্মীদের পাশে রয়েছেন তিনি। এলাকায় দলের সব কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন তিনি। তবে এ আসনে ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

ফরিদপুর-৩ (সদর) এ আসনে আগামী নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় একজনেরই নাম আলোচিত। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তিনি ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত। নিয়মিত নেতা-কর্মীদের খোঁজখবরও নিচ্ছেন তিনি।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে সম্ভাব্য একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন পাঁচবারের এমপি, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। তিনিও দলের নেতা-কর্মীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। নিয়মিত এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তার। তবে তাকে ছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মাহাবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু। তিনিও এলাকায় গণসম্পৃক্ত নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েলও মনোনয়নপ্রত্যাশী।  

ফরিদপুর-৪ (সদরপুর-চরভদ্রাসন-ভাঙ্গা) এ আসনটি সব সময়ই আওয়ামী লীগের ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত। বিগত সময়ে জাতীয় নির্বাচনের বেশির ভাগই জিতেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে দলীয় কোন্দল এবং প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গত নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফরউল্যাকে হারতে হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর কাছে। ফরিদপুরের চারটি আসনের মধ্যে গত নির্বাচনে কেবলমাত্র এ আসনেই শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাকিগুলোতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

এ আসনে আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চাইবেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আগামীতেও নির্বাচন করবেন বর্তমান এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই রয়েছেন তার পক্ষে। নিক্সন চৌধুরী সব সময়ই এলাকায় থাকছেন। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহাজাদা মিয়া।

এ ছাড়াও সাবেক এমপি ও মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী ইয়াসমিন আরা হক, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নাননু, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হোসেন সেলিম, চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান এ জি এম বাদল আমিনও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সলও নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে। -বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে