এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও/ রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও, বাড়িতো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি/ একটুখানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি’ এভাবেই আসমানীর দুর্ভোগ দুর্দশা নিয়ে কবিতার মাধ্যমে পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তুলে ধরেছিলেন জীবন ধারা।
কবির সেই আসমানী অনেকটা অযত্ন অবহেলায় বাধ্যক্যজনিত রোগে মারা গেছেন গত দশ বছর আগে। বর্তমানে আসমানীর পরিবারের সদস্যরা তেমন একটা ভালো নেই। এর মধ্যে ভিক্ষা করে সংসার চলে পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের কবিতায় উঠে আসা আসমানীর ছেলে আশরাফুলের।
জীবন-জীবিকার তাগিদে ফরিদপুর শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করে সংসার চালান পঙ্গু আশরাফুল। আশরাফুল ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা।
শহরে ভিক্ষাবৃত্তির সময় হঠাৎ দেখা মেলে আসমানীর ছেলে আশরাফুলের। আশরাফুল বলেন, এক সময় কাজ করে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে ঢাকা থেকে ফরিদপুর ফেরার পথে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাটে মাইক্রোবাস দুর্ঘটনার শিকার হই। এতে ডান হাতটি ভেঙ্গে যায়। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় এখন পুরোপুরি পঙ্গু। ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই পেটের তাগিদে ভিক্ষা করে চলতে হয়।
তিনি বলেন, ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী পঙ্কজ আমাকে একটি পঙ্গু ভাতা করে দিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় সাধ্যমতো সহযোগিতাও করতেন। পরবর্তী চেয়ারম্যান ভাতাটি বন্ধ করে দেন। আমি পঙ্গু মানুষ, কোনো কাজ করতে পারি না। কেউ কাজকর্মেও নেয় না কেউ। তাই পেটের দায়ে ভিক্ষা করে কোনোমতে জীবন চালাচ্ছি।
ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী পঙ্কজ বলেন, আশরাফুল পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের কবিতার আসমানীর সন্তান। চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে আশরাফুলকে একটি পঙ্গু ভাতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করেছি। এখনও সাধ্যমতো তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করি।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লিটন ঢালী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যোগাযোগ করলে নিয়ম অনুযায়ী তার পঙ্গু ভাতাসহ তাকে সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯১৩ সালে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে আসমানীর জন্ম। আরমান মল্লিকের মেয়ে আসমানীর মাত্র ৯ বছর বয়সে বিয়ে হয় পাশের রসুলপুর গ্রামের হাসাম মন্ডলের (রহিমদ্দির) সঙ্গে। তিনি দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের জননী ছিলেন। ৯৯ বছরের বয়সের বার্ধক্যজনিত ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালে তিনি মারা যান। এ সময় তিনি দুই ছেলেসহ চার মেয়ে রেখে যান।