এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউপি চেয়ারম্যানসহ তার ভাই-ভাতিজাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। হামলায় পাশের সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড় খারদিয়া গ্রামের সহস্রাধিক লোকজন অংশ নেয় বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ময়েনদিয়া বাজার সংলগ্ন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মাতুব্বর ও তার ভাইয়ের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, জেলার সালথা উপজেলার বড় খারদিয়া গ্রামের সহস্রাধিক লোক এ হামলায় অংশ নেয়।
হামলাকারীরা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মান্নান মাতুব্বর তার তিন ছেলে হারেজ মাতুব্বর, মজ্নু মাতুব্বর ও মাসুদ মাতুব্বর এবং ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই ইউপি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এরপর হামলাকারীরা সালথা উপজেলার খারদিয়া গ্রামের কালাম মোল্লা, ইব্রাহিম মোল্লা, হাসেম মোল্লা, জালাল মোল্লা ও হবি মোল্লার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা সবাই চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বরের সমর্থক।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পূর্বশত্রুতার জের ধরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বারখাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ মামলার সাক্ষী ছিলেন পরমেশ্বরদী ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর। তার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হয় বলে ধারণা করে আবুল কালামের অনুসারীরা।
এছাড়া বিগত দিনে ময়েনদিয়া বাজারে মান্নান চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের লোকজন একক রাজত্ব কায়েম করে আসছিলেন।
তিনি ইতিপূর্বে একটি হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি ছিলেন। মূলত দীর্ঘদিনের এই সকল পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই খারদিয়া গ্রামের বিক্ষুব্ধ জনতা চেয়ারম্যানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছেন। হামলার সময় মান্নান মাতুব্বর পালিয়ে গেলেও হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মান্নান মাতুব্বরের ছেলে মাসুদ মিয়া ও সিদ্দিক মাতুব্বরের ছেলে শাকিল মিয়া মারাত্মক আহত হয়। তাদেরকে প্রথমে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুর ছেলে জিহাদ মিয়ার নেতৃত্বে এ হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তবে জিহাদ মিয়ার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বরের ভাই মো. সিদ্দিক মাতুব্বর বলেন, পাশের সালথা উপজেলার খারদিয়া গ্রামের লোকজনের সঙ্গে পরমেশ্বরদী, ময়েনদিয়া এলাকার প্রায় দুই হাজার লোকজন এক হয়ে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে দিকে তাদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের তিনটা বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর থেকেই আমাদের বাড়িতে হামলার পরিকল্পনা চলছিল। গত কয়েকদিন ধরে গুঞ্জন শোনার পর রাতেই এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ অবস্থান নেয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবুর রহমান বলেন, বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশরদী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হামলার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ ঘটনায় আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।
ফরিদপুরের নগরকান্দা-সালথা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মান্নান মাতুব্বর আবুল কালাম আজাদের মামলার সাক্ষী ছিলেন বলে জেনেছি। তবে এ হামলার পেছনে ওই ঘটনা কাজ করেছে বলে আমার মনে হয়নি। ময়েনদিয়া বাজার এ এলাকার একটি বড় বাজার। এ বাজারের নিয়ন্ত্রণ এতোদিন ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর ও বড় খারদিয়া গ্রামের ইব্রাহিম মোল্লা ও তার ভাই জালাল মোল্লা নেতৃত্ব দিতেন। এ নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। আজ ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর বেলা ১১টার দিকে বড় খারদিয়া গ্রামের ইব্রাহিম ও জালালের বাড়িতেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সালথা এলাকার ইব্রাহিম ও জালালের বাড়িতে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সালথা ও বোয়ালমারীতে দ্রুত পুলিশের সম্মিলিত অভিযান শুরু করা হবে।