বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:২৩:০০

ফরিদপুরের অম্বিকাপুরে বিভীষিকার এক সন্ধ্যা

ফরিদপুরের অম্বিকাপুরে বিভীষিকার এক সন্ধ্যা

ফরিদপুর: ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের জন্য বুধবারের (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যাটি ছিল বিভীষিকাময়। প্রতিবেশীর বারান্দা থেকে এক কন্যাশিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর হত্যাকারী সন্দেহে তাকে গণপিটুনি দেওয়া হয়, যাতে তার মৃত্যু হয়।  

শিশুটির নাম তাহিয়া ইসলাম। বয়স সাত বছর। মঙ্গলবার থেকে সে নিখোঁজ ছিল। অনেক খোঁজাখুজিঁর পর বুধবার সন্ধ্যার দিকে প্রতিবেশী হায়দার মোল্লার বারান্দা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় তার মরদেহ পায় তাহিয়ার পরিবার। 

তাহিয়ার মরদেহ উদ্ধার ঘিরে দ্রুত পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। শিশুটির স্বজন ও গ্রামবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। উত্তেজিত লোকজন হত্যার ঘটনায় হায়দারের সম্পৃক্তা নিয়ে বেপরোয়া হয়ে পড়ে। মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে পুলিশ আসে। হায়দারকে ধরে পুলিশ। তবে তাতে তার শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশের কাছ থেকে হায়দারকে ছিনিয়ে নেয় উত্তেজিত জনতা। ঘটনাস্থলেই তাকে পেটাতে থাকে তারা। সেখানে তার মৃত্য হয়।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল ফরিদপুরের অম্বিকাপুৃর ইউনিয়নের মানুষ। পাশাপাশি বাড়িতে দুটি মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের বহু মানুষ ভিড় করেন অম্বিকাপুর ইউনিয়নের চরনসিপুর গ্রামে, যেখানে বাড়ি তাহিয়া ইসলাম ও হয়াদার মোল্লাদের।

ফরিদপুর কতোয়ালি থানার ওসি আসাদ উজ্জামান শিশুর লাশ উদ্ধার ও গণপিটুনিতে হায়দার মোল্লার নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা বলেছেন, “আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তাহিয়া চরনসিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে একই গ্রামের জিয়া মোল্লার মেয়ে।

এলাকাবাসী ও পরিবার জানায়, মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে নিখোঁজ হয় তাহিয়া।

অম্বিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল আলম বলেন, “আমার চৌকিদার ফোন দিয়ে শিশুটির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি জানায়। আমি তখনই তাদের (পরিবার ও গ্রামবাসী) আশপাশের পুকুরগুলো খুঁজে দেখতে বলি। পরে আমি কোতোয়ালি থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি এসে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। একপর্যায়ে পুলিশ হায়দার মোল্লাকে সন্দেহ করে। তার ঘর তল্লাশি করে শিশুটির বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।”

তাহিয়ার বাবা জিয়া মোল্লা বলেন, “আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়েটি বড়। অনেক আদরের ছিল সে। যখন সে নিখোঁজ হয়, আমি এবং আমার স্ত্রী আশপাশের সব বাড়িতে ওকে খুঁজেছি। পরে এলাকাবাসীদের জানাই। তাদের সঙ্গেও মেয়েকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছি। মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “ছোট একটা শিশুকে একটা মানুষ মারতে পারে, তা আমি ভাবতেও পারছি না। আমার দুঃখ, জীবনে আমি আমার মেয়েকে আর ফিরে পাব না। আমাকে বাবা বলে ডাকবে না। এ কষ্ট রাখার জায়গা নেই।”

ওসি আসাদ উজ্জামান বলেন, তাহিয়া মঙ্গলবার বিকেলে নিখোঁজ হয়। তার সন্ধানে পুলিশ কাজ শুরু করে। বুধবার বিকেলে সন্দেহ হলে প্রতিবেশী হায়দার মোল্লার ঘর তল্লাশি করে পুলিশ। পরে হায়দার মোল্লার বারান্দা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় শিশুটির মরদেহ পাওয়া যায়। 

এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা পুলিশের কাছ থেকে হায়দার মোল্লাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে