এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ফরিদপুরে গভীর রাতে সৌদি প্রবাসী এক যুবকের স্ত্রীর (২৪) সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় রাসেল মণ্ডল (২৮) নামে এক যুবককে হাতেনাতে আটক করেছে স্থানীয়রা।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে জেলা সদরের কৈজুরী ইউনিয়নের আকইন ভাটপাড়া এলাকায় ওই প্রবাসীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়দের সালিশ মীমাংসার মাধ্যমে ওই গৃহবধূকে রাসেল মণ্ডলের সঙ্গে কাবিননামা করা হয় এবং তিন মাস পর বিয়ের নির্দেশনা দেন মাতুব্বররা।
রাসেল মণ্ডল একই এলাকার সিরাজ মণ্ডলের ছেলে। পেশায় তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক। তার নামে এক বছর আগে একই এলাকার এক কিশোরীকে ধ-র্ষ-ণের ঘটনায় মামলা রয়েছে। বর্তমানে জামিনে বের হয়ে এলেও আদালতে ওই মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সৌদি প্রবাসী ওই যুবক সম্পর্কে রাসেলের চাচা হয় এবং সমবয়সি হওয়ায় তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সম্পর্ক রয়েছে। গত দুই বছর আগে প্রবাসে চলে যায় ওই গৃহবধূর স্বামী। এরপর থেকে বন্ধুত্বের সুবাদে ওই বাড়িতে যাওয়া আসা যাওয়া ছিল রাসেলের। একপর্যায়ে ওই প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে প্রায় রাতেই গৃহবধূর সঙ্গে রাত্রিযাপন করত এবং অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে ওঠেন রাসেল।
প্রবাসী যুবকের বাবা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে গভীর রাতে বাইরে গিয়ে রাসেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখেন তাদের এক স্বজন। পরে বিষয়টি জানলে বিশ্বাস না হলেও প্রতি রাতে সতর্ক থাকতেন। একপর্যায়ে বুধবার রাত ৩টার দিকে ছেলের বউয়ের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পান। তখন এগিয়ে গেলে দরজা লাগিয়ে দেন। এ সময় তারা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয় এবং কিছু সময় পর ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়ার আকুতি জানায়। পরে দরজা খুলে দেয়ার পরে ঘরে প্রবেশ করে সন্দেহ অনুযায়ী টর্চ লাইট দিয়ে খুঁজতে শুরু করে। একপর্যায়ে ঘরের মাচার নিচে ওই যুবককে দেখতে পায়। পরে অন্যদের জানানো হয়।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে বিষয়টি জানালে সে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর দিনভর গ্রামের মাতুব্বররা ও ওই বউয়ের বাবার লোকজন এসে সালিশ করেন। শালিসের একপর্যায়ে আমার ছেলেকে ওই বউ নিজেই ডিভোর্স দেন। এরপর রাসেলের সঙ্গে তাকে কাবিননামা দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়।’
প্রবাসী যুবকের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, ১০ বছর আগে ছেলেকে বিয়ে দেয়া হয়। তারা দুজন দুজনকে খুব ভালবাসতো। তাদের ঘরে ৭ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গত ২ বছর আগে প্রবাসে চলে যান।
গ্রাম্য মাতুব্বর ইউনুস খান বলেন, ‘ঘটনা শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে সবাইকে ডেকে শালিস করা হয়েছে। শালিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজী ডেকে রাসেলের সঙ্গে কাবিন করে দেয়া হয়েছে। পরে শরীয়া মোতাবেক রাসেলের চাচা বাড়িতে আগামী তিন মাস থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং এ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বিয়ে করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাসেল এমন একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে। বিয়ে না করে অন্যের স্ত্রী ও মেয়েদের সঙ্গে একাধিকবার খারাপ সম্পর্কে জড়িয়েছে। তারা রাসেলের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
এছাড়া তার নামে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ধর্ষণ মামলা রয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর বিকালে একই গ্রামের ১৮ বছরের এক কিশোরীর ঘরে প্রবেশ করে এবং বাড়িতে কেউ না থাকায় ধর্ষণ করেন। তখন ওই কিশোরীর চিৎকারে স্থানীয়রা গিয়ে আটক করে। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
এদিকে ঘটনার ন্যায়বিচার না পেয়ে আতঙ্কে রয়েছে ওই কিশোরীর পরিবার। জামিনে বের হয়ে এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে ওই কিশোরীর ভাই জানিয়েছেন।
গৃহবধূর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান জানান, সকালে খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কারও কোনো অভিযোগ না থাকায় পুলিশ চলে এসেছে। কেউ কোনো অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।